এসএফআই বনাম ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জোটের দফায় দফায় গোলমালের জেরে ভেস্তে গেল আলিপুরদুয়ার কলেজের ছাত্র সংসদ গঠন। সোমবার ওই কলেজে ছাত্র সংসদ গঠনের দিন ধার্য হয়েছিল। পুলিশের সামনেই দু’পক্ষের তুমুল হাতাহাতি, ইটবৃষ্টির জেরে সেই প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। ইটের ঘায়ে এক পুলিস কর্মী-সহ বেশ কয়েকজন ছাত্র জখম হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি দু’পক্ষের শ্রেণি প্রতিনিধি-সহ ১১ জনকে আটক করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সিপিএমের অভিযোগ, লাঠিচার্জ করার সময়ে পুলিশ কলেজ পরিচালন সমিতির এক সিপিএম সদস্যকেও মারধর করে। বিকালে এসএফআই সমর্থকেরা রাস্তা অবরোধ করে কলেজে গোলমালের ঘটনার প্রতিবাদ জানান। ৪৭ আসনের ওই কলেজে এসএফআই ২৯টি আসনে জয়ী হয়েছে। মালবাজারের পরিমল মিত্র কলেজেও ছাত্র পরিষদ ৯টি আসনে পুনরায় গণনার দাবি জানিয়েছে। ওই কলেজেও ছাত্র সংসদে জয়ী হয়েছে এসএফআই। আলিপুরদুয়ার কলেজে এদিন যে ক্লাসরুমে ছাত্র সংসদ গঠনের প্রক্রিয়া হওয়ার কথা ছিল সেটি প্রথমেই ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা দখল নেওয়ায় গোলমালের সূত্রপাত হয় বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। আগে থেকে ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শ্রেণি প্রতিনিধিরা ওই ঘরে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। |
ওই ক্লাসরুমের দুটি দরজার একটি তাঁরা বন্ধ করে রাখেন বলেও অভিযোগ। খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পুষ্পক রায়। তিনি কিংবা কলেজের অধ্যক্ষ ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শ্রেণি প্রতিনিধি ওইঘর থেকে বার করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অন্যদিকে, গোলমালের খবর পেয়ে শহরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী সমর্থকেরা সেখানে হাজির হন। দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল বেধে যায়। খবর পেয়ে আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুপ জয়সোয়াল এবং মহকুমা পুলিস আধিকারিক বিশ্বচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনা হয়। মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় জানান, কলেজে উত্তেজনা থাকায় এদিন ছাত্র সংসদ গঠন করা যায়নি। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। আলিপুরদুয়ার কলেজের অধ্যক্ষ সুব্রত পঞ্চানন বলেন, “ছাত্রদের মধ্যে গোলমালের জেরে ছাত্র সংসদ গঠনের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। আমরা নোটিশ করেছি। আগামী দশ দিনের মধ্যে আলিপুরদুয়ার কলজের ছাত্র সংসদ গঠন করা হবে।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুপ জয়সোয়াল জানান, কলেজে গোলমালের জেরে উভয় পক্ষের ১১ জন কে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। এ দিন গোলমালের সময়ে জখম হন এসএফআইয়ের সমর্থক শঙ্খরাজ মজুমদার। তাঁর অভিযোগ, ছাত্র সংসদ দখলের পরেই ছাত্র পরিষদের তরফে তাঁদের ৬-৭ শ্রেণি প্রতিনিধিকে এসএফআই ছেড়ে জোটে সামিল হতে বলা হয়। তাঁরা ওই প্রস্তাবে রাজি না-হওয়াতেই এদিন হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাকে ঘরে ঢুকিয়ে জোট সমর্থকেরা বেধড়ক মারধর করে। পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে। পুলিশকে সমস্ত ঘটনা জানানো হয়েছে।” ছাত্র পরিষদ নেতা শ্যামল মল্লিকের পাল্টা দাবি, “আমাদের জোট ১৮টি আসন পেয়েছে। এসএফআইয়ের ৬-৭ শ্রেণি প্রতিনিধি আমাদের সমথর্ন করবে বলেছিল। এসএফআই তাঁদের ভয় দেখিয়ে আটকে রাখায় গোলমাল হয়। পুলিশ আমাদের সমর্থকদের উপর বেপরোয়া লাঠি চালানোর পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে।” অন্যদিকে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বাবলু কর অভিযোগ করেন, এসএফআই এদিন বুঝে যায় যে ছাত্র সংসদ গঠন করতে পারবে না। তাই তারা গোলমাল পাকায়। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দলের পক্ষ থেকে তাঁরা সমস্ত ঘটনা জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। মালবাজার কলেজ ছাত্র পরিষদের ইউনিট সভাপতি মাধব রায় সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “শনিবার নির্বাচনের সময়ই আমরা পরিচালন কমিটির কাছে লিখিত ভাবে পুনরায় গণনার আর্জি জানাই। আমাদের ধারণা পুনরায় গণনা হলে আমাদের আসন সংখ্যা বাড়বে।” মালবাজার কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তপন মিত্র জানান, মঙ্গলবার ছাত্র পরিষদের লিখিত দাবি নিয়ে কলেজের নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা বৈঠক করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নিয়ম নীতি রয়েছে তা মেনেই পুনরায় গণনার দাবির বিষয়টি দেখা হবে।” |