বহু বার দবি জানানোর পরেও বাগডোগরা-গলগলিয়া বেহাল ৩১ বি জাতীয় সড়ক মেরামত না-হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে। গত বছর বর্ষার পরে পূর্ত দফতর (জাতীয় সড়ক শাখা-৯) গর্ত বুজিয়ে দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ফের বেহাল হয়ে পড়েছে রাস্তা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কিরণচন্দ্র চা বাগান থেকে শুরু করে কেষ্টপুর, হাতিঘিষা, স্কুলডাঙি, সাতভাইয়া, রথখোলা, থেকে শুরু করে গলগলিয়া পর্যন্ত প্রায় প্রতি কিলোমিটার রাস্তায় বড় মাপের গর্ত তৈরি হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ওই রাস্তায় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। গত মাসে পথ দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন সব মিলিয়ে অন্তত ৭ জন। কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। সেই সময়ে বেহাল ওই রাস্তা দিয়ে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বাস মালিকেরাই।
তাঁদের অভিযোগ, রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়ায় প্রতিদিনই যাত্রীবাহী বাস বিকল হয়ে পড়ছে। রাস্তা মেরামতির দাবি জানিয়ে তাঁরা পূর্ত দফতরে এই ব্যাপারে একাধিক বার স্মাপকলিপি দিয়েছেন। তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিলিগুড়ি মিনিবাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক মৃণাল সরকার বলেন, “যাত্রী ভাড়া বাবদ যা আয় হয় তার অর্ধেকই যদি বাস মেরামতির পিছনে চলে যায় তাহলে মালিকেরা বাস চালাবেন কেন? আর দিন সাতেক দেখব। তার পরে প্রয়োজনে ধর্মঘটে নামার পরিকল্পনা নেব।” এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে গণসাক্ষর সংগ্রহে নেমেছে সিপিএমও।সমস্যার কথা স্বীকার করে পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র তপন মণ্ডল বলেন, “গত সাত বছরে ওই রাস্তায় গর্ত বোঝানো ছাড়া বড় কোনও কাজই হয়নি। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ দফতরের কাছে দু’ বছর আগে বরাদ্দ চাওয়া হয়। এখনও তা মঞ্জুর হয়নি। বরাদ্দ না-পেলে কাজ করব কীভাবে?”
বিহার এবং শিলিগুড়ি মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই জাতীয় সড়কটি বাণিজ্যিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক বাণিজ্য হয় এই জাতীয় সড়ক ধরেই। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫-০৬ সালে শেষ বার কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পেয়ে পূর্ত দফতর রাস্তাটি মেরামত করা হয়। তার পরে গর্ত বোজানো ছাড়া কিছুই হয়নি। ২০১০-১১ সালে পূর্ত দফতর জাতীয় সড়কটি আগাগোড়া মেরামতির পরিকল্পনা নেয়। দুটি পরিকল্পনা তৈরি করে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ দফতরে পাঠানো হয়। একটি পরিকল্পনায় গলগলিয়া থেকে পানিট্যাঙ্কি পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ১৯.৮ কোটি এবং পানিট্যাঙ্কি থেকে বাগডোগরা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ২০.২৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহড় দফতর সে বছর বরাদ্দ না-দিয়ে পরের আর্থিক বছরের পরিকল্পনায় পাঠিয়ে দেয়। তার পরে ২০১১-১২ আর্থিক বছর শেষ হতে চললেও বরাদ্দ মেলার কোনও লক্ষ্মণ নেই। ফলে প্রতি বছর গর্ত বোজানোর কাজে রাজ্য সরকারের অর্থ ব্যয় হয়ে চলেছে। কেবল গত বছর গর্ত বোঝানোর কাজে ব্যয় হয় ৯৬ লক্ষ টাকা। মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মেরামতি নিয়ে এমন ঘটনায় বিরক্ত নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারাও।
পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সুনীল ঘোষ বলেন, “কোথায় কী কারণে বরাদ্দ আটকে রয়েছে তার ব্যাখ্যা আমরা চাই না। পূর্ত দফতরকে বলেছি, দ্রুত রাস্তা মেরামতির ব্যবস্থা করতে হবে।” এলাকার সিপিএম নেতা মাধব সরকার বলেন, “প্রতিদিন এই রাস্তায় অন্তত ২০ হাজার লোক যাতায়াত করে। রোজই দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না-হলে লাগাতার আন্দোলনে নামা হবে।” |