একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে উঠছে তিস্তার বুকে। কিন্তু সিকিম পাহাড়ের মতো ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায় নদীতে বাঁধ দিয়ে বিপুল পরিমাণ জলকে আটকে রাখা কতটা নিরাপদ? নদীর ভবিষ্যৎই বা কী? মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনীদের আয়োজিত একটি কর্মশালায় সেই উদ্বেগ উঠে এল। বিশেষজ্ঞদের চিন্তা বাড়িয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের দুটি সমীক্ষার রিপোর্ট। দার্জিলিঙের সেবক থেকে রম্ভি পর্যন্ত তিস্তা নদীর গতিপথ-লাগোয়া পাহাড়ে ধসের পরিমাণ গত পাঁচ বছরে তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে, বলছে সমীক্ষা।
উত্তরপূর্ব ভারতের বিদ্যুৎ সমস্যা মেটাতে আগামী ১০ বছরে তিস্তার জল থেকে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই সিকিম এবং দার্জিলিঙে নয়টি বড় মাপের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হয়েছে। আরও ৩১টি প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে, যার কয়েকটির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।
অথচ দেশের প্রথম চারটি ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকার মধ্যে সিকিম অন্যতম। সেই সিকিম পাহাড়ে নদীতে বাঁধ দেওয়া কতটা যুক্তিপূর্ণ, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক কালে যখনই স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা বেশি বৃষ্টি হয়েছে, তখনই তিস্তার শাখা নদীগুলি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তাঁদের ছাত্রজীবনে তিস্তার চেহারা কেমন ছিল, এখন কেমন হয়েছে, সেই তফাতটাও নজরে পড়েছে প্রাক্তনীদের।
সিকিম, দার্জিলিঙের পাহাড়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থাকায় নদীর জলের বেশির ভাগটাই পাহাড়ের জলাধারে জমা থাকছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের শিক্ষক সুবীর সরকার বলেন, “উত্তরবঙ্গকে একটি বাড়ি হিসেবে কল্পনা করলে, পাহাড় তার ছাদ। ছাদে ক্রমাগত জলে বোঝা বাড়তে থাকলে একদিন যে কোনও একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জলাধার ভেঙে উত্তরবঙ্গও উত্তরাখণ্ডের পরিণতির দিকে যেতে পারে।” তিনি জানান, উৎসের পরে বারবার বাধা পেয়ে তিস্তার জলের পরিমাণ যেমন কমেছে, তেমনিই বেড়ে গিয়েছে জলের তাপমাত্রাও।
ওই কলেজের প্রাক্তনী তথা অধ্যক্ষ জ্যোর্তিময় ঝম্পটি জানান, তাঁরা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভালমন্দ দু-দিক নিয়েই একটি রিপোর্ট তৈরি করতে চান। তাঁর কথায়, “কিছু প্রকল্প সুসংহত পরিকল্পনা করে তৈরি হয়নি। সব ক’টি চালু প্রকল্পকেই নজরদারির আওতায় আনা উচিত।”
কলেজের প্রাক্তনী তথা রাজ্য জল অনুসন্ধান বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অতিরিক্ত অধিকর্তা নীলাদ্রি নাহাও বলেন, “জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সুফল যেমন রয়েছে, তেমন অববাহিকায় প্রভাবও পড়ে। সব দিকই মাথায় রেখে চলতে হবে।” প্রায় চার দশক আগে সিকিমে জলাধার ভেঙে তিস্তার জল কী ভাবে জলপাইগুড়িকে ভাসিয়ে দিয়েছিল, সে কথা উত্তরবঙ্গের মানুষ ভোলেননি। |