আমিনুল-কাণ্ডের তদন্ত সম্পর্কে পুলিশ কমিশনারের রিপোর্ট সন্তুষ্ট করতে পারল না কলকাতা হাইকোর্টকে। বরং বিভ্রান্তি উস্কে দিল।
কড়েয়ার যে দুই নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে আমিনুল ইসলাম কড়েয়া থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন, তাদের এক জনের ডাক্তারি পরীক্ষা কেন করা হল না, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে তার জবাবদিহি চেয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু বৃহস্পতিবার আদালতে সিপি’র যে ব্যাখ্যা জমা দেওয়া হয়েছে, বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। তাই বিচারপতির সিদ্ধান্ত, বিভ্রান্তি দূর করতে তিনি নিজে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলবেন। এ জন্য আগামী ৩০ অগস্ট ওই নাবালিকাকে তাঁর এজলাসে হাজির করাতে কড়েয়া থানার ওসি-কে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর কড়েয়া থানার সামনে গায়ে আগুন দেন পাম অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা মির আমিনুল ইসলাম। এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পরে সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। আত্মাহুতির আগে ‘সুইসাইড নোটে’ আমিনুল জানিয়ে যান, শাহজাদা বক্স নামে স্থানীয় এক ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তি দুই নাবালিকার উপরে যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে এই মর্মে তিনি থানায় নালিশ দায়ের করা ইস্তক শাহজাদার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুলিশ তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থা করছে। সুইসাইড নোটে আমিনুল এ-ও অভিযোগ করেন, ডাকাতির মিথ্যে মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছে!
এবং এ সবের প্রতিবাদেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে সুইসাইড নোটে জানিয়ে গিয়েছিলেন আমিনুল। আত্মহত্যায় ‘পুলিশি-প্ররোচনা’র অভিযোগ এনে পুরো ঘটনার সিবিআই-তদন্ত চেয়ে পরে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু হয়। আগের দিন যার শুনানির সময়ে সরকারি কৌঁসুলি আদালতকে বলেছিলেন, ‘নির্যাতিতা’ একটি মেয়ের মায়ের আপত্তিতেই পুলিশ তার মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে পারেনি। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে সরকারি কৌঁসুলিকে কার্যত ভর্ৎসনা করেন। পাশাপাশি কড়েয়া-তদন্তে এ হেন ‘গাফিলতি’ ঘটল কেন, সে ব্যাপারে খোদ পুলিশ কমিশনারের ব্যাখ্যা তলব করেন।
এ দিন কমিশনারের সেই রিপোর্ট জমা পড়ার কথা ছিল। জমা পড়েওছে। তবে সরকারিপক্ষের কৌঁসুলি আদালতে যা বলেছিলেন, সিপি’র রিপোর্টে তারই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। রিপোর্টের দাবি: মা-বাবাই কড়েয়া থানাকে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, তাঁদের মেয়ের যেন ডাক্তারি পরীক্ষা করানো না হয়।
যদিও পুলিশের এ হেন যুক্তি হাইকোর্ট সরাসরি মেনে নিতে চাইছে না। বরং নিঃসন্দেহ হতে ওই কিশোরীর মুখেই আসল ঘটনা শোনার পক্ষপাতী আদালত। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য: সুপ্রিম কোটের পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে যে, নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। তাই অভিভাবকেরা যদি পুলিশকে এমন চিঠি দিয়ে থাকেন, তা হলে কোন পরিস্থিতিতে তা দেওয়া হয়েছিল, সেটা জানতে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা জরুরি বলে মনে করছেন বিচারপতি।
আমিনুলের পরিবারের পক্ষের কৌঁসুলি নৌশাদ হোসেন বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ রয়েছে। অভিযোগের জেরে কড়েয়া থানার তিন পুলিশ অফিসার সাসপেন্ড হয়েছেন। এ সবের প্রেক্ষাপটেই আদালত কিশোরীটির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে বলে তাঁর দাবি। “বিচারপতি মনে করছেন, ওর সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যাবে, এ ব্যাপারে পুলিশের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না।” মন্তব্য নৌশাদের। |