মন্দিরে চুরি করতে এসে বৃদ্ধ পুরোহিতকে ভোজালি দিয়ে কোপালো দুষ্কৃতীরা। শুধু পুরোহিতকে কোপানোই নয়, মন্দিরের লকারের চাবি দিতে না পারায় তাঁর স্ত্রীকেও দড়ি দিয়ে বেঁধে দুষ্কৃতীরা মারধর করে বলে অভিযোগ। এর পরে মন্দিরের কালীমূর্তির সোনার অলঙ্কার দিয়ে চম্পট দেয় তারা। প্রণব মুখোপাধ্যায় (৭৫) নামে ওই বৃদ্ধকে গুরুতর জখম অবস্থায় দমদম মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটে দমদমের ইটলগাছার মানিকপুর অঞ্চলের একটি মন্দিরে। মানিকপুর এলাকায় ওই মন্দিরটি শিবকালী মন্দির নামে পরিচিত। প্রণববাবু ও তাঁর স্ত্রী জ্যোতির্ময়ীদেবী থাকেন ওই মন্দিরের পাশেই একটি ক্লাবের নীচের ঘরে। বছর সত্তরের বৃদ্ধা জ্যোতির্ময়ীদেবী জানান, তাঁর স্বামী রাত তিনটে নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুমে যান। বাথরুম থেকে ঘরে ফেরার সময়ে তিনি যখন দরজা বন্ধ করছিলেন, তখন চার জন দুষ্কৃতী তাঁদের ঘরে ঢুকে পড়ে। জ্যোতির্ময়ীদেবী বলনে, “ওই চার যুবকের প্যান্টে ভোজালি গোঁজা ছিল। আমার স্বামীর গলায় ভোজালি রেখে বলে মন্দিরের চাবি দিয়ে দে, না হলে গলা কেটে ফেলব।” জ্যোতির্ময়ীদেবী জানান, মন্দিরের চাবি দুষ্কৃতীদের দিয়ে দেওয়ার পরে তারা ঘরে রাখা মন্দিরের লকারের চাবি চায়। কিন্তু লকারের চাবি নেই জানাতে তাঁর স্বামীকে জনলায় দড়ি দিয়ে বেধে বেধড়ক মারতে থাকে। ভোজালি দিয়ে মাথায় এলোপাথাড়ি কোপ মারায় মাথা থেকে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে। |
জ্যোতির্ময়ীদেবী বলেন, “ঘরের ভিতরে তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তবে শুধু আমার স্বামীকে ভোজালি দিয়ে মেরেই ওরা ক্ষান্ত হয়নি, আমাকেও দড়ি দিয়ে বেঁধে হাত মচকে দেয়। ওরা পা দিয়ে আমার পেটে লাথি মারতে থাকে। কিন্তু আমাদের কাছে লকারের চাবি ছিল না, কোথা থেকে চাবি দেব?”
জ্যোতির্ময়ীদেবী জানান, ওরা যখন বুঝতে পারে আমাদের কাছে লকারের চাবি নেই, তখন ওরা মন্দিরের চাবি নিয়ে মন্দির খুলে মূর্তির গয়নাগাঁটি নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে জ্যোতির্ময়ীদেবীর হাতের চুড়ি ও কানের দুলও নিয়ে যায় ডাকাতেরা। ভোরবেলা জ্যোতির্ময়ীদেবীর চিৎকারের শুনে কয়েক জন প্রাতর্ভ্রমণকারী জ্যোতির্ময়ীদেবী ও তাঁর স্বামীকে উদ্ধার করে। প্রণববাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রণববাবুর অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।
এ দিকে, এই ঘটনায় ওই এলাকায় সকাল থেকেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে আসে দমদম থানার পুলিশ। এলাকার মানুষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ তোলেন। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (ডিডি) দেবাশিস বেজ বলেন, “দমদমের সব গলিতে সব সময়ে নজরদারি করা খুবই কঠিন। তবে এলাকায় সারারাত ধরেই পুলিশের জিপের টহলদারি চলে। ওই মন্দিরের কালী প্রতিমার কয়েক ভরি সোনা চুরি গিয়েছে। আমরা কিছু সূত্র পেয়েছি। তদন্ত চলছে।” |