নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
নিম্নমানের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় গভীর রাতে চুপিসারে সেগুলি বদলে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা এম এস কোম্পানিজের কর্ণধার সুব্রত দত্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৪ দিন নিজেদের হেফাজতে রেখে জেরা করে। এর পরেই বুধবার শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের একটি বাড়ি থেকে খুলে ফেলা সিসি ক্যামেরাগুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, বিভিন্ন কার্টুনের মধ্যে রাখা মোট ৪৯টি ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলি ‘বক্স’ ক্যামেরা। অথচ লাগানোর কথা ছিল পিটিজেড ক্যামেরা। নিম্নমানের ক্যামেরার অভিযোগ নিয়ে তদন্তের মাঝপথে গভীর রাতে বক্স ক্যামেরাগুলি বদলে ঠিকাদার সংস্থা সম্প্রতি পিটিজেড ক্যামেরা বসিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। টিনের একচালা যে বাড়ি থেকে সেগুলি উদ্ধার করা হয়েছে সেটি কার তা নিয়ে পুলিশে কাছে নানা অভিযোগ পৌঁছেছে। অভিযোগ, বাড়ির মালিকানা একাধিক ব্যক্তির নামে রয়েছে। যাঁর মধ্যে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের এক নেতাও রয়েছেন। পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত হতে খোঁজখবর শুরু করেছে।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশকে অভিযুক্ত ঠিকাদার জানিয়েছিল ওই ক্যামেরাগুলি ডাবগ্রামে একটি গুদামে তিনি রেখেছেন। বাড়িটিকে সুব্রতবাবু তাঁর কাজের সামগ্রী রাখার গুদাম হিসাবে ব্যবহার করতেন। পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “ধৃত সুব্রত দত্তকে জেরা করে ওই ক্যামেরাগুলির হদিস মেলে। তাঁকে নিয়ে গিয়ে ক্যামেরাগুলি উদ্ধার হয়।”
বুধবার ৪ দিনের পুলিশি হেফাজত শেষ হওয়ায় সুব্রতবাবুকে আদালতে তোলা হয়। এ দিন তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পের কাজে আর্থিক অসঙ্গতির কিছু বিষয় রয়েছে। সুব্রতবাবু সে সব তথ্য জানাতে চান। সে সব কারণে পুলিশ এ দিন ফের ৪ দিনের হেফাজতে নিতে আদালতে আবেদন করে। তবে আদালত ৩ দিন অনুমোদন করেছে। সরকারি আইনজীবী সুদীপ রায় বাসুনিয়া বলেন, “আদালত সুব্রতবাবুকে ফের ৩ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।” পুলিশ এবং এসজেডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে নিরাপত্তার স্বার্থে ৯ কোটি খরচ করে ৫৪টি ক্লোজড সার্কিট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গত বছর পুজোর আগে সেগুলি চালুও করা হয়। এর পরেই নিম্নমানের ক্যামেরা এবং ঠিকাদার সংস্থাকে বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল তদন্ত শুরু করে। তারা প্রাথমিক ভাবে নিম্ন মানের ক্যামেরা বসানোর বিষয়টি জানিয়ে দেন। পুলিশের তরফে সম্প্রতি ওই ক্যামেরাগুলি কোথায় কী রয়েছে তা বুঝিয়ে হস্তান্তর করতে বলা হয় এসজেডিএ’কে। কোথায় কী ক্যামেরা রয়েছে ঠিকাদার সংস্থাকে তা যথাযথ ভাবে বুঝিয়ে দিতে বলে এসজেডিএ। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তদন্তের মাঝপথে গভীর রাতে ক্যামেরাগুলি বদলে ফেলা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এসজেডিএ বা পুলিশ সময় মতো ব্যবস্থা নিতে না পারায় সমস্ত ক্যামেরাগুলিই বদলে ফেলা হয় বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে প্রথম দফায় ৫টি মাত্র পিটিজেড ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। বাকি যে ক্যামেরা বসানো হয়েছিল সেগুলি ছিল নিম্নমানের উদ্ধার হওয়া বক্স ক্যামেরাগুলি।
ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা-সহ আরও ৪টি প্রকল্পের কাজে মোট ৬০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই এসজেডিএ’র বোর্ড সদস্যদের মধ্যে অপসারিত চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি চন্দন ভৌমিক এবং শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মাকে জেরা করেছে পুলিশ। দুই দফায় জেরা করা হয়েছে এসজেডিএ’র প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমারকে। ফের তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বুধবারই ডেকেছিল পুলিশ। পুলিশ জানায়, বর্তমানে মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার এই দিন আসতে পারবেন না বলে পুলিশকে জানান। গত মঙ্গলবারই এসজেডিএ’র অপর সদস্য তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধায়ক শঙ্কর মালাকরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল। তবে তিনি সে দিন যাননি। শীঘ্রই পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানিয়েছে। পুলিশ এই দিন জানিয়ে দিয়েছে, অন্য সদস্যদেরও একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। |