এসজেডিএ দুর্নীতি মামলা
সিসিসি বসানোয় দুর্নীতির অভিযোগ, ধৃত ঠিকাদার
ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা কান্ডে অভিযুক্ত এম এস অ্যান্ড কোম্পানিজের কর্ণধার সুব্রত দত্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার শিলিগুড়ি আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মধুমিতা বসুর কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে গ্রেফতার করে আদালতের লক আপে রাখা হয়। পরে বিচারক তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে পুলিশের তরফে এ দিন তাঁকে নিজেদের হেফাজতে রাখার কোনও আবেদন জানানো হয়নি। উল্লেখ্য, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কাজ ছাড়াও ওই ঠিকাদার সংস্থা শহরের একাংশে ত্রিফলা বাতি বসানোর কাজও করেছে। টেন্ডার না ডেকে ওই কাজের বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া এবং একই কাজ বিভিন্ন দরে করায় আর্থিক দুর্নীর্তির অভিযোগও রয়েছে এসজেডিএ-এর অন্দরে।
অভিযুক্ত ঠিকাদার সুব্রত দত্তকে আদালতে তোলা হচ্ছে। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও আলোড়ন পড়েছে। কারণ, সুব্রতবাবু একসময়ে সোমেন মিত্রের প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি ছিলেন। পরে ওই দল তৃণমূলে মিশে যায়। ইদানীং সক্রিয় রাজনীতি না করলেও শিলিগুড়ির রাজনৈতিক বৃত্তে কংগ্রেস ও তৃণমূলের একাধিক নেতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে সুব্রতবাবু পরিচিত। বিশেষত, শিলিগুড়িতে ত্রিফলা আলো বসানোর বরাত পাওয়ার পরে সুব্রতবাবু কিছুদিনের জন্য ঠিকাদার মহলের আলোচনার শিরোনামে চলে যান। প্রথমে ত্রিফলা আলো পিছু যে টাকার বরাত পেয়েছিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। দ্বিতীয় দফায় অনেক কম টাকায় শিলিগুড়িতে ফের ত্রিফলা আলো বসানোর কাজ করে সুব্রতবাবুর সংস্থা। তখন তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে।
সুব্রতবাবু অবশ্য গ্রেফতার হয়েছেন ক্লোজড সার্কিট টিভি ক্যামেরা বসানোর সংক্রান্ত অভিযোগের জেরে। গত ২৭ জুলাই প্রধাননগর থানায় শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়। তাতে কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তা স্পষ্ট না থাকায় পুলিশের তরফে এসজেডিএ’কে জানাতে বলা হয়। দ্বিতীয় দফায় ফের অভিযোগ করা হয়। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেছেন, “ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর অভিযোগ পেয়ে নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেগুলি দেখার পরেই অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হবে।”
গত বছর পুজোর আগেই শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাগুলি লাগানো হয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে চালুও করা হয়। এর পরেই কাজের মান এবং বরাত পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগে ওঠে। যে পিটিজেড ক্যামেরা বসানোর কথা ছিল তা না বসিয়ে নিম্নমানের ‘বক্স’ ক্যামেরা বসানো হয় বলে অভিযোগ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ওই কাজের তদন্ত হচ্ছে। এসজেডিএ নিজেরাও তদন্ত করবেন বলে জানান। সম্প্রতি পুলিশের তরফে শহরের কোথায় কী ক্যামেরা বসানো হয়েছে তা বুঝিয়ে হস্তান্তর করতে বলা হয়। এসজেডিএ’র তরফে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকে তারা কী কাজ করেছে তা যথাযথ ভাবে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। এর পরেই গভীর রাতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসানো নিম্নমানের ক্যামেরাগুলি বদলে দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। কয়েক সপ্তাহ ধরে কাজ চললেও এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সময় মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অধিকাংশ ক্যামেরা বদলে দেওয়া হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এসজেডিএ’র উদ্যোগে দুটি পর্যায়ে শহরে ৫৪ টি ক্যামেরা বসানোর বরাত পায় সংস্থা। গোটা পাঁচেক পিটিজেড ক্যামেরা লাগালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিম্নমানের বক্স ক্যামেরা বসানো হয় বলে অভিযোগ। কয়েকটি ক্ষেত্রে ক্যামেরা বসানোও ছিল না। অথচ এসজেডিএ’র নথিই বলছে, প্রথম পর্যায়ে ১২ সেপ্টেম্বর ৩ কোটি ৪৩ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৫০ টাকার কাজ পায় ওই সংস্থা। এই দফায় ১৯টি ক্যামেরা বসানোর কথা ছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৭ সেপ্টেম্বর তাদের ৫ কোটি ৪৯ লক্ষ ৭৮ হাজার ৭০০ টাকায় বাকি ক্যামেরা বসানোর বরাত পায় সংস্থাটি। কাজ করার আগেই প্রথম পর্যায়ের টাকা ২৮ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা ১১ অক্টোবর দিয়ে দেওয়া হয়। দফতরের একাংশ বাস্তুকার এবং আধিকারিকদের সঙ্গে ঠিকাদার সংস্থার যোগসাজশেই তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সরকারি আইনজীবী সুদীপ রায় বাসুনিয়া বলেন, “এ দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে সুব্রতবাবুর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।”
সুব্রতবাবুর আইনজীবী সমীর ঘোষ জানিয়েছেন, গত ৩ জুলাই এসজেডিএ চিঠি পাঠিয়ে ১ মাসের মধ্যে যে নির্দিষ্ট নমুনার ক্যামেরা লাগাতে বলা হয়েছিল তা ঠিক মতো বুঝিয়ে দিতে বলে। তিনি বলেন, “চুক্তি এবং চিঠি মেনেই ক্যামেরাগুলি সুব্রতবাবু বদলে দিয়েছেন। এতে তিনি কোনও অপরাধ করেননি। অথচ এসজেডিএ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।”
অন্য দিকে, ৫দিন পুলিশি হেফাজতের পর বুধবার আদালতে তোলা হয় নিউ ইন্ডিয়া সংস্থার কর্ণধার অজয় মৈত্র এবং তাপস বসুকে। জেরা করে তাঁদের থেকে পেনড্রাইভ এবং কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে এসটিপি-১ এবং এসটিপি-২-এর কাজে দরপত্র দেয় ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরো, নিউ ইন্ডিয়া কনস্ট্রাকাশন লিমিটেড এবং দাস এন্টারপ্রাইজ। পুলিশ জানতে পেরেছে, দাস এন্টারপ্রাইজের তরফে কোন দরপত্র জমা হয়নি। তাদের সিল ও সই নকল করে দরপত্র জমা করে অভিযুক্তরা। এ ভাবে ইউরেকা ট্রেডার্সকে কাজ পেতে সাহায্য করে তারা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.