নিজস্ব সংবাদদাতা • ফালাকাটা |
নিকিতার খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মিছিলে পা মেলাল ফালাকাটা। বুধবার সকালে সাড়ে ১১টা নাগাদ শ’দুয়েক বাসিন্দাদের নিয়ে শুরু হওয়া মিছিল আধঘণ্টার মধ্যেই মহামিছিলের আকার নেয়। নিকিতার স্কুলের শিক্ষিকা থেকে ফালাকাটার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক, কলেজের অধ্যক্ষ, এলাকার ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী সহ ছাত্র-ছাত্রী সহ গৃহবধূরাও মিছিলে সামিল হন। মিছিল থেকে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি তোলা হয়।
গত রবিবার সুভাষ কলোনির বাসিন্দা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নিকিতাকে দুষ্কৃতীরা দিনেদুপুরে গুলি করে খুন করে। ফালাকাটায় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে নিরাপত্তার দাবিও জানানো হয়েছে। এদিন সকালে সুভাষপল্লি থেকে মিছিল শুরু হয়ে সুভাষ কলোনি, মেনরোড, বাবুপাড়া হয়ে ফালাকাটা বিডিও অফিসে পৌঁছোয়। |
বন্ধে সুনসান শহর।—নিজস্ব চিত্র। |
মিছিল যত এগিয়েছে ততই মিছিলে ভিড় বেড়েছে। ফালাকাটার বিডিও কৃষ্ণকান্ত ঘোষের কাছে দাবি জানিয়ে পরে ফালাকাটা থানায় মিছিল পৌঁছোয়। থানাতে বিক্ষোও দেখিয়েছে ক্ষুদ্ধ বাসিন্দারা। ফালাকাটা থানাতেই রয়েছে পুলিশ হেফাজতে থাকা খুনের অভিযুক্তরা। সে কারণে থানায় বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরেই থানার গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ কর্মীরা। অভিযুক্তদের জনতার হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে অশান্ত হয়ে ওঠে থানা চত্বরকের জমায়েত। আলিপুরদুয়ারের এসডিপিও বিশ্বচাঁদ ঠাকুরের হাতে স্মারকলিপি জমা দেন বাসিন্দারা। এসডিপিও বলেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর পুলিশ নজর রাখছে।” |
শাস্তি চেয়ে পথে। বুধবার ফালাকাটায় ছবি তুলেছেন রাজকুমার মোদক। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত অভিযুক্তদের জেলা করে এলাকার কোথাও অস্ত্র রয়েছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এদিনের শহর জুড়ে মিছিলের পরে নিকিতার বাবা কানু দত্ত বলেন, “আমার এখন বড় ভরসা মানুষ। ফালাকাটার সর্বস্তরের মানুষ যে আমার পাশে থেকে যে ভাবে ভরসা যোগাচ্ছে, তাতে আমি অনেকটাই বল পাচ্ছি। যতক্ষণ না খুনিরা শাস্তি না পায় ততদিন আমি শান্তি পাব না। আমার মত আর যাতে কোন বাবার কোল না খালি হয় তা প্রশাসনকে দেখতে হবে।”
মিছিলে যোগ দেওয়া এলাকার ব্যবসায়ী শওকত আলি খান বলেন, “আজ একজন কিশোরী খুন হল, কাল অন্য কেউ খুন হতে পারে। এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোথায় তা বুঝতে পারছি না।” শহরের এক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মালিক শৈবাল গোস্বামী বললেন, “আমারও মেয়ের নিকিতার অবস্থা হতে পারত। ফালাকাটায় এই বন্ধুকের সংস্কৃতি দেখিনি। আগে এই ধরণের ঘটনা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। তাই মিছিলে হেঁটেছি।” গৃহবধূ তনুশ্রী দে বলেন, “দিনের বেলায় গুলি করে একটা ফুটফুটে মেয়েকে যাঁরা মেরে ফেলল তাদের মৃত্যুদণ্ড চাই।”
নিকিতার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শিপ্রা দেব এবং ফালাকাটা কলেজের অধ্যক্ষ হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য দুজনেই বলেন, “অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে। আরও অস্ত্র কোথায় আছে তা খুঁজে বের করতে হবে। পুলিশকে এলাকার সাধারণ মানুষ ও মহিলারা যাতে দিনে রাতে শহরে নির্ভয়ে ঘুরতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে।” |