দু’দিনের পাল্টা বন্ধ শিলিগুড়িতেও, উদ্বেগ
ফের বন্ধ-পাল্টা বন্ধ-এর রাজনীতি শুরু হয়ে গেল পাহাড় ও সমতলে। দার্জিলিং পাহাড়ে আন্দোলনের রেশ পড়ল সমতলেও। গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিরোধিতা করে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ৪৮ ঘন্টার শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় বন্ধ ডেকেছে শিবসেনা এবং বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটি। এর জেরে আগামী দুই দিন শহরের জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুটি সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলা ভাগের দাবির প্রতিবাদেই এই বন্ধ ডাকতে হয়েছে। বন্ধে যানবাহন, দোকানপাট এবং বাজারঘাট খোলা থাকবে না। বন্ধের সমর্থনে পিকেটিং করার কথাও আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।
বন্ধ-পাল্টা বন্ধ-এর রাজনীতিতে বিরক্ত পাহাড় ও সমতলের সাধারণ মানুষের অনেকেই। দার্জিলিঙের চকবাজারের ব্যবসায়ী বিশাল তামাং কিংবা শিলিগুড়ির শহরের ব্যবসায়ী তরুণ মিত্রের মতো অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের কথায়, “অতীতে লাগাতার বন্ধ করে সুবাস ঘিসিং গোর্খাল্যান্ড আদায় করতে পারেননি। সে সময়ে সিলিগুড়িতে পাল্টা বন্ধ করে লাভের লাভ হয়নি। বরং সব দিক থেকে লোকসান হয়েছে। কবে বনধের রাজনীতি বন্ধ হবে সেটাই বুঝতে পারছি না।” পাহাড় ও সমতলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির তরফে অনেক কর্ণধারই স্কুল-কলেজকে বন্ধ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু, পাহাড়ে মোর্চা ও সমতলে তাদের বিরোধীরা পরস্পরকে দূষেছেন।
মোর্চার ডাকা বন্ধে সুনসান সুকনা। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমরা যে কোনও ধরনের বন্ধের বিরুদ্ধে। রাস্তায় নেমে বন্ধ প্রত্যাহার করার আবেদন জানাব। এ ভাবে বন্ধ এবং পাল্টা বন্ধ ডেকে সমস্যার কোনও সমাধান হয় না। প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে আশা করি। আমরা চাই পাহাড় ও সমতলে ঐক্যের বাতাবরণ, শান্তি বজায় থাকুক।”
তবে বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটি কিন্তু জানিয়ে দিয়েছে, পাহাড়ে আন্দোলন প্রত্যাহার না হলে তারা বন্ধ তুলবেন না। ওই সংগঠনের সভাপতি মুকুন্দ মজুমদার বলেন, “কোনভাবেই বাংলা ভাগের বিষয়টি মেনে নেওয়া যাবে না। এর প্রতিবাদেই বন্ধ ডাকা হয়েছে।” পাশাপাশি, আগামী ১৯ অগস্টও গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিরোধিতায় শিলিগুড়িতে বনধের হুমকি দিয়েছে ওই সংগঠন।
আজ, বৃহস্পতিবার গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিরোধিতায় দার্জিলিং মোড় এলাকায় অবরোধ করা হবে বলে জানান রাষ্ট্রীয় শিবসেনার নেতা ব্রজগোপাল হালদার। তিনি বলেন, “নিজেদের সুবিধার জন্য সমতলের মানুষকে বোকা বানানোর চক্রান্ত করছে মোর্চা। তা আমরা হতে দেব না।” বন্ধের সমর্থন না করলে জিটিএ-র বিরোধিতায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল মিটিং করার কথা জানিয়েছেন আমরা বাঙালি’র সভাপতি খুশিরঞ্জন মন্ডল।
এই ধরণের বন্ধে জটিলতা এবং অস্থিরতা আরও বাড়ে বলে মনে করেন দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আমরা আলাদা রাজ্যের বিপক্ষে। আমরা পাহাড়ে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে। এই দাবিতে বন্ধ ডেকে মানুষের অসুবিধা করে জনজীবন বিপর্যস্ত করার কোনও মানে হয় না। তার উপরে সমতলে যে বন্ধ হচ্ছে তাতে সমস্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।” তিনি জানান, বিষয়টি শাসক দলের তৃণমূলের নেতাদের এখন দেখা দরকার। ওঁরা কী করছেন তা আমরা দেখব।
একই সুরে কথা বলেছেন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি (সমতল) তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। তিনি বলেন, “এই ধরণের বন্ধ ডাকাকে আমরা সমর্থন করি না। কোনও অশান্তি যাতে না হয়, সেটা পুলিশ-প্রশাসনকে দেখতে হবে।” বিজেপি’র জেলা সভাপতি নৃপেন দাস বলেন, “আমাদের এই ব্যাপারে দলীয় কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এতে পাহাড় ও সমতলের মধ্যে সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা তো থেকেই যায়। কোনও গোলমাল যাতে না হয় তা পুলিশ-প্রশাসনকে দেখতে হবে।”
অন্যদিকে, পৃথক রাজ্যের দাবিতে ডুয়ার্সে বন্ধ ডাকা হলে আগুন জ্বলবে বলে হুমকি দিয়েছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ডুয়ার্স কমিটির সভাপতি পরিমল লগুন। ৪ অগস্ট পরিষদের বৈঠকও ডাকা হয়েছে। অন্যদিকে, আদিবাসী নেতা জন বার্লা সরকারি গোর্খাল্যান্ডের কথা না বললেও ছোট রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করেছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.