মঙ্গলবার বিকেলে আলাদা রাজ্য তেলেঙ্গানা গঠনে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সম্মতি মিলতেই গোর্খাল্যান্ড চেয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের উপরে চাপ বাড়াল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। জিটিএ-এর চিফ এগজিকিউটিভ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন মোর্চা-নেতা বিমল গুরুঙ্গ।
ফ্যাক্স করে রাজ্যপালের দফতরে ওই চিঠি পাঠানো ছাড়াও শনিবার থেকে দার্জিলিং পাহাড়ে অনির্দিষ্ট কাল বন্ধের ডাকও দিয়েছেন মোর্চা সভাপতি। ফলে, ফের পাহাড়ের জনজীবন স্তব্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হল। গুরুঙ্গ জানিয়েছেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার সরকারি অফিসে ধর্মঘট চললেও যানবাহনকে ছাড় দেওয়া হবে, যাতে পর্যটক ও পড়ুয়ারা অন্যত্র চলে যেতে পারেন।
এ দিন সন্ধ্যায় দার্জিলিঙের সিংমারিতে দলের সদর দফতরে মোর্চা সভাপতি বলেন, “তেলেঙ্গানা রাজ্য হলে কেন গোর্খাল্যান্ড হবে না? গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিষয়টি মাথায় রেখেই তো কেন্দ্র ও রাজ্য জিটিএ চুক্তিতে সই করেছে। আমরা সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে জিটিএ মেনে নিতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু, পৃথক তেলেঙ্গনার দাবি মেনে নেওয়ার পরে পরিস্থিতি পাল্টেছে। তাই আমি জিটিএ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।”
গুরুঙ্গ ইস্তফা দিলেও জিটিএ-র সব সদস্য রাতারাতি পদত্যাগপত্র দিতে রাজি হননি বলে মোর্চা সূত্রের খবর। কারণ, জিটিএ থেকে একতরফা ভাবে ইস্তফা দিলে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়ের বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কা করছেন মোর্চার একাংশ। যদিও গুরুঙ্গ জানান, বুধবার সকালে জিটিএ-র সব দলীয় সদস্যকে বৈঠকে ডেকে তাঁদের ইস্তফা দিতে বলা হবে। |
এ দিকে, পাহাড়ে জবরদস্তি বন্ধের চেষ্টা হলে তা রুখতে রাজ্য সরকারও অনড়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পাহাড়ের সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলার কোনও চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। বর্ষার মরসুমে যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য ব্যবসায়ী, বাসিন্দা ও পাহাড়ের বিশিষ্ট জনদের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বার্তাও গিয়েছে। কারণ, ভরা বর্ষায় ধসপ্রবণ পাহাড়ে যে কোনও সময়ে দুর্যোগ নেমে আসতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা চাই না পাহাড় অশান্ত হোক। পাহাড়ে শান্তি বজায় রেখে উন্নয়ন করতে হবে।” সরকারি সূত্রের খবর, তেলেঙ্গানা গঠনের পরে দার্জিলিং অশান্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে রাজ্য।
ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পাহাড়ে রয়েছেন রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। পুলিশ সূত্রের খবর, তিন মহকুমায় টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। বুধবার পাহাড়ে বাড়তি সশস্ত্র পুলিশ, র্যাফ ও ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা পৌঁছবেন।
এই মুহূর্তে পাহাড়ে তিন দিনের বন্ধ চলছে। মঙ্গলবার ওই বন্ধের দ্বিতীয় দিন। সরকারি অফিস খোলা থাকলেও হাজিরা ছিল সামান্য। পুলিশ পাহারায় দার্জিলিং ও সিকিমে যান চলাচল করেছে। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে এ দিন সকালে কালিম্পঙের ডম্বর চকে মোর্চার সমর্থক মঙ্গল সিংহ রাজপুত (৪৫) গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। এখন তিনি শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন।
তবে মোর্চার অন্দরের খবর, জিটিএ-র কিছু সদস্যের কাজকর্ম নিয়ে দলের অন্দরে-বাইরে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। খোদ বিমল গুরুঙ্গের জনপ্রিয়তাও যে কমছে তা জিএনএলএফ-এর সভায় ভিড় বেড়ে যাওয়া থেকে মালুম হচ্ছে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার কথায়, “জিটিএ হলেও, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন করাটা আমাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। না হলে গোর্খাল্যান্ডের স্লোগান তুলে জিএনএলএফ কিংবা অন্য দল পাহাড়ে কর্তৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করতে পারে।”
কিন্তু, পাহাড়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হলে দৈনন্দিন রসদ মিলবে কী ভাবে?
জবাবে গুরুঙ্গ বলেন, “বুধবার ৭২ ঘণ্টার বন্ধ শেষ হচ্ছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিন শুধু সরকারি অফিসে ধর্মঘট হবে। ওই দু’দিন বাকি সব কিছু ছাড়। আশা করব, দু’দিনে সকলে রসদ সংগ্রহ করে নেবেন। পাহাড়ে থাকা পর্যটক ও ছাত্রছাত্রীরাও চলে যেতে পারবেন।”
দার্জিলিং পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে টানা বন্ধ অবশ্য নতুন কিছু নয়। অতীতে সুবাস ঘিসিং একটানা ৫২ দিন বন্ধ ডেকেছিলেন। সে যাত্রায় সিআরপি মোতায়েন করায় পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এই মুহূর্তে পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। কিন্তু, বন্ধ রুখতে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীরা সাহায্য চাইলে পুলিশ-প্রশাসন তাঁদের নিরাপত্তা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। ফলে, পাহাড়বাসীদের মধ্যে নানা আশঙ্কা-উদ্বেগ ক্রমশ দানা বাঁধছে। বর্ষার পরেই পুজোর মরসুম। পর্যটকদের টানতে বেশ কিছু হোটেল-রিসর্ট ইতিমধ্যেই বড় লগ্নি করে বসেছে। তাঁদেরও মাথায় হাত।
|