দশ দিনে বঙ্গোপসাগরে চার চারটি নিম্নচাপ!
বর্ষার মরসুমে এমন অবস্থা শেষ কবে হয়েছে তা নিয়েই এখন নথি ঘাঁটাঘাঁটি শুরু হয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতরে। পর পর চারটি নিম্নচাপের ফলে অবশেষে বৃষ্টির ঘাটতি মিটতে চলেছে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ, উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে। এর ফলে খরিফ চাষ ভাল হবে বলে মনে করছেকৃষি দফতর।
গত সপ্তাহে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে গায়ে গায়ে দুটি নিম্নচাপের কারণে ঢেলে বৃষ্টি হয়েছে উপকূলবর্তী তিন জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায়। মোটামুটি বৃষ্টি হয়েছে বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া, ও হাওড়ায়। বাকি ছিল মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ ও দুই দিনাজপুর। সোমবার বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপেও কপাল খোলেনি ওই জেলাগুলির। বুধবার কিন্তু খুলল। এ দিন বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপে ভাল বৃষ্টি পেতে চলেছে ওই পাঁচ জেলা।
সোমবার বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপটি হয়েছিল তা মঙ্গলবারেই ওড়িশার স্থলভূমিতে ঢুকে চলে যায় ছত্তীসগঢ়ে। ফলে ভাল বৃষ্টি পেয়েছিল উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স। সেটি মঙ্গলবার রাতেই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। বঙ্গোপসাগরে আরও একটি নিম্নচাপ যে তৈরি হতে চলেছে তার ইঙ্গিত মিলেছিল গত রাতেই। রাত দশটা থেকে অল্পবিস্তর, তার পরে রাতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ প্রবল বৃষ্টি নামে। |
মহাকরণের সামনে। —নিজস্ব চিত্র। |
বুধবার সকালে উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরে ফের তৈরি হয়েছে একটি নিম্নচাপ, যা এ দিন সকালেই ঢুকে পড়ে দক্ষিণবঙ্গে। সন্ধ্যার উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, দক্ষিণবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় অবস্থান করছে নিম্নচাপটি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “নিম্নচাপটির অবস্থানে গোটা দক্ষিণবঙ্গেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অতিসক্রিয় হয়েছে। তার ফলে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এবং উত্তরবঙ্গের লাগোয়া তিন জেলায় ভাল বৃষ্টি হবে।” ওই পাঁচ জেলায় ভাল বৃষ্টি না হওয়ায় সেগুলিতে বিকল্প চাষের কথা ভাবতে শুরু করে কৃষি দফতর। ঠিক হয় ময়ূরাক্ষী জলাধারের জল ছেড়ে বীরভূমে অবস্থা সামলনোর চেষ্টা হবে।
পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ঝাড়খণ্ডের জলাধারগুলিতেও যথেষ্ট জল ছিল না। এ দিন হওয়া নিম্নচাপের ফলে ঝাড়খণ্ডেও ভাল বৃষ্টির আশা করা হচ্ছে। এই নিম্নচাপটি রাজ্যে খরিফ চাষের অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে বলেই মনে করছে কৃষি দফতর। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে সব থেকে বেশি বৃষ্টি পেয়েছে কলকাতা। আলিপুরে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। দমদম, ডায়মন্ডহারবার ও বীরভূমের শ্রীনিকেতনে ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মালদহ ও বর্ধমানে হয়েছে ৩০ মিলিমিটার করে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আজ, বৃহস্পতিবারও দক্ষিণবঙ্গে ভাল বৃষ্টি হবে। চলতি সপ্তাহের গোড়ায় রাজ্য কৃষি দফতর হিসেব করে দেখেছিল, রাজ্যে ৪২% জমিতে আমন ধান রোয়া হয়ে গিয়েছে। বুধবারের নিম্নচাপটিতে যে ভাবে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ১৫ অগস্টের মধ্যেই তা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।
|