পঞ্চায়েত নির্বাচনের লড়াই এ বার সংসদে তুলে আনলেন বামেরা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আজ সংসদে বিক্ষোভ দেখাল সিপিএম। সঙ্গে যোগ দিলেন অন্য বাম দলের সাংসদরাও। বাম-জমানায় তৃণমূলের সাংসদরা যখন পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাস নিয়ে সরব হতেন, সে সময় বামেরা প্রশ্ন তুলতেন, কেন রাজ্যের বিষয় সংসদে তোলা হচ্ছে। আজ সেই বামেরাই ‘বাংলায় গণতন্ত্র বাঁচাও’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে লোকসভার ওয়েলে নেমে আসেন। রাজ্যসভায় সরব হন সীতারাম ইয়েচুরিরা। লোকসভায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভায় মুকুল রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েনরা তার পাল্টা প্রতিবাদ করেন। পরে যন্তরমন্তরেও বিক্ষোভ দেখান সিপিএম নেতারা।
যন্তরমন্তরের বিক্ষোভ মঞ্চ থেকে ইয়েচুরি অভিযোগ তোলেন, তৃণমূলের রাজনৈতিক সন্ত্রাস পুরো গণতান্ত্রিক কাঠামোটাকেই নস্যাৎ করে দিচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের ২৪ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত একশো জনেরও বেশি। প্রায় সাড়ে চার হাজার বুথ দখল হয়েছে। তৃণমূল প্রার্থীদের জেতাতে ভোটের সময় লাগামছাড়া রিগিং হয়েছে।” ইয়েচুরির এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর বক্তব্য, “পঞ্চায়েতে গোহারা হেরে গিয়ে সিপিএম এই সব অজুহাত দেখাচ্ছে। অথচ বামেদের ৩৪ বছরের শাসনে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ সিপিএমের হাতে খুন হয়েছেন।”
গত মাসে সিপিএম পলিটব্যুরোর বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রচার চালানো হবে। তার প্রস্তুতি নিয়েই আজ সংসদে এসেছিলেন সিপিএম সাংসদরা। প্রথমে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান সংসদ ভবনের প্রধান দরজার সামনে। তার পর অধিবেশন শুরু হতেই বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। এমনিতেই পুঞ্চে পাক সেনাদের হাতে ভারতীয় জওয়ানদের নিহত হওয়া ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিজেপি-র বিক্ষোভে তপ্ত হয়ে ছিল লোকসভা। অভিন্ন অন্ধ্রপ্রদেশের দাবিতেও সরব ছিলেন কয়েক জন। তার মধ্যে সিপিএম নেতারা ওয়েলে নেমে আসায় তিন বার লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে হয়। রাজসভাতেও ইয়েচুরি, তপন সেনরা এ নিয়ে আলোচনার দাবি জানান। রাজ্যসভায় তখন তৃণমূলের ৮ জন সাংসদ উপস্থিত। তাঁরা পাল্টা প্রতিবাদ জানান। দু’পক্ষের শোরগোলে রাজ্যসভাও মুলতুবি হয়ে যায়।
সিপিএমের অভিযোগের জবাবে লোকসভায় তৃণমূল দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “আসলে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় হতাশ। ওদের হাত থেকে যে ক্ষমতা চলে গিয়েছে, সেটাই এখনও হজম করতে পারছে না।”
দেশ জুড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস তুলে ধরতে গিয়ে জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গও টেনে আনেন ইয়েচুরি। তাঁর কথায়, “আমরা গোটা দেশকেই সতর্ক করছি। পশ্চিমবঙ্গেই বিষয়টা থেমে থাকবে না। গোটা দেশের গণতন্ত্রের জন্যই এটা বিপজ্জনক। সত্তর সালে যখন পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল, তখনও আমরা এই ভাবে সতর্ক করেছিলাম। জরুরি অবস্থার মাধ্যমে আমাদের সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছিল। এখন পশ্চিমবঙ্গে ফের সত্তর সালের মতো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বামেদের এই অভিযোগ মানতে রাজি নন সুদীপবাবু। তাঁর কটাক্ষ, “আসলে আগামী পুরসভা ও লোকসভা নির্বাচনেও বামেরা একই রকম হারের আশঙ্কা করছে। কারণ তার পরে বামেদের মাইক্রোস্কোপেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
ইয়েচুরিকে নির্লজ্জ আখ্যা দিয়ে ডেরেকের পাল্টা অভিযোগ, “উনি রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গের সন্ত্রাস নিয়ে বলছেন। আবার সভা মুলতুবি হতেই বাইরে গিয়ে পাকিস্তানের হামলা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিচ্ছেন। সবটাই আসলে প্রচারে থাকার সস্তা কৌশল।” |