বাংলা তাঁর কদর না বুঝলেও, বুঝেছেন অন্য রাজ্যের ক্রিকেট প্রশাসকরা। তাই বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের ট্রেনার সঞ্জীব দাস এখন রাজস্থান রঞ্জি দলের দায়িত্বে।
জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির লেভেল ওয়ান ট্রেনারের তকমা পাওয়া যে দু’জন এই রাজ্যে রয়েছেন, সেই দু’জনই এখন বাংলার ক্রিকেটে ব্রাত্য। ক্রিকেট যে এখন শুধু ব্যাট বলে আবদ্ধ নয়, তার বাইরেও অনেক কিছু আছে, সেটা বোধহয় ভুলে গিয়েছেন বাংলার ক্রিকেট প্রশাসকরা।
সদ্য রঞ্জি দল থেকে বাদ পড়া চিন্ময় রায় ছাড়াও বাংলার আর এক লেভেল ওয়ান ট্রেনার এই সঞ্জীব ক্রিকেট মহলে ‘হারু’ নামেই বেশি পরিচিত। গোটা পূর্বাঞ্চলেই এই যোগ্যতার ট্রেনার রয়েছেন মাত্র তিন জন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে বাংলার অনূর্ধ্ব ১৬, ১৯ ও ২২ দলের সঙ্গে কাজ করার মধ্যে এক বছর সিনিয়র দলেও ছিলেন তিনি। কিন্তু চলতি মরসুম শুরুর আগেই তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান ও সাম্মানিক দিয়ে নিজেদের রাজ্যের সিনিয়র দলের জন্য নিয়ে গিয়েছেন রাজস্থান ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা। বাংলা দলে কাজ করার জন্য সিএবি-র কাছ থেকে যে সাম্মানিক পেতেন, তার সাত গুণ পাচ্ছেন রাজস্থানে। গুরুত্বও অনেক বেশি। জয়পুরে সোয়াই মান সিংহ স্টেডিয়াম লাগোয়া যে অ্যাকাডেমি রয়েছে, সেখানে পাচ্ছেন আধুনিকতম পরিকাঠামো ও কাজের পূর্ণ স্বাধীনতা। যেগুলো নিজের রাজ্যে কাজ করার সময়েও সঞ্জীব পাননি বলে স্থানীয় ক্রিকেট মহলে শোনা যায়।
|
সঞ্জীব: ব্রাত্য অনূর্ধ্ব-১৯ ট্রেনারও। |
“রাজস্থান থেকে প্রস্তাবের কথা সিএবি কর্তাদের জানানোর পর ওঁরা সবাই আমাকে শুভেচ্ছা জানান,” বেঙ্গালুরুর এক টুর্নামেন্টে রাজস্থান দলের সঙ্গে এক মাস কাজ করে আপাতত শহরে ফেরা সঞ্জীব বুধবার আনন্দবাজারকে বললেন। দুঃখের সঙ্গে আরও জানালেন, “আমি ভেবেছিলাম সিএবি আমাকে এখানেই থেকে যেতে বলবে। তার জন্য ব্যবস্থা নেবে। বাংলার ক্রিকেটের জন্যই চিরকাল কাজ করার ইচ্ছা ছিল আমার। কিন্তু হতাশ হলাম, সিএবি-র কেউই সে রকম কিছু বললেন না। আমি একজন পেশাদার। আমার কেরিয়ার আছে। এমন অফার ছাড়ি কী করে বলুন? তাই রাজস্থানকে না করতে পারিনি।”
কেন আটকানো হল না সঞ্জীবকে? এমন যোগ্যতার একজন ট্রেনারকে কেন বাংলার ক্রিকেটের কাজে লাগানোর চেষ্টা হল না? জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির বৈঠকের জন্য বেঙ্গালুরুতে যাওয়া সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে জানালেন, “জুনিয়র স্তরে অত টাকা দিয়ে ওকে রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না বলেই আটকানো হয়নি।” কিন্তু জুনিয়র কেন, সঞ্জীবকে সিনিয়র স্তরেও তো অনায়াসে কাজে লাগানো যেত! তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখা বাংলার দুই প্রাক্তন ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত ও গৌতম সোম (জুনিয়র)-এর কথায় তেমনই ইঙ্গিত। দীপ বললেন, “ট্রেনার হিসেবে যথেষ্ট যোগ্য হারু। খুব ভাল একটা সুযোগ এসেছে ওর সামনে। আশা করি সফল হবে।” অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলা দলের কোচ গৌতমও বললেন, “যোগ্য তো বটেই। হারু সিনিয়র দলেও কাজ করেছে। সিএবি কেন ওকে রাখতে পারল না, জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমার দলে ও খুব উপযোগী সদস্য ছিল।” |