অভিনন্দন জানিয়ে মোহনবাগান কোচ করিম বেঞ্চারিফার ফোন এল সাক্ষাৎকারের মধ্যেই। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন টিমের কোচ হওয়া সত্ত্বেও এত দিন ‘বেকার’ ছিলেন। সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার দায়িত্ব নিয়ে আবার চ্যালেঞ্জের মেজাজে সুভাষ ভৌমিক।
|
প্রশ্ন: আসিয়ান কাপ, তিন বার আই লিগ জেতা হাইপ্রোফাইল কোচ সন্তোষ ট্রফির মতো গ্ল্যামারহীন টুর্নামেন্ট জেতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলার দায়িত্ব নিচ্ছে কেমন যেন মেলানো যাচ্ছে না!
সুভাষ: নর্মাল সময় হলে হয়তো লোডেড বন্দুকটা ঘাড়ে নিতাম না। কিন্তু সদ্য আই লিগ জেতার পরেও কোচিং করতে না পেরে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। একটা কাজ খুঁজছিলাম। পেয়ে গেলাম। তার পর আইএফএ সচিব অনুরোধ করলেন বাংলার জন্য কিছু করতে।
প্র: তা বলে সন্তোষ ট্রফি! যেখানে আই লিগ ফুটবলারদেরই খেলার সুযোগ নেই। ভূমিপুত্র ছাড়া কাউকে পাবেন না। তা হলে কী আশায় নিলেন?
সুভাষ: আরে, কোচিংটা এখন আমার কাছে মজার মতো। ওটাই চৌষট্টি বছরে আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। কোথাও কাজ না পেয়ে সিসিএফসি-তে গিয়ে কোচিং করাচ্ছিলাম। সদ্য আই লিগ জেতা কোচ বসে রয়েছে। এটা তো কখনও হয়নি ভারতীয় ফুটবলে। এখন ঘুরে ঘুরে জুনিয়র ফুটবলার বাছব মজা আছে কিন্তু কাজটায়। আমি আইএফএ সচিবকে বলে দিয়েছি, কল্যাণী-কৃষ্ণনগরে লিগের খেলা দিন, আমি সস্ত্রীক সেখানে গিয়ে তাঁবু গেড়ে বসে থাকব। শিশিররা চাকরি করে। বারাসাত-কলকাতাটা দেখবে।
প্র: যে চার্চিল ব্রাদার্সকে এ বার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তাতেও তো অর্ধেক অনামী জুনিয়র ফুটবলার ছিল। সেই অভিজ্ঞতা বাংলার জন্য কাজে লাগবে?
সুভাষ: সব না হলেও কিছুটা তো লাগবেই। তবে চার্চিলে বেটো, স্টিভন ডায়াসদের মতো কয়েক জন সিনিয়র ছিল। যা শুনছি, নতুন নিয়মে সে রকম ফুটবলার বাংলার পাওয়া কঠিন। খুঁজতে শুরু করেছি। দেখা যাক। তা ছাড়া আমি তো দু’তিন বছর বাংলার ফুটবলের সে ভাবে খোঁজও রাখিনি। |
সুভাষ ভৌমিক: বুধবার নিজের বাড়িতে। ছবি: উৎপল সরকার। |
প্র: কিন্তু ভাল ফুটবলার পাবেন কোথায়— যাদের নিয়ে আপনি ট্রফি আনবেন বাংলায়?
সুভাষ: কেন? আমি, কোচ শিশির (ঘোষ), গোলকিপার কোচ গৌতম (সরকার) দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে প্রিমিয়ার লিগের খেলা দেখব। সাত জন স্পটার চেয়েছি আইএফএ-র কাছে। তারা অন্য লিগ বা জেলার খেলা দেখে ফুটবলার বাছবে। চব্বিশটা ভাল ফুটবলার পাব না? তার পর তো লড়কে লেঙ্গে...।
প্র: আইএফএ-কে কি কোনও শর্ত দিয়েছেন দায়িত্ব নেওয়ার আগে? চার্চিল আপনার শর্ত মানেনি বলেই তো ছেড়ে চলে এলেন?
সুভাষ: এখনও চিঠি পাইনি। শনিবার দেখি, আইএফএ সচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসব। উৎপলবাবুকে বলেছি আমার সঙ্গে কথা বলে তার পর লিগের সূচি তৈরি করতে। যাতে সপ্তাহের শেষ দু’দিন প্র্যাকটিসে কিছু ফুটবলার পাই। সেপ্টেম্বরে থেকে কাজ শুরু করব ভেবেছি।
প্র: সুভাষ ভৌমিক টিডি মানে বাংলা চ্যাম্পিয়ন। সবারই প্রত্যাশা এ রকম হবে। এটা তো চাপ?
সুভাষ: আমার কাছে সন্তোষ ট্রফি কোনও চাপই নয়। আসলে কোচিং করাতে নেমে এখন আর চাপ অনুভব করি না। উপভোগ করি। কোচিং কাজটাই তো কঠিন। তবে এটা ঘটনা, আমার অবস্থা কিছুটা শাঁখের করাতের মতো। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে একটা অ্যাচিভমেন্ট হবে ঠিক। আবার না পারলে লোকে বলবে, সুভাষ দায়িত্ব নিল। পারল না!
প্র: কোচ হিসেবে প্রচুর ট্রফি জিতলেও ফেড কাপ আর সন্তোষ ট্রফি জেতেননি কোনও দিন। এ বার সুযোগ পাচ্ছেন। সেটাই কি মোটিভেশন?
সুভাষ: মোটিভেশন কিন্তু নিজেই ঠিক করে নিতে হয়। আমি ম্যানেজার হয়ে সাতাশিতে কলকাতায় সন্তোষ জিতেছি। কোচ দু’জন ছিল। কিন্তু প্রদ্যোৎদা (দত্ত) আমাকে বলেছিলেন, ও সব রাজনীতি করতে গেলে করতে হয়। তুমিই সব দেখো। আমিই বড় ফুটবলারদের অনেককে বসিয়ে তখনকার শিশির ঘোষের মতো জুনিয়রদের নামিয়ে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলাম।
প্র: ফুটবলের আইপিএল চালু হচ্ছে। সেখানে কোনও টিম আপনাকে ডাকতেই পারে। তখন কী করবেন? সেই সম্ভাবনা আছে বলেই কি সন্তোষে কোচ না হয়ে টিডি হলেন?
সুভাষ: বিশ্বে সব কিছুই অ্যাডজাস্ট করা যায়। আমি তো এখন থেকেই কাজ শুরু করে দিচ্ছি। শুনছি, জানুয়ারিতে হবে সন্তোষ। যদি হয়, সমস্যা নেই। ফুটবল আইপিএলের পরে সন্তোষ হলেও সমস্যা হবে না। এখন আমি শুধু বাংলা নিয়েই ভাবছি। যদি ফুটবল আইপিএলে কোচিংয়ের সুযোগ পাই সমস্যা হবে না। দেড়-দু’মাস শিশির চালিয়ে দেবে।
|