খড়্গপুরে স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ৫ যুবককে দোষী সাব্যস্ত করল মেদিনীপুর আদালত। আজ, বুধবার তাদের সাজা শোনানো হবে। শুরু থেকেই এই মামলায় বাড়তি নজর ছিল পুলিশের। ঘটনার তিন মাসের মাথায় আদালতে চার্জশিট জমা পড়ে। চার্জগঠন হয়। মামলার শুনানি শুরু হয়। চার্জশিট জমা পড়ার আট মাসের মাথায় এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে চলেছে। এক অভিযুক্ত অবশ্য এখনও পলাতক। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “ওই অভিযুক্তের খোঁজে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।”
রেলশহর খড়্গপুরে গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর। সে দিন সন্ধ্যায় এক বান্ধবীর বাড়ি থেকে ফিরছিলেন একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। মথুরাকাটির কাছে কয়েকজন যুবক তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, গণধর্ষণের ঘটনায় মোট ৮ যুবক জড়িত। ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য দুই অভিযুক্ত পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। দু’জনই রেলকর্মী। আদালতের নির্দেশে ‘পলাতক’ দু’জনের অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরে একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে। গত ৭ ডিসেম্বর মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। অপহরণ, গণধর্ষণ-সহ মোট ৪টি ধারায় অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি দায়রা সোপর্দ করেন মেদিনীপুরের সিজেএম কল্লোল দাস। পরে মেদিনীপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক সমর রায় নির্দেশ দেন, বিচার চলবে মেদিনীপুরের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে। সেই মতো ৩০ জানুয়ারি মেদিনীপুরের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক কমলকুমার দে’র এজলাসে মামলার চার্জগঠন হয়।
খড়্গপুরে দুষ্কৃতী-রাজের অভিযোগ নতুন নয়। তবে ছাত্রী গণধর্ষণের ঘটনা সাম্প্রতিককালে ঘটেনি। পুলিশ তাই ঘটনার কিনারায় বাড়তি তৎপর ছিল। রেলশহরে তদন্তে এসেছিলেন তৎকালীন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, বান্ধবীর বাড়ি থেকে সাইকেলে ফিরছিল ওই কিশোরী। পথে এক বন্ধুর সঙ্গে তার দেখা হয়। দেখা দু’জনে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। তখনই ৩টি মোটর বাইকে কয়েকজন যুবক সেখানে আসে। প্রথমে তারা নিজেদের ‘পুলিশের লোক’ বলে জানায়। এ-ও বলে, সন্ধ্যায় এ ভাবে দু’জনে মিলে গল্প করার জন্য তাদের ‘জরিমানা’ দিতে হবে। বন্ধুটি টাকা আনতে গেলে ওই যুবকেরা ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। কিছুক্ষণ পরে বন্ধু ফিরে এসে দেখে, মেয়েটি সেখানে নেই। ওই যুবকেরাও নেই। পরে মাঠের পাশ থেকে অচৈতন্য অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। পরে ধর্ষিতা ছাত্রীর বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
ঘটনার পর অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে সরব হয় বিভিন্ন মহল। ছাত্রীর সহপাঠীরা মিছিল করে। প্রতিবাদে সামিল হয় বিভিন্ন ক্লাবও। ক্লাব সমন্বয় কমিটি থেকে পুলিশে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। মামলার তদন্ত করছিলেন খড়্গপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার মেদিনীপুরের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত অভিযুক্ত ৫ জন যুবককে দোষী সাব্যস্ত করে। প্রতীক দেব এবং কৌশিক দাস নামে অন্য দুই অভিযুক্ত মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
|