মুকেশ অম্বানীর ফোর-জি’র পর জিন্দল গোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প।
গত ১ অগস্ট মুম্বইয়ে রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কর্ণধারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরে কলকাতায় ফোর-জি পরিষেবা চালু করা নিয়ে সোমবারই চূড়ান্ত পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এ বার জিন্দল গোষ্ঠীর আবেদন পেয়ে শালবনিতে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ নিয়ে সক্রিয় হল রাজ্য।
মুম্বইয়ে ‘বেঙ্গল বেকনস’-এর মঞ্চ থেকেই শালবনিতে তাদের জমিতে ‘কিছু একটা করার’ জন্য জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দলকে আর্জি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তাড়াতাড়ি করুন! নইলে পরের বার মুম্বই গিয়ে সোজা আপনার বাড়ি চলে যাব।” সজ্জন তখনই মমতাকে জানিয়েছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে ইস্পাতশিল্প নয়, শালবনির জমিতে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে আগ্রহী তাঁরা। সেই মোতাবেক দিন দুয়েক আগে সজ্জন একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠান মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে। মঙ্গলবার সেই প্রস্তাব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের অফিসে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে শিল্প দফতর। মহাকরণের খবর, প্রকল্পটি দ্রুত রূপায়ণ করার জন্য বিদ্যুৎ কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পরে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জিন্দলদের প্রস্তাবটি আসার পরে তা আমার কাছে পাঠানো হয়েছিল। আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমাদের দিক থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে বলে ওঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে একটি ইস্পাত প্রকল্প করবে বলে কয়েক বছর আগে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে সজ্জন জিন্দলের সংস্থা। ওই প্রস্তাবেই প্রকল্পের প্রথম ধাপে কারখানার প্রয়োজনের জন্য একটি ৩০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার কথা রয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতায় এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এখনও শুরু হয়নি। এই প্রেক্ষাপটেই মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলনে সজ্জন জিন্দলের কাছে ‘কিছু একটা করার’ আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েই সজ্জনের সংস্থা নতুন প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
শালবনিতে যেখানে ইস্পাত কারখানা তৈরি হওয়ার কথা, সেই জমির একটি অংশেই নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প করার প্রস্তাব দিয়েছে জিন্দল গোষ্ঠী। ৬৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ সেখানে উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ-কর্তাদের কথায়, এই প্রকল্প করতে হলে জিন্দল গোষ্ঠীকে অন্তত ৪০০০ কোটি টাকা লগ্নি করতে হবে।
এই প্রস্তাব নিয়ে এ দিন শিল্পোন্নয়ন নিগমের অফিসে বৈঠকে বসেন বিদ্যুৎসচিব মলয় দে, শিল্পসচিব চঞ্চলমল বাচওয়াত, নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষ্ণ গুপ্ত-সহ শিল্প দফতরের কর্তারা। বিদ্যুৎ কর্তারা জানান, সজ্জন জিন্দলের সংস্থা জিন্দল বেঙ্গল স্টিলের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আগেই বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি রয়েছে। এখন নতুন প্রস্তাব মতো জিন্দল গোষ্ঠী ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তার মধ্যে ৫২৮ মেগাওয়াটই কিনে নেবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কয়লার প্রয়োজন। সংস্থার নিজস্ব কয়লা খনি থাকায় তারও অভাব হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
পার্থবাবু এ দিন বলেন, “মুম্বইয়ে শিল্প সম্মলনের পরেই আমি জিন্দলদের প্রস্তাব নিয়ে বিদ্যুৎ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ওরা নতুন প্রস্তাব দিলেও একটি বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দিতে হবে।” শিল্পমন্ত্রীর দাবি, ইস্পাত প্রকল্প গড়ার জন্য আকরিক লোহা পাওয়া এখন জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট নীতি নিতে পারছে না কেন্দ্র। ফলে ভুগতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যকে। সুতরাং জমি যখন হাতে রয়েছে, সেই জমিতে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে উঠলে উভয় পক্ষেরই লাভ। |