পৃথক রাজ্য গড়ার দাবি নিয়ে কার্বি আংলং-এ দল বনাম স্থানীয় রাজনীতির কাজিয়া চলছে প্রদেশ কংগ্রেসে? না কী, বিরোধীদের পালের হাওয়া কাড়তেই কার্বি আংলং বা ডিমা হাসাওয়ে যুব কংগ্রেস ও কংগ্রেস নেতাদের একাংশের এই অতি-সক্রিয়তা? আপাতত এই প্রশ্ন ঘিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য-রাজনীতি।
প্রাক্তন জঙ্গিদের হাতেই রাজনৈতিক ক্ষমতা, মন্ত্রিত্ব এবং স্বশাসিত পরিষদ দিয়ে বড়োল্যান্ড, কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাওয়ে পৃথক রাজ্যের আন্দোলনকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তেলঙ্গানা পরবর্তী পর্যায়ে, অসমকে চার টুকরো করতে যে চারটি আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার দু’টিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বেরই একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ রাজ্য অখণ্ড রাখার পক্ষে সওয়াল করলেও, স্থানীয় নেতারা হাঁটছেন উল্টোপথে! কংগ্রেস একে বিদ্রোহ বলতে মানতে নারাজ। প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র বিচিত্র চৌধুরীর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, দলও তাই চায়। কার্বি আংলং বা অন্যান্য জায়গায় উপজাতিদের নিজস্ব দাবি থেকেই স্থানীয় ভাবে আন্দোলন শুরু হয়েছে। প্রদেশ নেতৃত্ব বা যুব কংগ্রেসের মধ্যে ফাটল ধরেনি।”
কার্বি রাজ্য ও ডিমারাজ্য গঠন ও চলতি সংসদ অধিবেশনে এই প্রসঙ্গ উত্থাপনের জন্য, স্বশাসিত পরিষদ দু’টির নির্বাচিত সব সদস্যকে নিয়ে দুই পরিষদের প্রধান জয়রাম এংলেং ও দেবজিৎ থাওসেন এখন দিল্লিতে। দু’জনেই কিন্তু কংগ্রেসেরই নেতা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভুবনেশ্বর কলিতাও মেনে নিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে কংগ্রেসের কিছু নেতা-কর্মী এই আন্দোলনে জড়িত।
অগপ নেতা অতুল বরার অভিযোগ, “২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের দিকে চোখ রেখেই কংগ্রেস এই চাল চেলেছে। কংগ্রেসের উস্কানিতেই আন্দোলন হচ্ছে দুই জেলায়। দিল্লিতে থাকা মুখ্যমন্ত্রীর শান্তি ফেরানোর কোনও আগ্রহই নেই।” প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার মতে, কার্বি, ডিমাসা ও বড়ো-এই তিনটি পরিষদ, ভৌগোলিক বা রাজনৈতিকভাবে দিসপুরের অধীনে থাকলেও সেখানকার উপজাতীয় রাজনীতির চরিত্র বরাবরই ভিন্ন। সেখানে টিঁকে থাকতে গেলে উপজাতি রাজনীতির তাসই খেলতে হবে। তেলেঙ্গানার পরে রাজ্যের উপরে চাপ আসবে তা তরুণ গগৈ আগেই জানতেন। রাজ্য ও পরিষদের অন্দরেও তাই প্রস্তুতি চলছিল সমানতালে। সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার ব্যাপারে কংগ্রেস নেতাদের উপরে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে। তার মধ্যেই কার্বি আংলং থেকে এক স্থানীয় নেতা ফোনে জানালেন, “কার্বি আংলং-এ আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে, প্রথমে কংগ্রেস-বিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিতে চেয়েছিল। পরে কংগ্রেস নেতা-কর্মীরাই পতাকা নিয়ে সরকারি দফতর পোড়ানোয় হাত লাগায়।
অর্থাৎ সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের ক্ষতিটুকুর বিনিময়ে বিরোধীদের পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়া হল।
|