পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে এখনও উত্তপ্ত কার্বি আংলং। বিক্ষোভকারীদের দেখলেই গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় সেই পথে এগোতে নারাজ নিরাপত্তাবাহিনী।
মুখ্যমন্ত্রী দাবি নাকচ করলেও, কংগ্রেসেরই যুব বাহিনী ‘এনএসইউআই’ এবং যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১১টি সংগঠন যৌথ মঞ্চ গড়ে পৃথক রাজ্য গঠনের আন্দোলন জোরদার করেছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কার্বি আংলং-এ পৃথক রাজ্যে গঠনের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কংগ্রেস-বিরোধী শক্তি যে ভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছিল, তা প্রশমনে যুব কংগ্রেসকে ‘মাঠে’ নামানো হয়েছে।
ডিমা হাসাওতেও পৃথক রাজ্যের দাবিতে ৩৬ ঘণ্টার বন্ধ ডাকা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, বন্ধের খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। ডিমাসাদের জন্য আলাদা রাজ্য, না কি ডিমা হাসাও এবং কার্বি আংলং-কে নিয়ে পার্বত্য রাজ্য—এ নিয়ে ধন্ধও রয়েছে সেখানে।
রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তিনি জানিয়েছেন, তেলেঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্তের জেরেই অসমে অশান্তি ছড়িয়েছে। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন গগৈ। তিনি বলেন, “আমরা যৌথ পরিবারের মতো থাকতে চাই। প্রতিবাদ জানানোর অধিকার সবার রয়েছে। কিন্তু তা শান্তিপূর্ণভাবে করা উচিত। আলোচনার মাধ্যমেই পরিস্থিতি সামলানো যাবে।” উপজাতিদের ক্ষোভ নিয়ে গগৈ বলেন, “ওঁরা ভাবছেন মিজোরাম, নাগাল্যান্ডের মতো স্বতন্ত্র রাজ্য হলে কেন্দ্রের বিশেষ আর্থিক সাহায্য মিলবে। স্বায়ত্ত্বশাষিত পরিষদ গড়েও বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছি।”
আজ ডিফুতে যান রাজ্যের দুই মন্ত্রী রাজীবলোচন পেগু, পৃথ্বী মাঝি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসক, আইজি এবং এসপি-র সঙ্গে আলোচনা করেন তাঁরা।
ওই শহরে সকালে ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কার্ফু শিথিল করা হয়। গত ১২ ঘণ্টায় ডকমকা-চামেলাংশু, উলুকুঞ্চি, বৈঠালাংশু, আক্রেং, হাওড়াঘাট, ধরমপুর-সহ বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি সরকারি অফিস, কংগ্রেস কার্যালয়, বন বিভাগের অফিস, গুদাম, পশু চিকিৎসালয়ে আগুন লাগানো হয়। অবরোধ হয়েছে জাতীয় সড়কগুলিতেও। রেল সূত্রের খবর, দলাদলিতে রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়। তার জেরে কয়েকটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। আটকে রয়েছে রাজধানী, চণ্ডীগড় এক্সপ্রেস, কামরূপ এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন। সম্পর্কক্রান্তি এবং নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেসের সময় বদল করা হয়েছে।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, কার্বি আংলং এবং ডিমা হাসাওয়ের পাঁচ দলীয় বিধায়ক দিল্লি যাচ্ছেন। পৃথক রাজ্যের দাবিতে সোমবার থেকে ১০০ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে এইচএসডিপি।
পৃথক বড়োল্যান্ড গঠনের প্রতিবাদও হয়েছে নামনি অসমে। অ-বড়ো ২৭টি সংগঠন যৌথভাবে ‘অনাবড়ো সুরক্ষা সমিতি’ গড়েছে। পৃথক রাজ্য গঠনের দাবির প্রতিবাদে ৩৬ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে ওই সমিতি। কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবিতে ‘অল কোচ রাজবংশী স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ (আক্রাসু) নেতা বিশ্বজিৎ রায় রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল জানিয়েছে, আজ বিকেল পর্যন্ত গুয়াহাটির সব ট্রেন গড়ে ২ ঘণ্টা দেরিতে চলছে। নামনি এবং উজানি অসমের মধ্যে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ১৫টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। |