|
|
|
|
আন্দোলনের ভাবনা |
বৃহত্তর ঝাড়খণ্ডের দাবি জঙ্গলমহলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
পাহাড়ের আঁচ এ বার জঙ্গলমহলে। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের পথেই বৃহত্তর ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে ঝাড়খণ্ডী দলগুলো। জঙ্গলমহলের তিন জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং বীরভূম ও বর্ধমানের কিছু অংশকে ঝাড়খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)। দলের সভানেত্রী চুনিবালা হাঁসদা ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ডে জোট সরকারের প্রধান শরিক ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) এবং ওই রাজ্যের বিরোধী দল ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন।
সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলে ধরাশায়ী হয়েছে ঝাড়খণ্ডী দলগুলো। ঘাসফুলের জয়জয়কারে তাদের অস্তিত্ত্ব কার্যত বিপন্ন। এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তর ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের পুরনো দাবিকে ফের সামনে এনে ঝাড়খণ্ডীরা কিছুটা অক্সিজেন পেতে চাইছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের মতে, “জনসমর্থন হারিয়ে আঞ্চলিক দলগুলি এখন নানা ছুতোয় অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু জনগণ সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ করবেনই।” চুনিবালা অবশ্য বলছেন, “এ রাজ্যের সরকার আদিবাসী-মূলবাসীদের স্বার্থরক্ষায় ব্যর্থ। তাই বৃহত্তর ঝাড়খণ্ডের দাবিতে আন্দোলনে নামছি। বিমল গুরুঙ্গদের আন্দোলনকেও সমর্থন করছি।”
জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর চুনিবালা এই দাবি নিয়ে আন্দোলনের কথা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জানান। তারপর জেএমএম এবং ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জেএমএম-এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক স্বপন মাহাতো বলেন, “চুনিবালার সঙ্গে প্রাথমিক কথা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।” ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি অজিতপ্রসাদ মাহাতোরও বক্তব্য, “একযোগে আন্দোলন নিয়ে চুনিবালার সঙ্গে কথা হয়েছে।” এক সময় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিল ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর। তবে এই আন্দোলনকে তারা সমর্থন করছে না। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি নিখিল মাইতি বলেন, “জঙ্গলমহলের তিন জেলাকে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অন্তর্ভুক্তির দাবিটি ওদের দলীয় বিষয়। আমরা কখনই এই দাবিকে সমর্থন করি না।”
নব্বইয়ের দশকে জঙ্গলমহলের তিন জেলাকে ঝাড়খণ্ডে অর্ন্তভুক্ত করার দাবি সামনে রেখেই ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) প্রতিষ্ঠা করেন নরেন হাঁসদা। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিনপুর বিধানসভা কেন্দ্র তিনি নির্বাচিতও হন নরেনবাবু। সেই সময় বিধানসভায় গোর্খাল্যান্ডের দাবি সমর্থন করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, জঙ্গলমহলের ভাষা ও সংস্কৃতি ঝাড়খণ্ডী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তার পরেও এখানকার আদিবাসী-মূলবাসীদের উপর জোড় করে বঙ্গ সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নরেনবাবু মারা যান। বিধায়ক হন চুনিবালা। তবে ২০০০ সালে পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্য তৈরির সময় পশ্চিমঙ্গের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলি তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এরপর থেকে বৃহত্তর ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের দাবিটি ক্রমশ থিতিয়ে যায়। চুনিবালাও আর নির্বাচনে জিততে পারেননি।
কিন্তু, এ বার পরিস্থিতি বুঝে সেই দাবিকেই ফের চাঙ্গা করতে চাইছেন চুনিবালারা। |
|
|
|
|
|