গত কাল সাংসদের সন্ধানে থানায় ডায়েরি করেছিল গোর্খাল্যান্ড টাস্ক ফোর্স। আজ অবশ্য সেই যশোবন্ত সিংহকে তাঁর দিল্লির বাড়িতে পেলেন রোশন গিরিরা। বৈঠকও করলেন ঘণ্টাখানেক। দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ মোর্চা নেতাদের এই বলে আশ্বস্ত করলেন যে, সংসদে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলবেন তিনি। যদিও আজ বাংলা ভাগের বিরোধিতা করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ফলে গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গে বিজেপি-র মতান্তর ফের প্রকাশ্যে চলে এল।
এমনিতে বিজেপি নীতিগত ভাবে ছোট রাজ্যের পক্ষে। এনডিএ সরকারের আমলেই গঠিত হয়েছিল উত্তরাখণ্ড, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড। দার্জিলিঙের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অনুন্নয়ন ও বঞ্চনার শিকার এই যুক্তিতে গোর্খাল্যান্ডের দাবিও সমর্থন করে আসছেন যশোবন্ত। কিন্তু দার্জিলিঙের রণকৌশলগত অবস্থানের কারণে পৃথক রাজ্য গড়া উচিত কিনা, তা নিয়ে বিজেপি-র মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
রাজ্য বিজেপি-ও বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, “আমরা গোর্খাল্যান্ডের দাবি সমর্থন করছি না।” অনুন্নয়ন এবং বঞ্চনার অভিযোগ যথাযথ বললেও রাহুলবাবুর যুক্তি, মাত্র তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে আলাদা রাজ্য গঠন অর্থহীন। বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আবেগকে মর্যাদা না-দিলে রাজ্যের অন্যত্র বিপুল রাজনৈতিক ক্ষতি হবে বুঝেই গোর্খাল্যান্ডের বিরোধিতা করছেন রাহুলবাবুরা।
কিন্তু দিল্লির নেতা যশোবন্তের সে দায়-না থাকায় তিনি হাঁটছেন গোর্খাল্যান্ডের পথে। আজ তিনি বলেন, “কংগ্রেস ভোটের স্বার্থে তেলেঙ্গানার দাবি মেনে নিয়েছে। তা হলে অন্যান্য ছোট রাজ্যের দাবিতে আপত্তি কীসের? আমি গোর্খাল্যান্ডের দাবির সমর্থক। আগেও সংসদের ভিতরে-বাইরে এ নিয়ে সরব হয়েছি।” যদিও যশোবন্ত তাঁদের দাবি নিয়ে কখনও সে ভাবে সরব হয়েছেন বলে মনে করছেন না খোদ মোর্চা নেতারাই। যশোবন্তের উপরে ক্ষোভ থেকেই গত কাল যশোবন্তের বাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখায় মোর্চার দিল্লি শাখা। দার্জিলিং তেতে উঠলেও সাংসদের দেখা নেই বলে দার্জিলিং সদর থানায় তাঁর নামে নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়। যশোবন্ত আজ বলেন, “সংসদের অধিবেশন সোমবার থেকে শুরু।
তাই এখন দার্জিলিং যেতে পারছি না। সেপ্টেম্বরে যাব।”
আজ সকালে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের সঙ্গে বৈঠকের পর যশোবন্তের বাড়িতে যান গোর্খা নেতারা। তাঁকে গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে সওয়াল করতে বলেন। আগামী সপ্তাহে তিনি এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করবেন বলে রোশন গিরিদের জানিয়েছেন যশোবন্ত।
তবে ঘটনা হল, এর আগে দিল্লি এলেও যশোবন্তকে এড়িয়েই চলতেন মোর্চা নেতারা। তাঁকে এড়িয়ে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করে গিয়েছেন তাঁরা। অনেকের মতে, বিজেপি-কে সমর্থন করে লাভের লাভ কিছু হয়নি বলেই কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকেছে মোর্চা। আগামী লোকসভা ভোটে দার্জিলিঙে মোর্চা কি কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করবে? রোশনের জবাব, “এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।”
এ দিকে, আজ দিল্লিতে স্পিকারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিরোধিতা করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে তিনি বলেন, “ছ’বছর ধরে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের বিষয়টি চলছিল। লোকসভা নির্বাচনে ফায়দা নিতেই ভোটের ঠিক আগে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। এতে পশ্চিমবঙ্গ, অসম-সহ একাধিক রাজ্যের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। এর দায় কংগ্রেসেরই।” |