অফিসারদের বিপাকে ফেলতে নিচুতলায় ফতোয়া
পাহাড়ে পুলিশ-প্রশাসনের সক্রিয় অফিসারদের বিপাকে ফেলতে তাঁদের অফিস এবং বাংলোর কর্মীদের আন্দোলনে সামিল হওয়ার ‘ফতোয়া’ দেওয়ার অভিযোগ উঠল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে।
পাহাড়ে অনির্দিষ্টকালের বন্ধ শুরুর আগে জারি হওয়া ওই ‘ফতোয়া’র পরে কোনও অফিসারের বাংলোর রাঁধুনি এক বেলা কাজে না গিয়ে মোর্চার মিছিলে পা মেলাচ্ছেন। পুলিশ-প্রশাসনের একাধিক অফিসারের বাংলোর নিরাপত্তা রক্ষীরা ‘বাড়িতে কাজের চাপ’ বলে ছুটি চাইছেন। পুলিশের পদস্থ অফিসারদের একাধিক দেহরক্ষীও ‘বাড়ির নানা সমস্যার’ কথা বলে কয়েকদিনের ছুটির আর্জি জানিয়েছেন। যাঁদের ছুটি মঞ্জুর হচ্ছে না, তাঁরা বাড়ির লোকজনকে মোর্চার আন্দোলনে সামিল হতে পাঠাচ্ছেন।
মোটের উপরে প্রশাসনিক অফিসারদের বাংলোয় দৈনন্দিন নানা কাজের দায়িত্ব যাঁদের উপরে, সেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের অনেকেই এক বেলা আসছেন, তো অন্য বেলায় অনুপস্থিত থাকছেন। দার্জিলিং জেলা সদর, কার্শিয়াং, মিরিক, কালিম্পং—প্রায় সর্বত্রই এমন ঘটনা ঘটছে বলে পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর।
খবর পৌঁছেছে মহাকরণেও। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মাকে পাহাড়ে পাঠানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে পাহাড়ে পৌঁছে আইজি বলেন, “অনেক অভিযোগ, আশঙ্কার খবর পাচ্ছি। সবই খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
‘ফতোয়া’ দেওয়ার কথা মানতে চায়নি মোর্চা। দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির দাবি, “ফতোয়া দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। গোর্খাল্যান্ড হলে পাহাড়ের সবারই আশা পূরণ হবে। সে জন্য সবাইকে আন্দোলনে সামিল হতে বলা হয়েছে।” মোর্চার একাধিক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ বারেবারেই পুলিশ-প্রশাসনে কর্মরত গোর্খা সম্প্রদায়ের পুরুষ-মহিলাদের গোর্খাল্যান্ডের জন্য আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান করছেন। এ আর নতুন কী?”
যদিও পুলিশ-প্রশাসনের কাছে নিচুতলার সরকারি কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে মোর্চার কয়েকজন নেতা ছুটি নিয়ে মিছিল, মিটিং, সমাবেশে যোগ দেওয়ার ‘ফতোয়া’ দিয়েছেন। সে কথা না শুনলে পাহাড়ে তাঁরা গোর্খাল্যান্ড-বিরোধী বলে চিহ্নিত হতে পারেন, এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের কর্তাদের কাছে নিচুতলার সরকারি কর্মীদের অনেকে মেনে নিয়েছেন, পরিবারের বাকি সদস্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাঁদের অনেকে ছুটির মৌখিক আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিনা কারণে অনুপস্থিত থাকলে বেতন কাটা হবে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারদের বাংলোয় নানা কাজে নিযুক্ত চতুর্থ শ্রেণির স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের অনেকেই বলছেন, “কৃষ্ণ রাখি, না কুল রাখি!”
পৃথক রাজ্যের দাবিতে লাগাতার বন্ধ, হিংসাত্মক আন্দোলনের সময়ে যে অফিসারেরা সক্রিয় ভূমিকা নেন, তাঁদের বাংলোর কাজে থাকা কর্মীদের উপরে চাপ দিয়ে অতীতেও ঝামেলা পাকানো হয়েছে দার্জিলিঙে। আশির দশকে জিএনএলএফের আমলে এক মহকুমাশাসকের বাংলোর রাঁধুনি এবং নিরাপত্তা রক্ষী আচমকা অসুস্থতার কথা জানিয়ে বাংলো ছেড়ে চলে যান। সেই রাতেই ওই বাংলোয় ঢুকে জিএনএলএফের কিছু নেতা সেই অফিসারকে মানসিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ।
শুধু তা-ই নয়, জিএনএলএফ আমলে থানা পোড়ানো, পুলিশের উপরে আক্রমণের ঘটনাও কম নয়। সুবাস ঘিসিংয়ের আন্দোলনের গোড়ার পর্বে কার্শিয়াঙে মিরিক থানায় হামলার পরে, পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে কয়েকজন হামলাকারীকে ধরে। কার্শিয়াঙে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে কার্শিয়াঙের তৎকালীন গোয়েন্দা ইনস্পেক্টর বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর সহকারী এক কনস্টেবলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কুপিয়ে খাদে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দীর্ঘ দিন পাহাড়ে থাকার সুবাদে বিশ্বনাথবাবু বহু তথ্য জানতেন। সে জন্য তাঁকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাহাড়ে পাঠানো হয়। ওই আন্দোলনের মাঝামাঝি সেই সময়ে দার্জিলিঙে সক্রিয় থাকা দুই আইপিএস অফিসার আর কে হান্ডা এবং কমলকুমার মজুমদারের গাড়িতেও হামলা হয়। আর কে হান্ডার শরীরে গুলি লাগে। কমলকুমারবাবুকে কোপানোর চেষ্টা হলে তাঁর দেহরক্ষী কোনওমতে বাঁচান। দেহরক্ষী গুরুতর জখম হন। এ ছাড়াও মিরিক থানায় হামলা চালিয়ে অনেককে জখম করার অভিযোগও রয়েছে জিএনএলএফের বিরুদ্ধে।
এই সমস্ত তথ্য বর্তমানে পাহাড়ে কর্তব্যরত পুলিশ-প্রশাসনের পদস্থ অফিসারদের প্রায় সকলেরই জানা। পক্ষান্তরে, এখন মোর্চার আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই বিমল গুরুঙ্গ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও জিএনএলএফ-এর আন্দোলন-পর্বে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন বলে পুলিশের নথিই বলছে। সে জন্যই প্রশাসনিক মহলের সন্দেহ ও নানা আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে।

ঈদে বনধ নয়, আর্জি মোর্চাকে
ঈদের সময়ে বন্ধ না করার জন্য গোর্খা জনমুক্তির কাছে আবেদন করেছে অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি ফোরাম। দাবি না মানলে মোর্চা নেতা বিমল গুরুঙ্গকে পাহাড় থেকে নামা বা তাঁর কলকাতায় প্রবেশ বন্ধ করা হবে বলে শনিবার ফোরামের সভায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের নেতা ইদ্রিস আলি। ওই সভায় রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রও আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনের বিরোধিতা করে ‘অখণ্ড বাংলা রক্ষা করার’ আবেদন জানিয়েছেন। পাহাড়ে শান্তি রক্ষার জন্য কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও ফোরামের সভা থেকে আর্জি জানানো হয়েছে। মোর্চার কলকাতা শাখার পক্ষ থেকে ধর্মতলায় অবস্থান কর্মসূচির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই আবেদন প্রশাসন নামঞ্জুর করেছে বলে মোর্চার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.