দুর্গাশক্তির পাশে এ বার সনিয়া, চিঠি মনমোহনকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
উত্তরপ্রদেশের আইএএস অফিসার দুর্গাশক্তি নাগপালের পাশে দাঁড়ালেন সনিয়া গাঁধী। সম্প্রতি দুর্গাকে সাসপেন্ড করেছে উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সরকার। বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করাতেই তিনি রাজ্য সরকারের বিরাগভাজন হয়েছেন বলে অভিযোগ।
আজ জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সনিয়া আজ চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। তাঁর মতে, বিষয়টি রাজ্যের হলেও প্রয়োজনে মনমোহনকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। কংগ্রেস নেত্রী জানিয়েছেন, দুর্গার সাসপেনশনের সপক্ষে রাজ্য সরকার উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারেনি বলেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ। কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়েই তিনি সাসপেন্ড হয়েছেন বলে মনে করেন অনেকে। কেন্দ্রকে দেখতে হবে, আমলারা আইন মেনে কড়া পদক্ষেপ করলে তাঁদের সুরক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে কিনা। প্রশাসনিক সংস্কারের পথে কেন্দ্র এগিয়েছে ঠিকই। কিন্তু, দুর্গার সাসপেনশন প্রসঙ্গে উঠে আসা প্রশ্নগুলিরও সমাধান প্রয়োজন।দুর্গা প্রশ্নে এত দিন পর সনিয়া গাঁধীর ওই সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি শিবির। সমাজবাদী পার্টিও ঘটনাটি নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ করেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
|
|
কিন্তু দুর্গার সাসপেনশন নিয়ে ক্রমশই একঘরে হয়ে পড়ছে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহের সরকার।
নির্মীয়মাণ মসজিদের দেওয়াল ভাঙার অভিযোগে গত ২৭ জুলাই দুর্গাকে সাসপেন্ড করে অখিলেশ সরকার। কিন্তু নানা শিবিরের দাবি, স্থানীয় বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়ার ফলেই দুর্গাকে ওই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সমাজবাদী নেতা নরেন্দ্র ভাট্টির
চাপেই অখিলেশ ও মুলায়ম সিংহ যাদব দুর্গাকে সরিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়ে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।
কংগ্রেস নেতৃত্বের পক্ষ থেকেও আজ অবিলম্বে ওই সাসপেশন তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। গোটা বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে জানতে চেয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রক।
আজ কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি বলেন, “দুর্গাশক্তিকে কেন সাসপেন্ড করা হয়েছে তা নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই ধোঁয়াশা কাটবে।” তাঁর মন্তব্য, “যে অফিসারেরা নিয়ম মেনে কাজ
করেন তাদের সাসপেন্ড নয়, স্যালুট করা উচিত।”
দুর্গাশক্তি প্রশ্নে কংগ্রেসের অতিসক্রিয়তা নিয়ে আজ কটাক্ষ করতে ছাড়েনি সমাজবাদী পার্টি। |
|
দুর্গাশক্তির সমর্থনে মোমবাতি মিছিল। লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই। |
সমাজবাদী নেতা নরেশ অগ্রবালের মতে, সনিয়ার আরও দু’টি চিঠি লেখা উচিত। একটি হরিয়ানার সাসপেন্ড হওয়া আইএএস অফিসার অশোক খেমকা ও অন্যটি রাজস্থানের দুই আইএএস অফিসারের জন্য। কারণ দু’টি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে ওই অফিসারেরা সনিয়ার জামাই রবার্ট বঢরার জমি সংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
বিজেপি সাংসদ শাহনওয়াজ হুসেনের মতে, সবই লোক দেখানো ব্যাপার। জনমত এখন দুর্গাশক্তির পক্ষে। তা বুঝতে পেরেই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এখন দুর্গাশক্তি প্রশ্নে সরব হয়েছেন।
তবে সংসদে খাদ্য বিলের মতো একাধিক বিল পাশ করাতে গেলে সমাজবাদী পার্টির সমর্থন লাগবে। তাই কংগ্রেসের পক্ষে মুলায়ম-অখিলেশের সরাসরি সমালোচনা করাও সম্ভব নয়। গোটা ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের ভূমিকার নিন্দা করেন সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত।
চাপের মুখে পড়লেও এখনও দুর্গার সাসপেনশন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি অখিলেশ। গত কাল অখিলেশের ব্যক্তিগত সচিব অনিতা সিংহের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন দুর্গা। ওই বৈঠক নিয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের কর্তারা বা দুর্গা-কেউই মুখ খোলেননি। সরকারি সূত্রে খবর, কেন তাঁকে ওই মসজিদের দেওয়াল ভাঙতে হয়েছিল তা অনিতাকে জানান দুর্গা। ২০০৯ সালের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ২০তম স্থান অধিকার করেছিলেন প্রাক্তন সেনাকর্তার মেয়ে দুর্গা। গত সেপ্টেম্বর মাসে নয়ডার বিডিও আইএএস অফিসার অভিষেক সিংহকে বিয়ে করার পরে নয়ডাতেই সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব নেন তিনি। দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে শুরু করেন দুর্গা।
তাঁর লড়াইয়ের দিকে এখন তাকিয়ে গোটা দেশই। |
পুরনো খবর: দুর্গার লড়াইয়ে তুলনা আসছে মীরা-দময়ন্তীরও
|
|