সংসদের বাদল অধিবেশনে আর্থিক সংস্কারের পথে আরও কয়েক কদম এগোতে চাইছে মনমোহন-সরকার। এই অধিবেশনেই বিমা ও পেনশন বিল পাশ করানোর জন্য বিজেপি নেতৃত্বকে রাজি করাতে আজ সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি ও যশবন্ত সিন্হার সঙ্গে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। নীতিগত ভাবে বিজেপি আর্থিক সংস্কারের বিরোধী না হলেও কার্যক্ষেত্রে তারা মনমোহন সরকারকে কতটা সাহায্য করবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। সেই ইঙ্গিত করেই আজ চিদম্বরমের সঙ্গে বিরোধী নেতাদের বৈঠকের পর বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন বলেছেন, “অর্থমন্ত্রীর কিছু কিছু প্রস্তাবে আমাদের সম্মতি রয়েছে। কিন্তু সমস্ত প্রস্তাবে একমত নই।”
বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ঘাটতি কমাতে সম্প্রতি একাধিক ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা আরও বেশি করে খুলে দিয়েছে মনমোহন সরকার। বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসাতেও বিদেশি লগ্নির শর্ত শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু বিমা বা পেনশনের ক্ষেত্রে সংসদের অনুমতি ছাড়া বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো সম্ভব নয়। দু’টি ক্ষেত্রেই বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশে নিয়ে যেতে চাইছে ইউপিএ সরকার। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিজেপি বেঁকে বসায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হার নেতৃত্বাধীন অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোয় আপত্তি তুলেছে। বিমা বিল সেই ২০০৮ থেকে সংসদে আটকে রয়েছে। পেনশন তহবিল পরিচালন সংস্থাগুলিতেও বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে বিজেপির। কিন্তু বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ঘাটতি কমাতে কেন্দ্রীয় সরকার যে কোনও উপায়ে আরও বিদেশি মুদ্রা আসার দরজা খুলতে চাইছে। কারণ, তা হলেই লোকসভা নির্বাচনের আগে অর্থনীতিকে কিছুটা হলেও চাঙ্গা করার কৃতিত্ব দাবি করতে পারবেন ইউপিএ তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বিজেপি সেই সুযোগটাই দিতে চাইছে না কংগ্রেসকে। প্রধান বিরোধী দলের অভিযোগ, মনমোহন সরকার দেশের অর্থনীতির সব দোষ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে। আর বোঝাতে চাইছে বিদেশি লগ্নি এলেই সব রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু আসলে ঘরোয়া সমস্যাগুলিই সামলাতে পারছেন না মনমোহন-চিদম্বরম। অর্থনীতির ভিত দুর্বল হয়ে পড়াতেই অন্যান্য রোগ প্রকট হয়ে উঠেছে। এই প্রশ্নে সরকারকে আরও চাপে ফেলতেই সংসদের চলতি অধিবেশনে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চেয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ। এ বিষয়ে বামেরাও বিজেপির পাশে রয়েছেন। আজ লোকসভার স্পিকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকে সুষমা স্বরাজ ও গুরুদাস দাশগুপ্ত এক সুরে দাবি তুলেছেন, টাকার দামের পতন, মূল্যবৃদ্ধি এবং আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক হোক। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই তাঁকে কটাক্ষ করে গুরুদাস বলেন, “আমেরিকা হয়তো আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নাম নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করতে পারে। কিন্তু দেশের অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে তারা ডলারের ঝুলি নিয়ে এগিয়ে আসবে না।” বিজেপি মুখপাত্র মীনাক্ষি লেখির অভিযোগ, “ওয়ালমার্ট ও টেসকো-র মতো বহুজাতিক সংস্থাগুলির চাপে পড়েই কেন্দ্রীয় সরকার খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির শর্ত শিথিল করছে।”
চিদম্বরম অবশ্য আশা করছেন, পেনশন বিলটি অন্তত পাশ করিয়ে নেওয়া যাবে। কারণ পেনশন বিলে শুধু বলা হয়েছে, বিমা ক্ষেত্রে যে পরিমাণ বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেওয়া হবে, পেনশন ক্ষেত্রেও তা-ই হবে। এর পরে বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির সীমা বাড়ানোর চেষ্টা হবে। কিন্তু সমস্যা হল, বিমা ক্ষেত্রেই যদি
বিদেশি লগ্নির দরজা আরও খোলা না যায়, তা হলে পেনশন বিল পাশ করিয়েই বা কী লাভ হবে, সেই প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। আজ চিদম্বরমের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও বিরোধীদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “এর আগের দু’তিনটি অধিবেশনে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। ফলে প্রচুর সংসদীয় কাজ জমে গিয়েছে। সরকার সব বিষয়েই আলোচনা করতে রাজি।”
|