|
|
|
|
পাহাড় দিয়ে মমতাকে জব্দ করার বাসনা নেই কেন্দ্রের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পাহাড়ের অশান্তি সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই থাকতে চাইছে মনমোহন সরকার। শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই নয়, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের হিংসাত্মক আন্দোলন থেকে সরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও নয়াদিল্লি ইতিবাচক ভূমিকাই নিতে চায়।
গত কাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে নিজেই ফোন করে মমতার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, গোর্খা আন্দোলনকারীরা উৎসাহিত হয়, এমন কোনও ভূমিকা কেন্দ্রের নেওয়া উচিত নয়। ঘটনা হল, পাহাড়ের পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে, এমন কোনও পদক্ষেপের ঘোর বিরোধী ইউপিএ শীর্ষ নেতৃত্বও। শিন্দে বলেছেন, “কারওই নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া উচিত নয়। মোর্চা নেতাদের কাছেও পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ করছি।” কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, তৃণমূল এখন আর ইউপিএ-র শরিক নয়। মমতাও বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তথা কংগ্রেসকে আক্রমণ করছেন। কিন্তু তা
বলে দার্জিলিঙের প্রশ্নে মমতার সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার কোনও উদ্দেশ্য কংগ্রেস বা ইউপিএ
সরকারের নেই। এআইসিসি-র এক নেতার কথায়, “আমরা খুব ভাল করেই জানি, সেটা আগুন নিয়ে খেলা হবে। কারণ, কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতেও এই ধরনের পৃথক রাজ্যের দাবি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মোর্চাকে উস্কে দিয়ে মমতাকে অস্বস্তিতে ফেলতে গেলে অসম বা মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীদেরও একই সমস্যায় পড়তে হবে।”
বাস্তব চিত্রটাও ঠিক তা-ই। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য অসমেই একাধিক পৃথক রাজ্যের দাবিতে হিংসাত্মক আন্দোলন শুরু হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আজ দিল্লিতে এসে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন তিনি। তেলেঙ্গানার সিদ্ধান্তের ধাক্কাই যে এখন তাঁকে সামলাতে হচ্ছে, সে কথা স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন গগৈ। মহারাষ্ট্রেও বিদর্ভের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। আজ থেকে যেমন মোর্চা যন্তরমন্তরে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেছে, একই ভাবে বিদর্ভ যৌথ অ্যাকশন কমিটির সদস্যরা সোমবার থেকে যন্তরমন্তরে বসবেন। এক দলকে উৎসাহ দিলে অন্য আন্দোলনগুলিও যে তীব্রতা পেয়ে যাবে, সে বিষয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের মনে কোনও সন্দেহ নেই।
আর সেই কারণেই শিন্দে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম থেকে শুরু করে দিগ্বিজয় সিংহরা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তেলেঙ্গানার সঙ্গে অন্যান্য ছোট রাজ্যের আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রথম রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনই তেলেঙ্গানার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিল। শিন্দে বলেন, “নেহরুর আমল থেকেই অনেক বার চেষ্টা হয়েছে ওই দু’টি এলাকাকে একসঙ্গে রাখার। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। সেই জন্যই পৃথক রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” এই যুক্তিই অবশ্য কাজে লাগাতে চাইছে মোর্চা। তাদের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি যন্তরমন্তরের বিক্ষোভ মঞ্চ থেকে বলেন, “আমরা পশ্চিমবঙ্গের বিভাজন চাইছি না। রাজ্য পুনর্গঠনের কথা বলছি। কারণ দার্জিলিং কোনও দিনই পশ্চিমবঙ্গের অংশ ছিল না। ১৯৮৬ সালে বামফ্রন্ট সরকার যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল, তাতেই বলা হয়েছে, দার্জিলিং ও তরাই ছিল সিকিম ও ভুটানের অংশ।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, শুক্রবার বিকেল থেকে মোর্চা নেতারা দিল্লিতে থাকলেও শনিবার রাত পর্যন্ত তাঁরা কংগ্রেসের কোনও নেতা বা মন্ত্রীর দেখা পাননি। আজ সকালে এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের কাছে দরবার করেন তাঁরা। রোশন জানান, পওয়ার জানিয়েছেন তিনি অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলবেন দার্জিলিঙের সাংসদ যশোবন্ত সিংহের সঙ্গে। এর পর অবশ্য যশোবন্তের সঙ্গেও কথা বলেন মোর্চা নেতারা। কিন্তু সনিয়া গাঁধী থেকে কংগ্রেসের প্রায় সব নেতা-মন্ত্রীর কাছে তাঁরা বৈঠকের সময় চেয়ে রাখলেও ডাক আসেনি। রবিবার সকালে কংগ্রেস নেতা সি পি জোশী দেখা করতে পারেন বলে তাঁদের আশা।
তবে কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাজ্য সরকারের পাশে থাকলেও মোর্চা নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা দেখাই করবেন না, এমন কোনও মনোভাবও নেওয়া হচ্ছে না। মমতা প্রশ্ন তুলেছেন, বারবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা কেন বিমল গুরুঙ্গ-রোশন গিরিদের সঙ্গে দেখা করছেন? শিন্দের বক্তব্য, “যে কেউই ক্ষোভ, দাবিদাওয়ার কথা জানাতে এলে আমরা তাঁদের কথা শুনব। সকলেরই শান্তিপূর্ণ পথে বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকার রয়েছে।” তবে মোর্চা নেতাদের তাঁরা কোনও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে মানতে চাননি শিন্দে। মমতা ও তাঁর দলের নেতারা সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা মোর্চা নেতাদের কাছে দার্জিলিংকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিন্দে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি সমর্থন করে রোশন গিরিও আজ বলেছেন, “আমাদের কেউ এই ধরনের কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি।” |
পুরনো খবর: কেন্দ্র যেন ওদের উৎসাহ না দেয়, শিন্দেকে মমতা |
|
|
|
|
|