নিছক মোদী-বিরোধিতা নয়, মুখপাত্রদের নির্দেশ রাহুলের
রেন্দ্র মোদীকে কোনও রকম ব্যক্তিগত আক্রমণ করা চলবে না। ফরমান জারি করলেন রাহুল গাঁধী। রাহুল নিজে কখনও মোদীর নাম উচ্চারণ করেন না। কিন্তু বিভিন্ন চ্যানেলে গিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্ররা কে কত মোদী-বিরোধিতা করতে পারেন, যেন তারই প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছেন। তাই সম্প্রতি এক বৈঠকে রাহুল দলীয় মুখপাত্রদের নির্দেশ দিয়েছেন, চ্যানেলগুলির ফাঁদে পা দিয়ে ভোট প্রচারকে অহেতুক মোদী-বিরোধিতায় পরিণত করবেন না। শুধু দলীয় মুখপাত্র নয়, গুজরাতের কংগ্রেস নেতাদেরও মোদীর বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ শানাতে নিষেধ করেছেন তিনি। কংগ্রেস নেতৃত্বের একটা বড় অংশের মতে, গুজরাত কেন গোটা দেশের মডেল হতে পারে না, সে কথাটাই সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার। সেই অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক আলোচনার বদলে নিছক মোদী-বিরোধিতায় কংগ্রেসের লাভের চেয়ে লোকসান বেশি। কংগ্রেস সহ সভাপতি হিসেবে রাহুল গাঁধী অজয় মাকেনের নেতৃত্বে একটি প্রচার কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। ওই কমিটিতে রয়েছে দলের ৩৬ জন মুখপাত্র। কমিটির বৈঠকে রাহুল মুখপাত্রদের বলেছেন, দলের নীতি কী, সবার আগে সেটা আপনাদের জানতে হবে। পড়াশোনা করতে হবে পার্টি লাইন নিয়ে। কোনও রকম প্রস্তুতি ছাড়াই চ্যানেলের আলোচনায় যাওয়া চলবে না।
অজয় বলেন, “আমরা কোনও ব্যক্তির ব্যর্থতা নয়, তথাকথিত গুজরাত মডেলের অসারত্বকেই তুলে ধরতে চাইছি। গুজরাতের যে বিকাশ মডেল নিয়ে বিজেপি ব্যাপক ভাবে প্রচারে নেমেছে, সেই মডেল কেন গ্রহণযোগ্য নয়, সেটাই আমরা যুক্তি দিয়ে দেখাব। প্রমাণ করে দেব যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রের সহায়তা ছাড়া একটি রাজ্যের উন্নয়ন হতে পারে না।”
ঘটনা হল, রাহুল নিজে মোদীর নাম এড়িয়ে চললেও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা দিগ্বিজয় সিংহ এর আগে বহু বার গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন। অজয় মাকেনের কমিটি তাঁর মুখেও লাগাম দিতে বলেছে। কমিটির অন্যতম সদস্য কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি বলেন, “মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করা হবে কি না, তা নিয়ে বিজেপিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অথচ, রাহুল গাঁধীকে নিয়ে আমাদের দলে কোনও মতপার্থক্য নেই। ভোট-প্রচারকে আমরা মোদী বনাম রাহুল করার সুযোগ দেব কেন? বরং ব্যক্তি আক্রমণের বদলে অর্থনীতির যুক্তি দিয়ে গুজরাত মডেলের ফানুস ফাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।”
কংগ্রেসের এই কৌশলের জবাবে কী বলছে বিজেপি?
মোদীর প্রশ্নে মেরুকরণের রাজনীতি তাদেরও পছন্দ নয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে মনমোহন সিংহের সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগ পিছনের সারিতে চলে যাবে বলে আশঙ্কা দলীয় নেতাদের একাংশের। সেই কারণে মোদী এর আগে রাহুলের সমালোচনা করলেও ইদানীং সেই আক্রমণ থেকে সরে এসেছেন।
পাশাপাশি, এই একই কারণে মোদীকে প্রচারের প্রধান মুখ করলেও জুলাই মাসেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা থেকে সরে এসেছে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার। আসলে তারা এখন বুঝতে চাইছে যে, মোদীকে আক্রমণ করে কংগ্রেস যদি রাজনৈতিক মেরুকরণের পথে চলে যায়, তা হলে লাভ কার। দলের একাংশের মতে, হিন্দুত্ব প্রচারের মূল বিষয় হলে হিন্দি বলয়ে মেরুকরণের ফায়দা পাওয়া যাবে। কিন্তু তাতে নিরাপত্তার অভাববোধের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সার্বিক ভাবে কংগ্রেসের দিকে চলে যাবে কি না, সেটা বুঝে নিতে চাইছে বিজেপি।
কিন্তু কংগ্রেস মনে করছে, লোকসভা ভোটের লড়াইটা মোদী বনাম রাহুল হলেও মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা পুরোপুরি মুছে ফেলা যাবে না। উল্টে অহেতুক তার দায় রাহুলের ঘাড়ে এসে পড়বে। সেটা মোটেই কাম্য নয়। ঝকঝকে, তরতাজা মুখ হিসেবেই রাহুলকে লোকসভা ভোটে তুলে ধরতে চায় কংগ্রেস।
মোদী প্রশ্নে মেরুকরণের সম্ভাবনা নিয়ে বিজেপি ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সংস্থাকে দিয়ে গোপনে সমীক্ষা করাচ্ছে। একই সমীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। তারাও দেখতে চায় মোদী-বিরোধিতায় কতটা লাভ আর কতটাই বা লোকসান।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.