রাজ্যের বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করায় উত্তরপ্রদেশ সরকার তাঁকে সাসপেন্ড করেছে বলে অভিযোগ। সেই আইএএস অফিসার দুর্গাশক্তি নাগপালকেই ‘সাহসী’ বলল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে আজ দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, “আমরা মনে করি, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন ওই অফিসার। নয়ডায় অবৈধ খনন রুখতে তিনি ২৪টি ডাম্পার আটক করেছেন। ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছেন। বিশেষ ফ্লাইং স্কোয়াড তৈরি করেছেন।” অবৈধ খনন রুখতে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছেই এ বার তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
অখিলেশ যাদব |
দুর্গাশক্তি নাগপাল |
দুর্গার সাসপেনশনের বিষয়ে অবশ্য হস্তক্ষেপ করতে চায়নি আদালত। বিষয়টি সরকার ও সরকারি কর্মচারীর এক্তিয়ারভুক্ত বলে এড়িয়ে গিয়েছে তারা। যদিও অনেকেই মনে করছেন, সরকার তথা রাজনৈতিক দলের বিরাগভাজন হয়ে আমলাদের পেশাগত ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়ার নজির এ দেশে নতুন নয়। উত্তরপ্রদেশেই তার অনেক উদাহরণ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেই পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের সময়ে রাজ্য সরকারের ব্যাখ্যার সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটেছিলেন তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধান দময়ন্তী সেন। তাঁকে বদলি হতে হয়েছিল। সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান মীরা পাণ্ডের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বৈরথ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। মীরাদেবীকে অবশ্য সরতে হয়নি। তবে মমতা বলেছিলেন, ক্ষমতা থাকলে তিনি মীরাকে সরিয়ে দিতেন।
দুর্গাশক্তির ক্ষেত্রে যদিও সমাজবাদী পার্টি নেতা নরেন্দ্র ভাট্টি খুল্লমখুল্লা ফিল্মি কায়দায় দাবি করেছেন, ওই আইএএস অফিসারটিকে সরাতে তাঁর মাত্র ৪১ মিনিট সময় লেগেছে। ভাট্টির একটি ভিডিও নিয়ে আজ দিনভর শোরগোল হয়েছে। অভিযোগ, ওই ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, গৌতম বুদ্ধ নগরের একটি মিছিলে ভাট্টি বলছেন, “সকাল সাড়ে দশটায় মুলায়ম সিংহ যাদব আর অখিলেশ যাদবের সঙ্গে আমার কথা হয়। ৪১ মিনিটের মধ্যে লখনউ থেকে সাসপেনশন অর্ডার চলে এল। ওই মহিলা এত খারাপ আচরণ করলেন যে, চল্লিশ মিনিটও টিঁকতে পারলেন না!” ভাট্টি অবশ্য পরে বলেন, “সংবাদমাধ্যম বানানো একটি ভিডিও প্রচার করছে। আইএএস অফিসারকে সাসপেন্ড করার আমি কে?” ভাট্টি যা-ই বলুন, নবীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ কিন্তু বেশ বিপাকে পড়েছেন। তাঁর পূর্বসূরি মায়াবতী ’৯৫ সালে ৫৭৮ জন এবং ’৯৭ সালে ৭৭৭ জন আইএএস-কে এক ধাক্কায় বদলি করেছিলেন। অখিলেশ ক্ষমতায় এসেছেন এক বছর তিন মাস। এর মধ্যেই তিনিও বদলি করেছেন ৩০ জন আইএএস-কে। সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট দুর্গাশক্তির সাসপেনশনের যুক্তি হিসেবে অখিলেশ অবশ্য একটি নির্মীয়মাণ মসজিদের দেওয়াল ভাঙার অভিযোগ তুলেছিলেন। বালি কেলেঙ্কারির অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন তিনি। যদিও জেলাশাসক তাঁর রিপোর্টে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি খারিজ করে দেন। একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্যের মুখ্যসচিব জাভেদ উসমানিও দুর্গার সাসপেনশনের পক্ষে ছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশে তাঁকে সাসপেনশনের আদেশে সই করতে হয়। এমনকী ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠ (ঘটনাচক্রে যিনিও উত্তরপ্রদেশ ক্যাডারের আইএএস) দুর্গাশক্তির সাসপেনশন তুলে নেওয়ার পক্ষে। আজই মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করেন দুর্গাশক্তি। রাতের দিকে খবর, জটমুক্তির পথ খুঁজতে অখিলেশও মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন।
ভাট্টির বিতর্কিত ভিডিও প্রকাশ হতেই অখিলেশের ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেস পড়েছে কিছুটা উভয়-সঙ্কটে। লোকসভা ভোটের আগে দিল্লির নাকের ডগায় নয়ডা-গাজিয়াবাদ এলাকার বালি দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য স্তরে নীরব থাকলে কংগ্রেসের রাজনৈতিক লোকসান। তাই রাজ্য স্তরে কংগ্রেসের মুখপাত্র দ্বিজেন্দ্র ত্রিপাঠী সরব হয়েছেন সপা নেতা আজম খান ও নরেশ অগ্রবালের বিরুদ্ধে। কিন্তু হাইকম্যান্ডের বিরোধিতা একেবারেই দায়সারা। এর মূলত দু’টি কারণ। প্রথমত, সংসদের আসন্ন অধিবেশনে একাধিক বিল পাশ করাতে মুলায়ম সিংহের সমর্থন জরুরি। দ্বিতীয়ত, দুর্গার বিষয়টি মুলায়ম-অখিলেশ সংখ্যালঘু আবেগের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। স্বভাবতই কংগ্রেসকে সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের আক্রমণের লক্ষ্য মূলত বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদী। সে ব্যাপারে তারা দিগ্ভ্রষ্ট হতে চায় না।
এই কারণেই দিগ্বিজয় সিংহ প্রথমে এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, অখিলেশ সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। এই ধরনের ঘটনা না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আর আজ কংগ্রেস মুখপাত্র ভক্তচরণ দাস বলেন, তাঁদের দল ধর্মস্থান ভাঙা সমর্থন করে না। কিন্তু যে ভাবে সৎ আমলাকে হেনস্থা হচ্ছে, সেটাও নিন্দনীয়। কিন্তু শীর্ষ স্তরের কংগ্রেস নেতারা কেউই তেমন সরব প্রতিবাদ করতে চাইছেন না।
তবে বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের কাছে জবাবদিহি করতে হবে কেন্দ্র তথা কংগ্রেসকেও। বালি মাফিয়াদের রুখতে ক’টা এফআইআর হয়েছে, ক’টা ডাম্পার আটক করা হয়েছে, দুর্গাশক্তির সাসপেনশনের পরে কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা ১৯ অগস্টের মধ্যে রাজ্য এবং কেন্দ্রকে জানাতে বলেছে হাইকোর্ট।
দুর্গাশক্তির লড়াইকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। আর দুর্গার অন্যতম শক্তি জেলাশাসকের রিপোর্ট। যাতে বলা হয়েছে যে এলাকার ধর্মস্থান ভাঙা নিয়ে বিতর্ক, সেখানে দুর্গা পৌঁছনোর পরেও কোনও অশান্তি হয়নি। দুর্গার দাপটে কি হার মানবে অসুর-মাফিয়া? সেটাই এখন দেখার!
|