গত মরসুমে বহু বিতর্কের পর বাগানে ওঠার পর টোলগের সঙ্গে যে লাল-হলুদ শীর্ষকর্তার মানসিক দূরত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছিল আকাশ-পাতালে।
সাদা-কালো জামা আর ঝকমকে টুপি মাথায় মহমেডানের টোলগে ততক্ষণে খোশমেজাজে আড্ডা দিতে বসে গিয়েছেন পুরনো ক্লাবের পুরনো সতীর্থ মেহতাব, খাবরাদের সঙ্গে। তার মধ্যেই আনন্দবাজারকে বললেন, “ভারতে ইস্টবেঙ্গলই আমাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। এই ক্লাবে অনেক সুখস্মৃতি রয়েছে। মেহতাবদের সঙ্গেই তো কত ট্রফি জিতেছি। সেই ইস্টবেঙ্গলের জন্মদিনে ডাকলে আসব না, হয় না কি?”
‘দ্যাখ ক্যামন লাগে’ মার্কা চমকের সঙ্গে নস্টালজিয়া, আবেগ, উত্তেজনা, সম্প্রীতি, সংকল্প। চুম্বকে এটাই লক্ষ্মীবারের সন্ধ্যায় ইস্টবেঙ্গল দিবস।
নমুনা? ইস্টবেঙ্গল দিবসের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘ভারত গৌরব’ সম্মান নেওয়ার মুহূর্তে কেঁপে গেল অরুণ ঘোষের হাত। বললেন, “ইস্টবেঙ্গল শুধুই ক্লাব নয়। একটা পরিবার।” যার হাত দিয়ে দেশের সর্বকালের সেরা বাঙালি স্টপারকে সম্মান প্রদান, অনুষ্ঠানের সেই প্রধান অতিথি লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় তখন বলছেন, “মোহনবাগান গ্যালারিতে বসে দেখতাম অরুণ ঘোষকে কাটানো যেত না। ভাবতাম কখন ও ভুল করবে। অরুণ ঘোষের মতো ফুটবলারকে পদ্মশ্রী দেওয়ার জন্য আজ থেকেই দাবি তুলতে হবে।”
|
যে সংকল্প আরও উসকে দিলেন সমরেশ চৌধুরি। লাল-হলুদের সারা জীবনের স্বীকৃতির সম্মান হাতে ময়দানের পিন্টু বললেন, “এই সম্মান হৃদয়ে বাঁধিয়ে রাখব।” সঙ্গে খেলোয়াড় জীবনের সেই চল্লিশ গজের নিঁখুত পাস দেওয়ার মতোই জোশে মেহতাবদের কাছে সমরেশের আবেদন, “মুখ্যমন্ত্রীও আই লিগ চায়েন। তোমরা এ বার আই লিগটা দাও। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তোমাদের নিয়ে গিয়ে বলব, এই ন্যান আই লিগ।”
সারা জীবনের সম্মানের আর এক প্রাপক গোলকিপার অবনী বসুর চোখ যদি আবেগে চিকচিক করে। তা হলে ফালোপার হাত থেকে বর্ষসেরার পুরস্কার নিয়ে সৌমিক দে-র মুখে গর্বের হাইভোল্টেজ হাসি। সমরেশ চৌধুরির চেয়েও বেশি হাততালি পড়ল তাঁর জন্য।
উত্তেজনা? তা-ও আছে। ক্লাব সভাপতি প্রণব দাশগুপ্ত তাঁর বক্তৃতায় তিন বার ‘আই কাপ’ বলে বসলেন। হবে আই লিগ। আর সচিব কল্যাণ মজুমদার পাক্কা আঠারো মিনিটের লিখে আনা বক্তৃতা দিয়ে গেলেন। ছিল রসিকতাও। নতুন ব্রাজিলীয় কোচ ফালোপার কাছে ক্লাব সভাপতির আব্দার, “আই কাপ দাও, তোমাকেই সভাপতি করে দেব।” অনুষ্ঠানের মাঝেই মোহনবাগানের পেল্লাই পুষ্পস্তবক নিয়ে এলেন ফুটবল কমিটির সদস্য দেবাশিস রায়। প্রেসিডেন্টের মন্তব্য, “এটাই তো সম্প্রীতি। ধন্যবাদ মোহনবাগানকে।” সঙ্গে টিপ্পনী, “ফুল দিয়ে ওরা যেন নিশ্চিন্ত না থাকে। মাঠে কিন্তু ওদের হারাবই।”
মঞ্চে ততক্ষণে জার্সি বিতরণ শুরু হয়েছে অর্ণব, লালরিন্দিকাদের। পনেরো নম্বর জার্সি পাওয়া মোগা তো উত্তেজনায় বাড়ি যাওয়ার পথে গুরপ্রীতদের গাড়িতে উঠে নাচতেই শুরু করে দিলেন। সঙ্গে চ্যালেঞ্জ, “চিডি আর আমার জুটিকে আটকানো এ বার মুশকিল হবে।”
সব দেখেশুনে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ‘বাবাইদা’ আমেরিকো-ও বলে গেলেন, “ইস্টবেঙ্গল জনতা পুরো ফুটবল পাগল।”
|