সোনালি রঙের কোঁকড়ানো চুল। দোহারা চেহারা। অনেক বেশি প্রাণবন্ত।
হঠাৎ দেখলে মনে হবে যেন টাইম মেশিনে চড়ে তিন বছর আগের টোলগে ওজবে ফিরে এসেছেন কলকাতায়।
মহাবিতর্ক, ক্লান্তি এবং গ্লানি ভুলে পুনর্জন্মের খোঁজে। আর হয়তো সে জন্য শুক্রবার ভরদুপুরে নতুন ক্লাব মহমেডানে পা রেখেই টোলগের স্মৃতিতে ভেসে উঠল ইস্টবেঙ্গলের নাম, “গত বছর চোট-আঘাত আর ডার্বি বিতর্কের জন্য ভাল খেলতে পারিনি। মহমেডানে নতুন করে শুরু করতে চাই। চেষ্টা করব যাতে ইস্টবেঙ্গলে খেলে আসা সেই স্বপ্নের দিনগুলোকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারি।” পরিষ্কার করে কিছু বলতে না চাইলেও, ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার আক্ষেপ এক বছর পরেও চোখ-মুখে ফুটে উঠল অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারের।
শেষবার ১৯৮১ সালে স্বপ্নের দল গড়েছিল মহমেডান। তখন প্রসূন-প্রশান্ত, বিদেশ-মানস, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সমরেশ চৌধুরি, অলোক মুখোপাধ্যায়-সহ ময়দানের আরও অনেক মহাতারকাকে তুলে দলবদলের বাজারে হইচই ফেলে দিয়েছিল সাদা-কালো ব্রিগেড। বত্রিশ বছর পর কি আবার সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে? |

নতুন ক্লাব, নতুন স্বপ্ন। শুক্রবার মহমেডানে পুনর্জন্মের যাত্রা শুরু টোলগে ওজবের।
পাশে অসীম বিশ্বাস, গৌরাঙ্গ দত্ত ও বুধুরাম টুডু। ছবি: উৎপল সরকার
|
উত্তরটা ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখা থাকলেও টোলগে কিন্তু বলছিলেন, “এ বার ইস্টবেঙ্গলের পুনর্মিলন উৎসব হচ্ছে মহমেডানে। প্রথম বছর আমি যাদের সঙ্গে খেলেছি, তাদের অনেকেই এই দলে আছে। পেন ওরজি, মেহরাজউদ্দিন, চরণ রাই, বুধিরাম টুডু, পাইতে...। শুনেছি সেই একাশি সালের পরে মহমেডান কোনও বড় ট্রফি জেতেনি। আমি জানি না এ বার সেই খরা কাটবে কি না। তবে যা টিম হয়েছে, তাতে আই লিগে প্রথম চারে শেষ করা উচিত।”
দু’মাসের ছুটিতে বান্ধবী সেরাপকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং বাহামাসে চুটিয়ে ঘুরেছেন টোলগে। বাড়তি নজর দিয়েছেন ফিটনেসের দিকে। আসলে কলকাতা ছেড়েছিলেন ‘নাদুসনুদুস’ টোলগে। ফিরেছেন ‘মাচোম্যান’ টোলগে! কী রহস্য? অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার বললেন, “সকালে দেড়-দু’ঘণ্টা হাঁটা আর নিয়ম করা ডায়েট। বিশ্বাস করুন, এই ছুটিতে আর কোনও বাড়তি ট্রেনিং করা হয়নি।” তিনি মাঠে কতটা ফিট সেটা অবশ্য শনিবার প্রথম দিনের অনুশীলনে অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। টোলগে কলকাতায় এসে গেলেও তাঁর বান্ধবী আসছেন আরও দু’সপ্তাহ পরে। শোনা গেল, সেরাপ ব্যস্ত বিয়ের কেনাকাটায়। টোলগে নিজেও অবশ্য স্বীকার করলেন, “পরের বছর আমরা বিয়ে করছি। মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছে। সেরাপ নিজেই সব দেখাশোনা করছে।”
নতুন ক্লাবের বিদেশি সতীর্থদের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা না হলেও, সবার সঙ্গে নিয়মিত ই-মেলে যোগাযোগ রেখেছেন টোলগে। এমনকী কলকাতায় আসার আগে কোচ আবদুল আজিজ বুলা-র সঙ্গেও একপ্রস্ত কথাবার্তা হয়েছে তাঁর। এ দিন মহমেডান ক্লাব তাঁবুতে বসে টোলগে বলছিলেন, “পেনের সঙ্গে আমার অনেক আগে থেকেই বন্ধুত্ব। ওর সঙ্গে আমার নেট-এ যোগাযোগ তো আছেই, লুসিয়ানোর সঙ্গেও এক দু’বার কথা হয়েছে। জোসিমারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ও তেমন ইংরেজি বোঝে না।” শুধু নতুন ক্লাবের সতীর্থরাই নন, তাঁর প্রাক্তন কোচ ট্রেভর মর্গ্যানের সঙ্গেও ফোনে এবং ইমেলে যোগাযোগ আছে টোলগের। তাঁর কথায়, “এক সপ্তাহ আগে ট্রেভরের সঙ্গে কথা হয়েছে। আইএমজি লিগে কোচ হওয়ার চেষ্টা করছে ও।”
তিন বছরে কলকাতার তিন প্রধানেই খেলা হয়ে গেল টোলগের। কিন্তু মোহনবাগানের নামটা উঠতেই হাসিখুশি মুখটা নিমেষের মধ্যে শুকিয়ে গেল। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “এখন আমি অনেক রিল্যাক্সড। আর কোনও মন্তব্য করতে চাই না।” |