ফুলবাগানে কিশোরীকে আটকে রেখে দিনের পর দিন যৌন নিগ্রহের অভিযোগে মামলা রুজুর দশ দিন পেরিয়ে গেল। কিন্তু এখনও অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার আসলে কে, তা বার করতে পারলেন না লালবাজারের গোয়েন্দারা। ওই ব্যক্তিকে সত্যিই চিহ্নিত করা যাচ্ছে না, নাকি পরিচয় জেনেও তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে, সে প্রশ্ন মাথা চাড়া দিয়েছে পুলিশেরই অন্দরে।
কিশোরীটির দাখিল করা এফআইআরে যে ছ’জনের নামে অভিযোগ, তাঁদের পাঁচ জন ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। একমাত্র ‘মিলন’ নামে কলকাতা পুলিশের জনৈক অফিসার এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। মেয়েটি তাঁর নাম বললেও পদবি জানাতে পারেনি।
এ দিকে মামলায় অভিযুক্ত দুই আইনজীবী লাভলি চাড্ডা ও সব্যসাচী রায়চৌধুরী-সহ চার অভিযুক্তকে বুধবার শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হয়। কোটর্র্ তাঁদের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে। লাভলির বাড়িতেই মেয়েটি ক’মাস কাজ করেছিল। তার সৎ বাবাকে অবশ্য ৭ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অরুণ রাই। অভিযুক্তদের কৌঁসুলি মহম্মদ সাজিদ দাবি করেন, অভিযোগকারিণীর বয়ান ও তদন্তে বিস্তর ফারাক রয়েছে। সরকারের তরফে এ দিন মেয়েটির গোপন জবানবন্দি আদালতে পেশ করা হয়। “তাতে সে ধৃতদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এনেছে।” বলেন সরকারপক্ষের কৌঁসুলি সোমা বিশ্বাস। কিন্তু ‘মিলনের’ কী হল?
অন্যতম অভিযুক্ত সব্যসাচীবাবুর সঙ্গে গত ২৩ জুলাই আনন্দবাজারের তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই অফিসারের পুরো নাম, পদমর্যাদা, এমনকী বর্তমান কর্মস্থলও জানিয়েছিলেন। এ-ও দাবি করেছিলেন, ‘মিলনবাবু’ হামেশাই লাভলির বাড়িতে যেতেন। যদিও গোয়েন্দা-সূত্রের দাবি: সব্যসাচীবাবু যেমন জেরার মুখে ‘মিলন’ সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, তেমন লাভলি ও তাঁর সঙ্গী সুব্রত মিশ্রও বলেছেন, এ ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানেন না।
লালবাজারের খবর: এমতাবস্থায় গত সপ্তাহে অভিযোগকারিণীকে মিলন নামে কলকাতা পুলিশের ছ’-সাত জন অফিসারের ছবি দেখানো হয়, যার মধ্যে সব্যসাচীবাবুর উল্লিখিত ব্যক্তির ছবিও ছিল। কিন্তু মেয়েটি কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। তবে পুলিশেরই আর এক সূত্রের বক্তব্য, ছবিগুলো ওঁদের চাকরিতে ঢোকার সময়কার, অন্তত বছর কুড়ি পুরনো। তা থেকে বর্তমান চেহারার লোকটিকে খুঁজে বার করা মুশকিল বলে সূত্রটি স্বীকার করছে।
লালবাজার-কর্তৃপক্ষ অবশ্য তা মানতে নারাজ। এক শীর্ষ কর্তার দাবি, “এখনকার ছবিই দেখানো হয়েছে। মেয়েটি কাউকে শনাক্ত করতে না-পারলে কী করা যাবে? নিরপরাধ কেউ যাতে ফেঁসে না-যায়, তো সেটাও দেখতে হবে!” যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “আমরা মেয়েটিকে কয়েক জনের ছবি দেখিয়েছি। সে কাউকে চিনতে পারেনি।” তা হলে উপায়?
“আমরা অন্য ভাবে এগোচ্ছি।” বলেছেন যুগ্ম কমিশনার।
|