ফুলবাগান এলাকায় এক নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্তদের চার জন গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে মিলন নামে যে-পুলিশ অফিসারের নাম উঠে এসেছে, শুক্রবার পর্যন্ত তাঁকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। গোয়েন্দা বিভাগের দুই শীর্ষ কর্তা মাঠে নেমেও মিলন-রহস্য ভেদ করতে পারেননি। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্ত ওই মিলন সরকারি কর্মী। কিন্তু তাঁর পুরো নাম কী, তিনি সরকারের কোন দফতরে কাজ করেন তা নিয়ে পুলিশের কাছে ধোঁয়াশা থেকেই গিয়েছে।
রাজারহাটের ওই নাবালিকা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অধীনে রয়েছে গত প্রায় চার মাস। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই ১৯ জুলাই ফুলবাগান থানায় যৌন নিগ্রহের লিখিত অভিযোগ জানায় স্বশাসিত সংস্থা শিশুকল্যাণ সমিতি। তার দু’দিন পরে পুলিশ ছ’জনের নামে এফআইআর করে তদন্তে নামে। ২৪ জুলাই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু এফআইআরে উল্লিখিত মিলন নামে ওই পুলিশ অফিসার এবং মেয়েটির সৎবাবাকে এ দিন পর্যন্ত গ্রেফতার করা যায়নি।
লালবাজারের খবর, মিলন আসলে কে, দু’দিন ধরে দফায় দফায় ধৃতদের জেরা করেও তা বুঝে উঠতে পারেননি গোয়েন্দা অফিসারেরা। কলকাতা পুলিশে মিলন নামে যত জন কাজ করেন, তাঁদের সকলের ছবি দেখানো হয়েছে অভিযোগকারিণী নাবালিকাকে। কিন্তু সে কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি বলে পুলিশের দাবি। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মেয়েটি জানিয়েছে, মিলন এক জন যুবক। সে ওই নামেই নিজের পরিচয় দিত। কিন্তু পুলিশ তাঁর হদিস করতে পারছে না। মেয়েটি ভুল নাম বলছে কি না অথবা মিলন নাম নিয়ে অন্য কেউ তার উপরে নির্যাতন চালিয়েছে কি না, সবই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এই ঘটনায় ধৃত আইনজীবী সব্যসাচী রায়চৌধুরী এবং লাভলি চাড্ডাও নাকি জেরায় জানিয়েছেন, তাঁরা ওই নামে কাউকে চেনেন না।
তদন্তকারী দলের এক অফিসারের বক্তব্য, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে মিলন এক জন সরকারি কর্মী। তবে তিনি কোথায় কর্মরত, তা জানা যায়নি। কেন মিলনকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না? জবাবে এক গোয়েন্দাকর্তা জানান, ওই নাবালিকার বিবরণ অনুযায়ী মিলনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তবে তদন্তে এমন কিছু তথ্য উঠে আসছে, যা ওই নাবালিকার অভিযোগের সঙ্গে মিলছে না। কিন্তু মেয়েটির উপরে যে যৌন অত্যাচার চালানো হত, সেই ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
সব্যসাচী ও লাভলিকে এ দিনও দফায় দফায় জেরা করা হয়। কলকাতা পুলিশের গেয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ এবং ডিসি (ডিডি-২) সুমনজিৎ রায় বিকেলে লাভলিকে জেরা করেন। পুলিশের দাবি, জেরায় খোলামেলা ভাবে অনেক কথা জানালেও লাভলি দাবি করেছেন, তিনি মিলন নামে কাউকে চিনতেন না। পুলিশি সূত্রের খবর, পরিবহণ ব্যবসার সূত্রে লাভলির সঙ্গে অনেক পুলিশ অফিসারের পরিচয় ছিল। তবে লাভলির বাড়িতে তাঁদের কারও যাতায়াত ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। লাভলির অভিযোগ, যে-হেতু তিনি ওই নাবালিকার বেশ কিছু আপত্তিকর কাজে বাধা দিয়েছিলেন, তাই তাঁর নামে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য লাভলির কথা এখনই বিশ্বাস করতে নারাজ।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, লাভলি সব ঠিক তথা দিচ্ছেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। ধৃত আইনজীবী সব্যসাচীকে জেরা করেও এখনও বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি বলে পুলিশের দাবি।
|