ভাড়া না-বাড়ানোর ‘জনপ্রিয়’ নীতি আঁকড়ে থেকে আখেরে যে প্রতিষ্ঠানেরই ক্ষতি হয়ে চলেছে, এত দিনে তা টের পেয়েছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। তাই সেই নীতি থেকে সরে এসে কলকাতার মেট্রো রেলে ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন কেন্দ্রীয় রেল-প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। শুক্রবার দুপুরে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ পরিদর্শনে গিয়ে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। বললেন, “আমার ধারণা, এ বার ভাড়া বাড়বে।”
দেশের অন্যান্য রাজ্যের মেট্রো-পরিষেবার তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে কলকাতা। যাত্রীদের এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এ শহরে মেট্রো রেল সম্প্রসারণ হল। যাত্রীর সংখ্যা এক লাফে কয়েক গুণ বাড়ল। কিন্তু পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন হল না। হাতেনাতে যার ফল পাচ্ছেন যাত্রীরা। এমনকী, যাত্রীদের দাবি, আর্থিক সমস্যায় যদি মেট্রো রেলের রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা হয়, তবে ভাড়া বাড়াক রেল দফতর।
তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে রেল দফতর থাকাকালীন তারা ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে ছিল না। রেলের অন্যান্য সম্পদ ব্যবহার করেই পরিষেবার মানোন্নয়নের দাবি করেছিল তারা। বাস্তবে যা কখনওই হয়নি। দীর্ঘ দিন পরে কংগ্রেসের হাতে রেল দফতর এসেছে। তারা সাধারণ রেলের ক্ষেত্রে যাত্রী-ভাড়া বাড়িয়েছে। অথচ, মেট্রো রেলের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বিশেষত, কলকাতার মেট্রো। |
কেন মেট্রোর ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না কংগ্রেস? কোনও সমস্যা রয়েছে কি? জবাবে রেল-প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ভাড়া বাড়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের কোনও সমস্যা নেই। ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে বোর্ড। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমার ধারণা, এ বার ভাড়া বাড়বে। তেমনই প্রস্তাব রয়েছে।”
মেট্রো রেল দফতর সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরে ভাড়া না বাড়ার ফলে সব খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে। পাশাপাশি, নোয়াপাড়া থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত মেট্রো রেল পরিষেবায় সমস্যাও অনেক বেড়েছে। উপরন্তু মেট্রো পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে যাত্রীদের। মেট্রোর রেক থেকে টিকিট পাঞ্চিং ব্যবস্থা-সহ সব পরিকাঠামোর অবস্থাই এখন বেহাল।
মেট্রো-কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এখন ১০০ টাকা আয় করতে গিয়ে মেট্রোর খরচ (অপারেটিং রেশিও) হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকার বেশি। এ ভাবে চললে মেট্রোর সব পরিকল্পনাই আটকে যাবে। রেল বোর্ডও আর খরচ করতে চাইবে না। আস্তে আস্তে মেট্রোকে অলাভজনক সংস্থা হিসাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হবে। একই সুরে কথা বলেছেন রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর। সুভাষবাবুর বক্তব্য, “অপারেটিং রেশিও-র যেখানে এই হাল, সেখানে অবিলম্বে মেট্রোর ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার। অধীরবাবু যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে মেট্রোর ভবিষ্যৎ কিছুটা উজ্জ্বল হবে।”
তবে মেট্রো একটি সরকারি সামাজিক পরিষেবা। ফলে এই সংস্থা ব্যবসায়িক হতে পারে না। লাভজনক বা অলাভজনক হওয়ার প্রসঙ্গ এর ক্ষেত্রে খাটে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতির শিক্ষক অভিরূপ সরকার। তাঁর কথায়, “এই সংস্থাকে যেহেতু লাভজনক হিসাবে ধরা হবে না, তাই ভাড়া বাড়ানোর সময়ে কতটা বাড়ানো হবে, সেই বিষয়টিকে মাথায় রাখা দরকার।” তবে পরিষেবা টিকিয়ে রাখতে সব কিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে বলে তাঁর মন্তব্য। তা হলে তৃণমূলের সময়ে ভাড়া বাড়ানো হল না কেন? এ প্রশ্নের জবাবে অভিরূপবাবু বলেন, “ওই সময়ে রেলের আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল, তা জানা নেই। তাই ওই সময়ে কেন ভাড়া বাড়ানো হল না, তা আমি বলতে পারব না।” |