বাস দেওয়ার জন্য বসে রয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। কিন্তু পারমিট নিতে আসছেন না বাস-মালিকেরা। গত এক বছরে এই চিত্রটা পাল্টায়নি। অগত্যা মালিকদের বাস চালানোয় উৎসাহী করে তুলতে রুট-বিন্যাস এবং তার খুঁটিনাটি পাল্টানোর কথা ভাবতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার।
কী সেই পন্থা? রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “রাজ্যের বেসরকারি বাসের ৮৫টি এবং মিনিবাসের ৮১টি নথিভুক্ত রুটে কত বাস থাকবে, তা শেষ বার ঠিক হয়েছে ২০০৩ সালে। তার পরে কিন্তু জনসংখ্যা এবং বাসের প্রয়োজনীয়তার চিত্রটা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে।” ওই কর্তার মতে, “বর্তমানে এমন অনেক রুট রয়েছে, যেখানে বর্তমান ভাড়াতেও যাত্রীসংখ্যা বেশি হওয়ার জন্য লাভ করা সম্ভব। সেই সব রুটে বাস নামাতে চাইছেন মালিকেরা। কিন্তু সেই সব রুটে কোনও বাসের সংখ্যা খালি নেই। তাই বাসমালিকদের আর্জি আমরা খারিজ করে দিতে বাধ্য হচ্ছি। অন্য দিকে, যে সব রুটে খালি জায়গা রয়েছে বা বাস কম রয়েছে, সেই সব রুট গত চার-পাঁচ বছর ধরেই রুগ্ণ। সেখানে মালিকেরা বাস নামাতে চাইছেন না।” কলকাতার মোটরযান বিভাগের সচিব অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, “এই সমস্ত অভিযোগ ইতিমধ্যেই আমাদের নজরে এসেছে। বোর্ড মিটিংয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছি।”
রাজ্য সরকার মোটরযান বিভাগের কাছ থেকে এই অভিযোগ পাওয়ার পরেই জনপ্রিয় রুটগুলিতে ‘ফ্লিট স্ট্রেন্থ’ বা বাসের সর্বোচ্চ সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। এখানেই শেষ নয়, কলকাতা শহরে বাসের সংখ্যা বাড়াতে নতুন ধরনের কিছু রুট তৈরি করার কথাও ভাবছে রাজ্য সরকার। সেগুলি হল, মেট্রো স্টেশনকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট রুট। পরিবহণ দফতরের ওই কর্তা বলেন, “মেট্রো রেল ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের যানবাহনের চাহিদায় পরিবর্তন হয়েছে। অনেক যাত্রী মেট্রোর রুটের কাছে না থাকলেও বিভিন্ন জায়গা থেকে মেট্রো স্টেশনে আসেন। সে কথা মাথায় রেখে আমরা রুটবিন্যাস করার কথা ভাবছি। যেমন, ই এম বাইপাসের রুবি থেকে কালীঘাট মেট্রো স্টেশন, তারাতলা থেকে রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো, যাদবপুর থেকে রবীন্দ্র সরোবর বা দক্ষিণেশ্বর থেকে দমদম মেট্রো স্টেশন।” পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে মেট্রোকে কেন্দ্র করে এ রকম প্রায় ৭০টি রুট চিহ্নিত করা হয়েছে।
সরকারি হিসেবে, বেসরকারি বাসের ৮৫টি রুটে ৪৪৯৬টি বাস থাকার কথা। অন্য দিকে, মিনিবাসের ৮১টি রুটে ২১৩৯ বাস থাকার কথা। সরকারি হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এর মধ্যে ৬৫৪টি বাস ছিল না। একই ভাবে মিনিবাসের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৩৬৭। গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বেসরকারি বাসের ৬৫৪টি খালি জায়গায় বাস নামানোর ‘অফার লেটার’ (অর্থাৎ, বাস চালানোর অনুমোদন) বেরিয়েছে মাত্র ২৩২টি। অন্য দিকে, মিনিবাসের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ৩৬৭-এর মধ্যে মাত্র ৪৭।
যদিও বাসমালিকদের হিসেবে এই সংখ্যাটি আরও বেশি। তার কারণ, বাসমালিকেরা বলছেন, অনেকের কাছে পারমিট থাকলেও লাগাতার ক্ষতির মুখে পড়ে তাঁরা আর বাস নামাচ্ছেন না। এ ছাড়া, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাসের ‘অফার লেটার’ পেয়েছেন, এমন অনেক মালিক এখনও পর্যন্ত বাস রাস্তায় নামাননি। ফলে রাস্তায় বাসের সংখ্যা গত এক বছরে বলার মতো বাড়েনি বলেই মনে করছে রাজ্য পরিবহণ দফতর।
সরকারের নতুন পন্থাকে স্বাগত জানান বাসমালিকেরা। তাঁদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্স-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই প্রস্তাব খুবই ভাল। আমরা ছোট রুট তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলাম সরকারকে। তাতে কম জ্বালানি খরচ হওয়ায় লাভ বাড়ে। মেট্রো স্টেশন কেন্দ্রীক এমন রুট হলে ভালই হবে। এমনকী, সরকারি বাসের যেই লাভজনক রুটগুলি বন্ধ, সেই সব রুটেও বাস চালাতে চাইছি আমরা।”
দ্রুত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে বলে দাবি পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের। তিনি বলেন, “আমরা তিন মাসে এই সব সিদ্ধান্ত কার্যকর করার চেষ্টা করছি। লাভজনক বেসরকারি রুটে বাস বাড়ানোর সিদ্ধান্তও দ্রুত নেব।” |