সেই ইফতার পার্টিও আছে। দায়িত্বশীল প্রধান উদ্যোক্তার আগাগোড়া তদারকিও আছে। গত তিন বছরের মতো তাঁর ‘দিদি’র আগমনও আছে। তবু মনে হল এ বছর কেমন যেন তাল কেটে গেল।
গত তিন বছর ধরে গার্ডেনরিচের আলিফনগরের এই ইফতার পার্টিতে এসেই মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাকে মঞ্চে ডেকে নিতেন ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুষ্ঠু ভাবে ইফতার পার্টি আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ দিতেন কলকাতা পুরসভার ১৫ নম্বর বরোর তৎকালীন চেয়ারম্যান মুন্নাকে। সেই মুন্না, যিনি ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচে হরিমোহন ঘোষ কলেজে গণ্ডগোলের সময়ে পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরীর খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত। |
গার্ডেনরিচ-কাণ্ডই যে এ বছর হাওয়া বদলে দিয়েছে, শুক্রবার তা বেশ বোঝা গেল। মঞ্চে এসে এক বারও মাইক্রোফোনে হাত দিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। পাশে বসে থাকা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে সারক্ষণ নিচু গলায় কথা বলে গেলেন তিনি। আসার আধ ঘণ্টা পর হাত নেড়ে মঞ্চ থেকে নেমে চলেও গেলেন। যা দেখে এক তৃণমূল নেতা বললেন, “মুন্নাভাই কোনও দিনই মঞ্চে উঠতেন না। তবে দিদি প্রতি বছর এসে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে প্রথমেই মুন্নাভাইকে ডেকে ইফতার পার্টির ভাল বন্দোবস্তের জন্য ধন্যবাদ জানাতেন। এ বার তো দিদি কোনও কথাই বললেন না।”
বন্দর এলাকার নেতারাই জানালেন, ২০১০ সাল থেকে আলিফনগরের ওই ইফতার পার্টির দায়িত্বে রয়েছেন মুন্নাভাই। বরো চেয়ারম্যান হওয়ার পর এই দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। আর রমজান মাসের মাঝে এক দিন ওই ইফতার পার্টিতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এলাকায় খোঁজখবর করে জানা গেল, গত চার দিন ধরে ইফতার পার্টি নিয়ে উদয়াস্ত খেটেছেন মুন্নাভাই। এ দিনও ম্যারাপ বাঁধা থেকে খাওয়াদাওয়া সব বন্দোবস্ত নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করেছেন। এমনকী গার্ডেনরিচ কাণ্ডের পর যে তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল বলে দলীয় সূত্রেরই দাবি, সেই ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গেও (যিনি ঘটনাচক্রে এলাকার বিধায়কও) ইফতার পার্টি নিয়ে এই ক’দিনে একাধিক বার ফোনে আলোচনা করেছেন মুন্না।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী আসার আগেও শশব্যস্ত হয়ে সব দিক সামলাচ্ছিলেন সবুজ পাঞ্জাবি পরা মুন্না। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ সুব্রত বক্সী সহ-সব অথিতিকে মঞ্চে তুলে দিয়ে গেলেন। জানতে চাইলেন, ‘‘অ্যারেঞ্জমেন্ট ঠিক হয়েছে কি না।” |
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আসার পর থেকেই মঞ্চের আশপাশে আর দেখা গেল না মুন্নাভাইকে। যত ক্ষণ মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ছিলেন, মঞ্চ থেকে প্রায় ৫০ ফুট দূরে মূল গেটের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। আর তখন মঞ্চে নানা বিষয় তদারক করলেন মুন্নার বিরোধী গোষ্ঠীর তৃণমূল কাউন্সিলর সামসুজ্জামান আনসারির ছেলে তাবরেজ আনসারি। অথিতিদের খাওয়াদাওয়ার দেখভালও তিনিই করলেন। মঞ্চ থেকে নেমে গেট দিয়ে বেরোনোর সময়ে চলন্ত গাড়ি থেকে মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে হাতজোড় করে নমস্কার করছিলেন। গেটের এক পাশে দাঁড়িয়ে মুন্নাভাইও মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা নমস্কার করলেন। ওই এক বারই মুন্নার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর চোখাচোখি হল। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পর ফের বদলে গেল মুন্নাভাইয়ের শরীরী ভাষা। ফের সবার হাত ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, “অ্যারেঞ্জমেন্ট ঠিক হুয়া তো?”
সব দেখে বন্দর এলাকার এক তৃণমূল নেতা মন্তব্য করলেন, ‘‘ববিদার (ফিরহাদ) সঙ্গে মুন্নাভাইয়ের সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু দিদি?” |