বিদেশ-বিভুঁইয়ে টানা সাত দিন ছিলেন জলদস্যুদের কবলে। মুক্তির সাত দিন পরে, বুধবার কলকাতার বাড়িতে ফিরলেন এমটি কটন জাহাজের ক্যাপ্টেন শিশির ওয়াহি। তাঁর স্ত্রী জানান, ক্যাপ্টেন এতটাই ক্লান্ত, বিধ্বস্ত যে, পারিবারিক বৃত্তের বাইরে কারও সঙ্গেই এ দিন দেখা করেননি। গত ১৫ জুলাই পশ্চিম আফ্রিকার গ্যাবনের কাছে জেন্টিল বন্দর থেকে শিশিরবাবুদের মালবাহী জাহাজটিকে অপহরণ করেছিল জলদস্যুরা। ২২ জুলাই তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা মুক্তি পান। ওই জাহাজের ২৩ জন ভারতীয় নাবিকও দেশে ফিরে এসেছেন।
শিশিরবাবু এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন। তাঁর পারিবারিক সূত্রের খবর, ঘানা থেকে জোহানেসবার্গ হয়ে প্রায় ৪৫ ঘণ্টা বিমান-সফর করে মঙ্গলবার রাতে মুম্বইয়ে পৌঁছন এমটি কটন জাহাজের ভারতীয় নাবিকেরা। সেখান থেকেই তাঁরা নিজের নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে যান।
|
শিশির ওয়াহি |
ওই জাহাজটি তুরস্কের ‘গেডেন লাইন’ নামে একটি সংস্থার। জলদস্যুরা জাহাজটিকে কব্জা করার পরে গেডেন লাইনের পক্ষ থেকে ওই দেশের বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শুরু হয় জলদস্যুদের সঙ্গে কথাবার্তাও। কিন্তু দস্যুরা জাহাজের ফোন অকেজো করে দেওয়ায় ক্যাপ্টেন বা নাবিকেরা বাড়ির সঙ্গে কথা বলতে পারছিলেন না।
গত ২২ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মুম্বইয়ে ওই জাহাজ সংস্থার শাখা অফিস থেকে শিশিরবাবু এবং অন্য নাবিকদের বাড়িতে ফোন করে জানানো হয়, জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে গিয়েছে। জাহাজের সব নাবিকই নিরাপদে আছেন। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, জলদস্যুরা যখন ক্যাপ্টেন ও নাবিকদের মুক্তি দেয়, সেই সময় জাহাজটি নাইজেরিয়ার নিকটবর্তী সমুদ্রে ছিল। দস্যুরা জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পরেই নাবিকেরা জাহাজের দু’টি ফোন সারিয়ে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
এ দিন সকালে শিশিরবাবু ছাড়াও ওই জাহাজে থাকা পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ জন নাবিক কলকাতায় ফেরেন। ক্যাপ্টেনকে আনার জন্য পরিবারের লোকজন এবং খুবই কাছের কয়েক জন বন্ধু বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটিয়েছেন শিশিরবাবু। তাঁর স্ত্রী প্রীতিদেবী বলেন, “টানা প্রায় ৪৫ ঘণ্টার বিমান-সফরের ধকল গিয়েছে। উনি খুবই ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। ফেরার পরে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা কাটানো ছাড়া ওঁর ফিরে আসা নিয়ে আনন্দানুষ্ঠানও সে-ভাবে হয়নি।” তবে গৃহকর্তা ফিরে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই স্বস্তি পেয়েছে পুরো পরিবার। ক্যাপ্টেনের মেয়ে রিচা বলেন, “অনেক দিন পরে বাবা বাড়ি ফেরায় আমরা খুব আনন্দে আছি।”
জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং সব নাবিক নিরাপদে বাড়ি ফেরায় নিশ্চিন্ত গেডেন লাইন সংস্থার মুম্বই শাখা অফিসের ক্যাপ্টেন বৈভব দলভিও। এ দিন তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল, জাহাজের সকলকে নিরাপদে বাড়ি ফেরানো। সকলেই ফিরে এসেছেন। আমরা সব্বাই খুশি।”
|