পরিকাঠামোর পঙ্গুত্বেই এমন দুর্দশা মেট্রোয়
যান্ত্রিক গোলমাল এখন মেট্রোর প্রাত্যহিকতার অঙ্গ। মাসের বেশির ভাগ দিনই নানা সমস্যায় ভোগায় বিভিন্ন রেক। অবস্থা এমনই যে, মেট্রোয় উঠে যাত্রীরা কার্যত দুর্ভোগে কখন পড়বেন, তার সময় গোনেন। এক দৌড়ে গন্তব্যে পৌঁছনো মেট্রোর যাত্রীরা প্রায় ভুলেই গিয়েছেন।
কিন্তু কেন ঠিকঠাক চলছে না মেট্রো?
মেট্রোর কর্মী ও ইউনিয়নের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ভাড়া না বাড়ায় মেট্রো রেলের ভাঁড়ারের অবস্থা সঙ্গীন। অভিযোগ, ১০০ টাকা আয় করতে মেট্রো-কর্তৃপক্ষকে এখন খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকা। পাশাপাশি পরিকাঠামো ও প্রশাসনিক অবস্থাও তথৈবচ। বছর ঘুরতে চলল পূর্ণ সময়ের জেনারেল ম্যানেজারের পদটি শূন্য পড়ে রয়েছে। তিন মাসের বেশি খালি রয়েছে চিফ ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের পদটিও। খালি পড়ে ৪০টির মতো মোটরম্যান বা চালকের পদও। নেই বাতানুকূল রেক মেরামতির ওয়ার্কশপ। নেই-এর তালিকায় ঠাঁই হয়েছে আরও অনেক কিছুরই। এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই মনে হচ্ছে, কলকাতার মেট্রো এখনও যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সেটাই যথেষ্ট!
মেট্রোকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থে পরিকাঠামো ঠিক না করে তাড়াহুড়ো করে মেট্রোর যাত্রাপথ সম্প্রসারণ করায় বিপত্তি আরও বেড়ে গিয়েছে। যাত্রাপথ বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী পরিকাঠামো বাড়ানো হয়নি। গড় আয়ু শেষ হয়ে যাওয়া মান্ধাতা আমলের রেক দিয়েই এখনও পরিষেবা চলছে। যে ক’টি বাতানুকূল রেক আনা হয়েছে, সেগুলিও বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করার কথা নয়। রেলের পরিভাষায় ওই ট্রেনগুলিকে বলে ‘প্রোটো টাইপ’। অর্থাৎ, এই রেকগুলি পরীক্ষামূলক ভাবে দৌড় করিয়ে দেখা হয় কী কী অসুবিধা রয়েছে। তার পরে সেগুলি পাল্টে নতুন রেক তৈরি হওয়ার কথা। অথচ পরীক্ষামূলক ওই রেক দিয়েই দিনের পর দিন ট্রেন চলছে। দেখার কেউ নেই।
মেট্রোর মেন্স ইউনিয়নের সভাপতি দিলীপ মুখোপাধ্যায় এই ঘটনার জন্য মেট্রোর বেহাল পরিকাঠামোকেই দায়ী করেছেন। দিলীপবাবুর দাবি, তিনি ২০০৯ সাল থেকে পরিকাঠামোর উন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেননি বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য, “এমনিতেই সাধারণ রেকগুলির আয়ু শেষ। আর বাতানুকূল রেক মেরামত করার জন্য ন্যূনতম পরিকাঠামোও মেট্রোর হাতে নেই। নেই কর্মীও।
এমনকী, জোনের শীর্ষ পদগুলিও ফাঁকা। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।” পরিকাঠামোর দিকে অবিলম্বে রেল বোর্ড নজর না দিলে যে কোনও দিন গোটা পরিষেবাটাই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে বলে দিলীপবাবুর আশঙ্কা। মেট্রো-কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, জোনের দু’টি শীর্ষ পদই ফাঁকা, তা বলাটা ঠিক নয়। জেনারেল ম্যানেজার ও চিফ ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পদে আপাতত দায়িত্ব সামলানোর লোক রয়েছেন।
তবে এত ‘নেই’-এর মাঝে দু’টি সুখবরও রয়েছে। প্রথমত, রেল বোর্ড এ বার কলকাতা মেট্রোর ভাড়া বাড়ানোর কথা বলছে। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী সম্প্রতি এ কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি সারা দেশ জুড়ে যিনি এই ট্রেন চলাচলের বিষয়টি দেখভাল করেন, রেল বোর্ডের সেই মেম্বার ট্রাফিকের পদটি দীর্ঘদিন শূন্য থাকার পরে এ বার তা পূরণ করা হয়েছে। ওই পদে দায়িত্ব নিয়েছেন দেবীপ্রসাদ পাণ্ডে।
ভাড়া বাড়ানো ও শীর্ষ কর্তার শূন্য পদ পূরণ করলেই মেট্রো ভাল চলবে? রেল বোর্ডের প্রাক্তন কর্তা সুভাষ ঠাকুরের কথায়, “যা হচ্ছে, নিশ্চয়ই ভাল কথা। কিন্তু বেশ কিছু সংখ্যক ভাল রেক এবং কলকাতা মেট্রোর ট্রেন চলাচলের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের শূন্য পদে নিয়োগ না করা পর্যন্ত যাত্রীরা কখনওই ভাল পরিষেবা পাবেন না।”
কবে মেট্রো রেলের ভাড়া বাড়ে, আর কবেই বা পরিকাঠামো ঠিক করে মেট্রো সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে পারে— সেটাই এখন দেখার।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.