নিকিতা দত্ত-খুনের ঘটনায় প্রতিবাদ, ক্ষোভের আগুন জ্বলছেই।
দোষীদের ফাঁসি-সহ এই এলাকার মহিলাদের নিরাপত্তার অবনতির অভিযোগ তুলে বুধবার ১২ ঘণ্টা ফালাকাটা ধর্মঘটের ডাক দিল এসইউসিআই। মঙ্গলবার দলের নেতা পীযূষ শর্মা বলেন, “এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি-সহ সমাজবিরোধী দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিকিতার খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানুষ আমাদের এই ধর্মঘটে সাড়া দেবেন।” মঙ্গলবার এক দল ছাত্র খুনিদের ফাঁসির দাবিতে দেড় ঘণ্টা ধরে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে রাখায় অসম-শিলিগুড়ি যাতায়াতের বহু গাড়ি আটকে পড়ে। বেলা সওয়া তিনটে নাগাদ ফালাকাটা থানার পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌছনোর পর ছাত্রদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। তৃণমূল ধর্মঘটকে সমর্থন করেনি। তৃণমূল নেতা সুরেশ লালা বলেন, “পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। যারা খুন করেছে তাদের শাস্তি হোক সবাই চাই। তবে ফাঁসির দাবিতে জনজীবন অচল করার ঘটনা সমর্থন করা যায় না।” |
পুলিশ সূত্রে খবর, নিকিতাকে গুলি করে খুন করার ছক তৈরি হয় ১৮ জুলাই। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গোপালকে সঙ্গে নিয়ে খুলু মুর্শিদাবাদের নিমতিতায় যান। সেখানে বিহারের মুঙ্গেরের তৈরি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি কিনে ২০ জুলাই ফালাকাটায় ফেরেন তাঁরা। সে দিন থেকে কোমরে পিস্তল গুঁজে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী নিকিতাকে খুন করার জন্য সুযোগ খুঁজছিল খুলু। তবে প্রতিবেশী খুলুর উপদ্রবের কারণে নিকিতার তার বাবা মেয়েকে চোখের আড়াল করছিলেন না। তবে রবিবার সকালে জরুরি কাজ পড়ায় কারখানায় চলে গিয়েছিলেন নিকিতা দত্তের বাবা কানুবাবু। নিকিতাকে একাই টিউশন পড়তে যেতে দেখে খুলু। নিকিতা কখন ফিরবে তার জন্য পাড়ায় অপেক্ষা করছিল সে। নিকিতার পড়া শেষ হবার পর সে সুযোগকে কাজে লাগায় খুলু ও গোপাল। পুলিশের জেরার মুখে খুলু জানায়, নিকিতাকে খুন করার পর তার আত্মহত্যার পরিকল্পনা ছিল। তার সঙ্গে নিকিতার কয়েক মাস ধরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, মাস দু’য়েক সে খুলুকে আর পাত্তা দিচ্ছিল না। তা সে মেনে নিতে পারেনি। সেই ক্ষোভে নিকিতা ও নিজেকে শেষ করতে ওই পিস্তল কিনে আনে। রবিবার পাড়ার ওই গলিতে নিকিতার সঙ্গে বচসা হয় খুলুর। আচমকা চল্লিশোর্ধ্ব খুলু কোমর থেকে পিস্তল বের করে নিকিতার মাথায় ঠেকিয়ে গুলি চালায়। গুলির শব্দ ও নিকিতাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যেতে দেখে নিজের মাথায় গুলি করার সাহস হারিয়ে ফেলে সে। প্রাণ ভয়ে গোপালের মোটরবাইকে চেপে গা ঢাকা দেয় খুলু। অবশ্য পুলিশকে বলেছে, “সে সময় ঘাবড়ে গেলেও জেল থেকে ছাড়া পেলে আমি নিজেকে শেষ করব।” অন্য দিকে, নিকিতাকে খুন করার জন্য খুলু তাকে নিয়ে পিস্তল কিনতে গিয়েছিল বলে জানত না বলে দাবি করেছে অপর অভিযুক্ত গোপাল আচার্য। গোপালের কথায়, “ভোটের জন্য দরকার বলে খুলু আমাকে সঙ্গে নিয়ে পিস্তল কিনে নিয়ে আসে। তবে পিস্তল দিয়ে যে সে নিকিতাকে গুলি করবে তা জানতাম না।” ফালাকাটা শহরে পাড়ার মধ্যে এ ভাবে এক ছাত্রী খুন হওয়ায় শহরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে পুলিশি ভূমিকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গোপাল ও খুলুর মতো দুষ্কৃতীরা কী ধরনের অপরাধমূলক কাজ করছে ও তারা কোথা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করে চলেছে সে বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ। |