৩০ বছরের বেশি সময়ের পুরনো বামদুর্গ গুড়িয়ে দিল তৃণমূল। সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির পাশাপাশি তাদের হাতছাড়া হল পঞ্চায়েত সমিতিও।
এই এলাকা থেকে টানা নির্বাচিত বামফ্রন্টের আরএসপি বিধায়ক। রাজ্যে পরিবর্তনের ঝড়েও বাম প্রার্থী সাড়ে ১৬হাজার ভোটের ব্যবধানে তৃণমূলকে আটকে দিয়েছে। পঞ্চায়েতের ফল দেখে তাই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় আরএসপি বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী দাবি করেন, “মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পর থেকে সন্ত্রাস করছে তৃণমূল। প্রার্থীদের জোর করে তুলে নেওয়া হয়েছে। এর পর আর কী আশা করতে পারি।” তাঁদের যুক্তি, নির্বাচনের দিন বাম সমর্থক ভোটারদের আটকে দেওয়া হয়েছে। ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ ও প্রশাসনকে জানিয়ে লাভ হয়নি। তাই হারতে হয়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্ব সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। দলের ময়নাগুড়ি-২ সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতি শশাঙ্ক বসুনীয়া বলেন, “মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাই জয় এসেছে।” তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের অনেক আগে থেকে কোনও আসনে জিততে কত ভোট দরকার সেই হিসেব করা হয়। সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া হয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, গ্রামস্তরের বামেদের একটা বড় অংশ তৃণমূলে যোগ দেয়। অনেকে নির্বাচনে বামেদের পক্ষে ভোট করানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিতেন। তারাই তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন। ময়নাগুড়িতে গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৩৪টি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছে ৪৬, আরএসপি ৩০ ও ফরওয়ার্ড ব্লক ৩ আসন। সিপিএমের হাতছাড়া ৬৮টি আসন। আরএসপি-র হাতছাড়া ১৬টি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের ৪ টি আসন। অন্য দিকে তৃণমূলের দখলে ছিল মাত্র ১৩টি আসন। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ১৪৫টি। কংগ্রেস আসন বাড়াতে পারেনি। তাঁরা এবারও ৩টি আসন দখলে রেখেছে। পঞ্চায়েত স্তরে ৩৪টি আসন বৃদ্ধি পেয়েছে এ বার। বামফ্রন্টের শরিকদের পক্ষে নতুন আসনগুলি দখল করা দবরের কথা নিজেদের দখলে থাকা আসনগুলিও তারা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৬টি পঞ্চায়েতের ১২টি বামফ্রন্ট দখল করেছিল। ১টি ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। এ বার বামফ্রন্টের হাতছাড়া হয়েছে ৮ গ্রাম পঞ্চায়েত। তৃণমূল দখল করেছে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত। শুধু তাই নয় পঞ্চায়েত সমিতির ৪২ আসনের মধ্যে সিপিএমের ছিল ৩৩টি, আরএসপির ৬টি। একটি করে আসন ছিল তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বিজেপি’র। পঞ্চায়েত সমিতির আসন বেড়ে হয়েছে ৪৮টি। সাপটিবাড়ি, ধর্মপুর, বার্নিশ, মাধবডাঙ্গা ১ ও ২, পদমতি ১ ও ২, চূড়াভাণ্ডার পঞ্চায়েতে বামেরা হেরেছে। পঞ্চায়েত সমিতিতেও তাঁদের ভরাডুবি হয়েছে। তৃণমূল ৩৬টি আসন দখল করেছে। সিপিএমকে ৮ এবং আরএসপি ৪। |