তৃণমূল সমর্থকদের হাতে কংগ্রেস সমর্থকের খুনের অভিযোগের ঘটনার জেরে উত্তেজনা বাড়ছে আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকে। সোমবার রাতে পাতলাখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব শিমলাবাড়িতে ওই ঘটনায় গুরুতর জখম তিন কংগ্রেস সমর্থকের দুই জন কোচবিহার এবং একজন শিলিগুড়িতে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ৩ ঘন্টা দোষীদের কড়া শাস্তির দাবিতে আলিপুরদুয়ার-ফালাকাটা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েতের ৯টি আসনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, সিপিএম, আরএসপি জোট করে প্রার্থী দেয়। একযোগে প্রচারও হয়। গণনার দেখা যায় তৃণমূল সাতটি, কংগ্রেস ও সিপিএম একটি করে আসন পেয়েছে। একটি আসনে কংগ্রেসের কাছে হেরে যাওয়ায় লাঠি, ধারাল অস্ত্র নিয়ে কংগ্রেস সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
আলিপুরদুয়ারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, “মৃতের নাম অমল বর্মন ওরফে বিমল (২৮)। গণেশ সরকার এবং প্রসেনজিৎ রায় নামের দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।” |
পূর্ব শিমলাবাড়িতে জয়ী কংগ্রেসের মামণি দেব রায়। তাঁর স্বামী সুশঙ্কর দেবে’র অভিযোগ, “রাত সাড়ে নটার দিকে আমাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের জন্য গণেশ সরকার-সহ ২০-২৫ জনের দল আসছিল। বাড়ি কাছাকাছি আসাতেই নিহত এবং জখমেরা ওদের আটকায়। পরে গণেশ বোতল ভেঙে অমলের পেটে ঢুকিয়ে দেয়। বাধা দিতে গেলে বাকি তিন জনের পেটে বোতাল ঢোকানো হয়।” হাসপাতালের বেডে শুয়ে স্বপন রায় বলেন, “পানের দোকানে খাওয়ার পর শুয়ে ছিলাম। চিৎকার শুনে বের হয়ে দেখি গণেশরা লাঠিসোটা নিয়ে জয়ী প্রার্থীর বাড়ির দিকে যাচ্ছে। কথা বলতে এগোতে ওঁরা হামলা করে।”
এ দিকে মৃতু্যর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামে। অমলের মা ননীবালা দেবী ঘনঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন। নিহতের দাদা ভোলা বর্মন বলেন, “ভাই পঞ্জাবে কাপড়ের কারখানায় কাজ করত। ভোটের জন্য বাড়ি এসেছিল। বাড়িতে শোওয়ার জায়গা কম থাকায় তাপসের দোকানে শুতে গিয়েছিল। আমরা কংগ্রেস করি। এই অপরাধে ভাইকে খুন করা হল।” এ দিন আলিপুরদুয়ার মহকুমা আদালতে তোলার সময় অভিযুক্ত গণেশ সরকার অবশ্য নিজেকে কংগ্রেস সমর্থক বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “খুনের ঘটনায় জড়িত নই। কংগ্রেস, সিপিএমে ও আরএসপি জোট করায় প্রতিবাদ করেছিলাম। তাই আমাকে ফাঁসানো হল।” অপর অভিযুক্ত প্রসেনজিৎ রায় অবশ্য নিজেকে তৃণমূল সমর্থক বলে দাবি করেন। গণেশের দাবি কংগ্রেস নেতারা উড়িয়ে দিয়েছেন। আদালতের সরকারি আইনজীবী মহম্মদ রফি জানান, ধৃতদের তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বিচারক। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “এলাকায় তৃণমূল নেতা প্রাক্তন প্রধান মনোরঞ্জন দে’র নেতৃত্বে সন্ত্রাসের রাজনীতি হচ্ছে। পুলিশ সমস্ত অভিযুক্তকে না ধরলে আমরা বড় মাপের আন্দোলন করব।” অভিযোগ অস্বীকার করে মনোরঞ্জনবাবু বলেন, “আমরা ৯টির মধ্যে ৭ আসন পেয়ে গিয়েছি। আমরা কেন গোলমাল করতে যাব? এ দিন অবরোধের সময় আমাদের বাইকে থাকা এক সমর্থককে তাড়া করে কংগ্রেসিরা। পালাতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় তিনি জখম হন।” |