অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব
নীতীশের প্রশংসায় শত্রুঘ্ন, দলীয় মুখপাত্রকে শোকজ
রোক্ষে মোদীর সমালোচনা করে দলনেতা হিসেবে আডবাণীর প্রাসঙ্গিকতার পক্ষে সওয়াল করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তিনি আর এক মোদী-বিরোধী, এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে দেখা করে জল্পনা উস্কে দিয়েছিলেন। আজ মোদীর প্রধান ও প্রবল বিরোধী নীতীশ কুমারকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম যোগ্য প্রার্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করে ‘বিহারিবাবু’ তথা বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা মোদী-বিতর্কের আঁচে ঘি ঢাললেন।
নীতীশের পথে হেঁটেই পাঁচ দিন আগে শত্রুঘ্ন বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী যিনি হোন না কেন, তাঁকে সকলকে নিয়ে চলতে হবে। বিজেপির কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর লালকৃষ্ণ আডবাণীর আশীর্বাদ প্রয়োজন। আজ বললেন, “নীতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য। যদি প্রয়োজন হয় এনডিএ-র তরফে নীতীশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘সেতু’ হিসেবে কাজ করতে আমি রাজি।” পটনার জয়প্রকাশ নারায়ণ বিমানবন্দরে শত্রুঘ্ন সাংবাদিকদের বলেন, “তবে প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে নিজের দল, সহযোগী দল এবং মানুষের সমর্থন প্রধান। নীতীশ প্রধানমন্ত্রী যদি হতে নাও পারেন তবু এই পদে তাঁর যোগ্যতা কিছুমাত্র খাটো হবে না।” নীতীশের নেতৃত্বে বিহারের উন্নয়ননেরও প্রশংসা করেন তিনি।
পটনায় সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা। ছবি: পিটিআই
আজ শত্রুঘ্নর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নীতীশ বলেন, “বিহারের উন্নয়ন নিয়ে শত্রুজি যে কথা বলেছেন তাতে অন্যদের অসুবিধা হচ্ছে কেন? যেটা তিনি ঠিক মনে করেছেন সেটাই বলেছেন, এর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।” তিনি আরও বলেন, “বিহারের বিশেষ মর্যাদার বিষয়টিও তিনি সমর্থন করেছেন।” পাশাপাশি, নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে অমর্ত্য সেনের মতামতকে শত্রুঘ্ন সিন্হা সমর্থন করার ব্যাপারে নীতীশ বলেন, “অর্মত্য সেন না বুঝে মন্তব্য করার মানুষ নন। শত্রুঘ্ন সিন্হাও অর্মত্য সেনের এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। প্রত্যেক বিহারবাসীর উচিত অমর্ত্য সেনের বক্তব্যকে সমর্থন করা।”
শুধু শত্রুঘ্নই নন, রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র এবং বিধান পরিষদের প্রাক্তন সদস্য রামকিশোর সিংহও মোদীর বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি আগামী লোকসভা নির্বাচনে সরকার গড়তে পারবে কি না তার উত্তরে গত কাল বিজেপি মুখপাত্র বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য যে সংখ্যা প্রয়োজন তা জোগাড় হবে কি না সন্দেহ আছে।” গুজরাতের উন্নয়নের মডেল নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রামকিশোর নীতীশের প্রশংসা করে বলেন, “নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বিহারে যে উন্নয়ন হয়েছে তা কম নয়। গুজরাতে আগের মুখ্যমন্ত্রীরাও উন্নয়ন করেছেন। এটা গুজরাতের ক্ষেত্রে আলাদা কিছু না।”
স্বাভাবিক ভাবেই শত্রুঘ্ন ও রামকিশোরকে নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন বিহার বিজেপি। এমনিতেই নীতীশ প্রশ্নে রাজ্য বিজেপি-র মধ্যে দু’টি ভাগ আছে। এই ধরণের ‘বিশৃঙ্খলা’ দলের মধ্যে বিভেদ আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা। শত্রুঘ্ন সম্পর্কে এখনই প্রকাশ্যে বিজেপি নেতারা মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে রামকিশোরকে দলীয় মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ও তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ধরিয়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব দলে একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডে বলেন, “রামকিশোর সিংহকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দল বিরোধী বক্তব্যের জন্য তাঁকে সাতদিনের মধ্যে শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।” মঙ্গল পাণ্ডে বলেন, “শোকজের জবাবে সন্তুষ্ট না হলে দল পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।”
কিন্তু শত্রুঘ্ন? রাজ্য নেতারা ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। বিজেপি-র দিল্লি নেতারা স্বীকার করছেন, শত্রুঘ্ন ‘লক্ষ্মণ রেখা’ অতিক্রম করেছেন। কিন্তু কেন করলেন? বিহারে জাতপাতের রাজনীতিতে ‘কায়স্থ’ শত্রুঘ্ন-র পায়ের তলার জমিটাই খুব নড়বড়ে। রাজ্যে মাত্র ১.৫ শতাংশ কায়স্থের বাস। এ ছাড়াও, পটনাসাহিব লোকসভা আসনের ভোটারদের জাত বিন্যাসে নীতীশের সমর্থন ছাড়া শত্রুঘ্ন কেন, কারও পক্ষেই জয় সহজে আসবে না। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ধারণা, পটনাসাহিবকে মাথায় রেখেই নীতীশকে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন ‘বিহারিবাবু’। বিষয়টি নিয়ে এখনই তাঁরা কোনও মন্তব্যে যাচ্ছেন না। আজ দল সভাপতি রাজনাথ সিংহ জানিয়েছেন, এখনও তিনি বিষয়টি ভাল করে জানেন না। পরে খতিয়ে দেখবেন।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.