|
|
|
|
বিহার বিজেপির সঙ্কটে নেতাদের
সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠক সঙ্ঘপ্রধানের
নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা ও নয়াদিল্লি |
মোহন ভাগবতের সঙ্গে আজ সকালে নাস্তা করে এলেন সঙ্কটে পড়া বিহার বিজেপি-র নেতারা। আর তার পরেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা। আর নীতীশ কুমার আজ ২০১৪-র রণকৌশল তৈরির বৈঠক সারলেন দলের সব বিধায়ক মন্ত্রীদের নিয়ে। তাঁর দল জেডিইউ-এর তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, নীতীশ রাজ্য বিজেপি-তে ভাঙন ধরানোর খেলায় নেমেছেন বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা একেবারেই সত্যি নয়।
জেডিইউ নেতা এবং কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহের কথায়, “বিজেপি-র জনা ৪২ বিধায়ক এবং আরজেডি-র ১৭ জন বিধায়ক তো আমাদের দলের দরজাতেই দাঁড়িয়ে আছেন। জেডিইউ চাইলে বিজেপি-তে ভাঙন ধরাতে বেশি সময় নেবে না। কিন্তু আমরা এই রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই।” যদিও বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডে এ দিনও অভিযোগ করেন, “বিজেপি-তে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছেন নীতীশ কুমার। কিন্তু পাছে তাঁর নিজের দল থেকেই বিধায়করা বেরিয়ে যান, সেই ভয়ে তিনি মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করতে ভয় পাচ্ছেন।” |
|
শত্রুঘ্ন সিন্হা, সুশীল মোদীর সঙ্গে মোহন ভাগবত। সোমবার পটনায়। ছবি: পিটিআই |
এই চাপানউতোরে একটি বিষয় স্পষ্ট, জেডিইউ-বিজেপি সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরেও নরেন্দ্র মোদী ও নীতীশ কুমার এই দু’টি অক্ষকে ঘিরেই যাবতীয় আলোড়ন এখন রাজ্য বিজেপি-তে। কর্মী-সমর্থকদের তরফ থেকে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবি উঠলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একটি বড় অংশ গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতায় সক্রিয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিহারে যাঁরা সুশীলকুমার মোদীর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তাঁরা নীতীশ প্রশাসনের সুখ্যাতি করতেও পিছপা হচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে ওই বিদ্রোহের পিছনে নরেন্দ্র মোদীর বিরোধী নেতাদের ভূমিকাও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই মুহূর্তে দলীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ বিদেশে। তিনি এলেই বিহার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বিদ্রোহী শিবিরকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, মোদীর প্রশ্নে কোনও ভাবেই আপস করা হবে না। এই পরিস্থিতিতে রাজনাথ দেশে ফেরার আগেই বিহার বিজেপি-র নেতাদের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক মোহন ভাগবতের বৈঠক বিশেষ অর্থবহ বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে রাজ্য বিজেপি-র কোন্দল এত দিনে প্রকাশ্যে এলেও এর সূত্রপাত কিন্তু হয়েছিল মাস ছয়েক আগে, দলের রাজ্য সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। তৎকালীন সভাপতি সি পি ঠাকুর পদ ছাড়তে রাজি ছিলেন না। নতুন রাজ্য সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনায় সরব হয় দলের একাংশ। তাদের যুক্তি ছিল সুশীলকুমারের ঘনিষ্ঠ নেতা মঙ্গল পাণ্ডে পরোক্ষে নীতীশের লোক। এবং নীতীশেরই অনুরোধে তাঁকে রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে। জেডিইউ এনডিএ ছাড়ার পরে দলের একাধিক বিধায়ক এখন প্রকাশ্যই সুশীলকুমার সম্পর্কে তাঁদের অসন্তোষের কথা জানাচ্ছেন। দলীয় সূত্রের খবর, প্রায় ১২ জন বিধায়ক রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে দ্বারভাঙা জেলার এক বিধায়ক, অমরনাথ গামীকে। তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে দলে।
বিক্ষুব্ধ অমরনাথ ছাড়াও সমস্তিপুরের বিধায়ক রানা গঙ্গেশ্বর সিংহ আজ প্রকাশ্যে সুশীলকুমারের সমালোচনা করেন, প্রশংসা করেন নীতীশের। তাঁর কথায়, “নীতীশ কুমারকে সামনে রেখে নির্বাচনে জিতেছিলাম। আগামী নির্বাচনে মানুষ তাঁকেই সমর্থন করবে। দল নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে চলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে ক্ষতি হবে। রাজ্যের ৪০টির মধ্যে ৩০টি লোকসভা আসনে নীতীশ জিতবেন।” দ্বারভাঙা জেলার আর এক বিধায়ক বিজয় মিশ্রও এ দিন সুশীলকুমারের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। তাঁর বক্তব্য, “সুশীল মোদী নিজে দুর্বল লোক। দলকে নিজের কব্জায় নিয়ে সেটাকেও দুর্বল করে তুলছেন। সুশীল মোদী বা মঙ্গল পাণ্ডে কারও দলে থাকার অধিকার নেই।” দলের এই বিদ্রোহীদের প্রতি যে তাঁর সমর্থন রয়েছে, সে কথা আজ ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন সি পি ঠাকুর। সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে আলোচনার আগে এ দিন তিনি বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব নিয়ে দলের অনেকেই অসন্তুষ্ট। লোকসভা নির্বাচনের আগে দলে এই বিদ্রোহ রাজ্য নেতৃত্বকে যথেষ্ট বেগ দেবে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠছে।” যদিও মোহন ভাগবতের সঙ্গে দেখা করে আসার পরে কিন্তু সুশীলকুমার বা সি পি ঠাকুর কেউই কিছুই বলতে রাজি হননি। দলের প্রসঙ্গে কী কথা হল এই প্রশ্নে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে গিরিরাজ সিংহ শুধু বলেছেন, “গিয়েছিলাম একসঙ্গে নাস্তা করতে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু কথা তো উঠবেই। |
পুরনো খবর: বিহার বিজেপিতে বিদ্রোহ, ভাঙন এড়াতে তৎপর নেতৃত্ব |
|
|
|
|
|