|
|
|
|
কংগ্রেস মুখপাত্রদের কর্মশালা |
আচরণ বদলান, বললেন রাহুল
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দাওয়াইটা তিন দশকেরও বেশি পুরনো! বিজেপি তৈরির পরে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচিতি গড়তে একদা লালকৃষ্ণ আডবাণী-অটলবিহারী বাজপেয়ীরা এই দাওয়াটাই দিতেন দলকে। জাতীয় রাজনীতিতে যা পরিচিত ছিল,- ‘পাটি উইথ আ ডিফারেন্স’ তকমায়। লোকসভার ভোট লড়াইয়ে নামার আগে আজ সেই দাওয়াইটাই কংগ্রেসকে দিতে চাইলেন রাহুল গাঁধী।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে রাহুলের নির্দেশ, “বাকিদের সঙ্গে কংগ্রেসের ফারাকটা মানুষের চোখে পড়া চাই। সেজন্য মতান্তর সরিয়ে রেখে সকলকে এক সুরে কথা বলতে হবে। জনতার মাঝে দাঁড়িয়ে সত্যি কথা বলতে হবে।” শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক প্রচার ও প্রতি আক্রমণে সভ্যতা ও ভদ্রতার সীমালঙ্ঘন যে বরদাস্ত করা হবে না তাও আজ স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন রাহুল। দলের মিডিয়া বিভাগের প্রধান অজয় মাকেনকে রাহুল বলেছেন,“কংগ্রেসের কোনও নেতার জন্য দলের উপকার হচ্ছে, না ক্ষতি হচ্ছে তাও পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। তার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে আপনাকে।”
বস্তুত নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাহুলের ফারাক ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। লোকসভা ভোটের আগে মোদী যখন পুরোদস্তুর প্রচারে নেমে পড়েছেন, তখন রাহুল এখনও কৌশল নির্ধারণ ও লড়াইয়ের জন্য দলকে প্রস্তুত করতে ব্যস্ত। সেই প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবেই সব রাজ্যের কংগ্রেস মুখপাত্রদের আজ দিল্লিতে এক কর্মশালায় ডেকেছিলেন রাহুল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের তিন নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী, মনোজ পাণ্ডে এবং জয়প্রকাশ মজুমদার তাতে সামিল হয়েছিলেন সেই কর্মশালায়।
অনেকের মতে, লোকসভা ভোটে ইউপিএ সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে তো হিসাবনিকেশ হবেই। কিন্তু সনিয়া-রাহুলের কাছে পরিষ্কার যে গত কয়েক বছরে দলের ভাবমূর্তি বড়ই মলিন হয়েছে। কখনও তা দুর্নীতির কারণে, কখনও বা কংগ্রেস নেতাদের আচরণ, অশালীন শব্দের ব্যবহার ও অহঙ্কারের কারণে। তাই সামগ্রিক ভাবে কংগ্রেস সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। ভোট প্রচারে নামার আগে কংগ্রেস সম্পর্কে মানুষের সেই ধারণাটাই বদলাতে চাইছেন রাহুল। আর সেই কারণে, গোড়ায় কংগ্রেসিদেরই বদলাতে চাইছেন।
সূত্রের খবর, কংগ্রেসের কর্মশালায় কোনও ভনিতা না করেই রাহুল আজ বলেন, “ইদানিং খবরের কাগজ খুলেই দেখি, কোনও বিষয় নিয়ে কংগ্রেসের এক এক নেতা এক এক রকম বলছেন। কিন্তু এটা চলতে পারে না।” কংগ্রেস নেতাদের মতে, ইদানিং কালে দিগ্বিজয় সিংহ, শাকিল অহমেদ-সহ কিছু নেতা যেভাবে পার্টি লাইনের বাইরে গিয়ে মত প্রকাশ করেছেন, তা বন্ধ করার ব্যাপারেই আজ বার্তা দিয়েছেন রাহুল।
কংগ্রেসের দু’দিনের এই কর্মশালার আজ প্রথম দিনে কেন্দ্রের চার মন্ত্রী জয়রাম রমেশ, কে ভি টমাস, পি চিদম্বরম এবং আনন্দ শর্মাও সামিল হন। খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প-সহ সরকারের সামাজিক কর্মসূচি নিয়ে দল কীভাবে প্রচার করবে তা তুলে ধরেন জয়রাম ও টমাস। তেমনই এন ডি এ-র তুলনায় ইউ পি এ সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য ব্যাখ্যা করেন চিদম্বরম। কর্মশালায় কিছুক্ষণের জন্য এসেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও। নরেন্দ্র মোদীর সাইবার-প্রচারের মোকাবিলায় সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে চাইছেন রাহুলও। ‘খিড়কি’ বলে নিজেদের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোর্টালও খুলছে কংগ্রেস।
তবে শেষমেষ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ভোট প্রচারে নামার আগে রাহুলের এই কর্মশালা কতটা সফল হবে? অনেকের মতে, বিজেপি যে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে তুলতে পারেনি তা ক’দিন আগে আডবাণীই স্বীকার করেছেন। তাই রাহুলের পক্ষেও কাজটা সহজ নয়। তবে এও ঠিক যে বাজপেয়ী-আডবাণীদের তুলনায় রাহুলের দাওয়াই একটু কড়া। কোনও নেতার জন্য দলের ক্ষতি হলে তিনি যে রেয়াত করবেন না, সেই চরম বার্তাও দিয়েছেন তিনি। প্রকৃতই সেরকম কোনও ব্যবস্থা ভবিষ্যতে নেবেন কিনা সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|