সমদূরত্বের নীতি থেকে সরে বাম নিশানায় বিজেপি
ত চার বছর ধরে তাঁরা তুলোধোনা করেছে কংগ্রেস তথা মনমোহন সরকারের আর্থিক উদারনীতি আর উন্নয়নের মডেলকে। এখন লোকসভা ভোটের বছরে তাঁদের প্রধান নিশানা এখন বিজেপি। আরও স্পষ্ট ভাবে বললে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর উন্নয়নের মডেল।
বামেদের কট্টর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল এখন আর কংগ্রেসের সঙ্গে নেই। গত বারের মতো তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়েও এ বার আর তেমন আশাবাদী নন প্রকাশ কারাট। বরং লোকসভা ভোটের পরে কংগ্রেসের সরকার গড়ার ক্ষেত্রে ফের সাহায্যের হাত বাড়াতে হতে পারে। এই সব সম্ভাবনার দরজা খোলা রাখতে সমদূরত্বের নীতি থেকে সরে এসে রণকৌশলগত কারণে সিপিএম এখন তাদের আক্রমণকে একমুখী করে তুলছে। প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করছে বিজেপি-কে। মোদীকে সামনে রেখে লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে নামছে তাঁর দল। গুজরাতের উন্নয়নকেই গোটা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মোদী। এই পরিস্থিতিতে মোদীর উন্নয়নের মডেলের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি তুলে ধরার জন্য পুস্তিকা তৈরি করে প্রচারে নামবে সিপিএম। যেটাকে জাতীয় রাজনীতিতে ফের কংগ্রেসের কাছে আসার চেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
ইউপিএ সরকারের অপশাসন, আর্থিক মন্দা, নীতিপঙ্গুত্বের জবাবে মোদীকে সামনে রেখে ভোটের লড়াইয়ে নামছে বিজেপি। উন্নয়নকেই একমাত্র বিতর্কের বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু পাল্টা কৌশলে কংগ্রেস বারবার গুজরাতে মোদীর সাম্প্রদায়িক চেহারা তুলে ধরার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে মোদীর রাজ্যে শিল্পায়ন হলেও গরিব মানুষের দুর্দশা ও সামাজিক বৈষম্যের ছবি তুলে ধরতে চাইছেন কংগ্রেস নেতারা। আর এখানেই কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের রাজনৈতিক বিভেদ মুছে যাচ্ছে। সিপিএমের নেতারা বলছেন, মোদী যতই বিকাশপুরুষ-এর মুখোশ পরে জাতীয় রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করুন, তাঁর পিছনে রয়েছে সেই উগ্রহিন্দুত্বের বিনাশনীতি-ই। দলের পলিটব্যুরো নেত্রী বৃন্দা কারাটের বক্তব্য, “বিজেপি বোঝাতে চাইছে, উন্নয়নের জন্যই মোদীকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু কেউ এ কথা বিশ্বাস করবে না। কারণ, আরএসএস-বিজেপির কাছে মোদীই হিন্দুত্বের সব থেকে ভাল ব্র্যান্ড।” আর এটা বোঝাতেই প্রচারপুস্তিকা তৈরি করতে গিয়ে গুজরাতের দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকা, ইশরাত জহান ভুয়ো সংঘর্ষে খুনের মামলার প্রসঙ্গে তুলে ধরেছেন বৃন্দারা।
সিপিএম নেতারা মনে করছেন, শহুরে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মোদীর প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাঁদের যুক্তি, শুধুই শহুরে তরুণ প্রজন্মের ভোটে দিল্লির তখ্তে বসা সম্ভব নয়। কৃষক, শ্রমিক, গরিব মানুষের মতামতও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কারণেই গুজরাতে ঠিক এই অংশের মানুষের দুরবস্থার কথা তুলে ধরতে চাইছে সিপিএম।
পুস্তিকায় যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, গুজরাতের মডেল আসলে কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থে তৈরি। আয়ের দিক থেকে প্রথম সারিতে থাকলেও সামাজিক বৈষম্যের নিরিখে গুজরাত পিছনের সারিতে। অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু, আদিবাসী উন্নয়নসব সামাজিক সূচকের নিরিখেই গুজরাত পিছিয়ে।
তবে সিপিএমের এই রণকৌশল আখেরে কংগ্রেসকেই সাহায্য করছে, এ কথা মানতে রাজি নয় সিপিএম। বৃন্দা কারাটের যুক্তি, “আমরা ইউপিএ সরকারের চার বছরের অপশাসন, দুর্নীতি নিয়েও প্রচারপুস্তিকা তৈরি করব।” তাতে এটাই বলা হবে যে, ইউপিএ সরকারের উদার আর্থিক নীতির সঙ্গে গুজরাত মডেলের মূল কাঠামোর বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই। একমাত্র পার্থক্য হল, মোদীর কাছে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থাকায় সমাজের সকলের জন্য উন্নয়নের ভনিতাটাও তাঁকে করতে হয় না। যেটা ইউপিএ-সরকারের আছে।
বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির অভিযোগ, কংগ্রেসই ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সাম্প্রদায়িক চেহারা দিতে চাইছে। সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, মোদীকে সামনে নিয়ে আসায় কংগ্রেসের এমনিতেই লাভ হচ্ছে। বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষ অংশ, গ্রামের কৃষকদের মধ্যে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক আরও মজবুত হবে। কংগ্রেস না বিজেপি, কে বড় শত্রু, এ নিয়ে সিপিএমের দোলাচল দীর্ঘদিনের। কিন্তু মোদীর উত্থানে সাম্প্রদায়িক শক্তির অভ্যুত্থানের আতঙ্কেই সিপিএমকে এখন সেই কংগ্রেসের দিকেই ঝুঁকতে হচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.