মোদীর লড়াইটা শক্ত, বুঝতে পারছে তাঁর দল
প্রথমে যা মনে হয়েছিল কুসুমাস্তীর্ণ পথ এখন সেটাই মনে হচ্ছে যথেষ্ট কণ্টকিত। বিজেপির কর্মী ও সমর্থকদের কাছে নরেন্দ্র মোদী এখনও মহানায়ক। এমনকী দেশের বাইরে সমুদ্রপারেও যাঁরা বিজেপি-বান্ধব, তাঁদের কাছেও মোদী এক জনপ্রিয় তারকা। গত কাল আমেরিকায় দলীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহও কবুল করতে পিছপা হননি যে, মোদীই হলেন বিজেপি-র সব থেকে বড় আকর্ষণ। দলের সব চেয়ে জনপ্রিয় নেতা। কিন্তু বিজেপি সূত্রেই আজ স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, দলের কর্মী-সমর্থকরা মোদীকে সামনে রেখে নির্বাচনে লড়তে চাইলেও দেশের ধর্মনিরপেক্ষ বিপুল জনসমাজের সমর্থন না থাকাটা অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
মোদীকে দলের প্রচারের মুখ হিসেবে তুলে ধরায় এনডিএ থেকে বেরিয়ে এসেছে শরিক জেডিইউ। নীতীশ কুমার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যে ভাবে মোদীকে সামনে রেখে বিজেপি আসন্ন লোকসভা নির্বাচন লড়তে চাইছে, তাতে তিনি শরিক হবেন না। সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পরেই বিহার বিজেপি-তে বিদ্রোহের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ওই রাজ্যে নীতীশ-ঘনিষ্ঠ বিজেপি বিধায়কদের একাংশ ইতিমধ্যেই দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিয়েছেন। এমনকী, নীতীশকে চাপে রাখতে দলের পক্ষ থেকে মোদীকে বিহারে নিয়ে গিয়ে যে ‘হুঙ্কার সমাবেশের’ পরিকল্পনা করেছিল মোদী শিবির, তা-ও এখন অনিশ্চিত।
বিজেপি-র সব চেয়ে পুরনো শরিক শিবসেনাও মোদী-প্রশ্নে সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরে এক সময় প্রধানমন্ত্রী পদে সুষমা স্বরাজকে চেয়েছিলেন। শিবসেনার একাংশ এখনও সুষমার সমর্থনেই রয়েছেন। অন্য দিকে মোদীর সঙ্গে উদ্ধবের থেকে রাজ ঠাকরের সুসম্পর্ক জোটে প্রভাব ফেলছে বলেও মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
এই পরিস্থিতিতে নাগপুরও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে এখনই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা না করার কৌশল নিয়েছে। মোদীকেও সেই বার্তা দিয়ে রেখেছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। গত কাল পটনায় ভাগবত বলেন, “আমরা দেশের জন্য এমন নেতা চাই, যিনি সর্বজনগ্রাহ্য। দেশের সব মানুষের কাছে যাঁর গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। যিনি সকলকে নিয়ে চলতে পারবেন।”
মোদীকে নিয়ে টানাপোড়েন রয়েছে বিজেপির অন্দরেও। কেন না লালকৃষ্ণ আডবাণী বা সুষমা স্বরাজের মতো শীর্ষ বিজেপি নেতারা মনে করছেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করলে যদি দেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তি বেড়ে যায়, তা হলে লাভের থেকে বিজেপি-র লোকসান হবে বেশি। কেন না, সংখ্যালঘুরা কোনও দিনই বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক নয়। কিন্তু ভারতের হিন্দু সমাজের একটি বড় অংশ ধর্মীয় উন্মাদনার বিপক্ষে। বর্ষার পর কেন্দ্র-বিরোধী প্রচার অভিযানে মানতে চলেছে বিজেপি। তার আগে মোদী প্রশ্নে এখন ‘ধীরে চলো’ নীতি নিতে চাইছে সঙ্ঘ পরিবারও। এর মধ্যেই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান আজ থেকে শুরু করেছেন তাঁর জন আশীর্বাদ যাত্রা। সেই যাত্রার পোস্টারে আডবাণী থেকে সুষমা বা রাজনাথের ছবি থাকলেও বাদ মোদী! যা নিয়ে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
তবে মোদীর নাম এখনই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা না করা অর্থ এই নয় তিনি দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন। বরং বিজেপি নেতারা মনে করছেন, দলের নিচু তলার কর্মী-সমর্থকরা মোদীকে সামনে রেখেই নির্বাচনে যেতে চাইছে। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “মোদী সামনে না থাকলে সমর্থকরা আমাদের পাথর ছুড়ে মারবে! তা ছাড়া দলের মধ্যে মোদীই যে জনপ্রিয়তম নেতা, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।” দলের একাংশের ব্যাখ্যা, মোদীকে সামনে রেখে যদি দল একার ক্ষমতায় দু’শোর বেশি আসন পায়, তা হলে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীর পথ কুসুমাস্তীর্ণ। কিন্তু দল যদি দেড়শোর কাছাকাছি আসন পায়, সে ক্ষেত্রে মোদীর পথ হবে কণ্টকিত। সে ক্ষেত্রে মোদীর বদলে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি রয়েছে, এমন নেতাকে সামনে রেখেই সরকার গড়ার চেষ্টা করবে দল।
বিজেপি নেতারা এ-ও বুঝতে পারছেন দল যদি মোদীকে সামনে রেখে নির্বাচনে যায়, তা হলে কংগ্রেস নেতৃত্ব গোটা প্রচারটাই মোদী-কেন্দ্রিক করে মেরুকরণের চেষ্টা করবেন। আডবাণী সুষমারা মনে করছেন, মোদীকে নিশানা করে মনমোহন সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করবেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই ‘কুকুর ছানা’ মন্তব্যকে ঘিরে মোদীর বিরুদ্ধে মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করেছে কংগ্রেস। আগামী দিনে সেই আক্রমণকে আরও তীব্র করারই ইঙ্গিত দিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.