খনির ধসে চাপা পড়ল সিপিএম
স নেমেছিল দু’বছর আগেই। এ বার তা আরও গভীর হল।
পঞ্চায়েত ভোটে খনি অঞ্চলে কার্যত ভরাডুবি হল বামেদের। একদা যেখানে ছিল তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য, গত বিধানসভা ভোটেই সেখানে থাবা বসিয়েছিল ঘাসফুল। এ বার বিক্ষিপ্ত কিছু জায়গা ছাড়া খনি এলাকায় কোথাওই দুর্গ অটুট রাখতে পারল না সিপিএম।
এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণ কী, সে ব্যাপারে উঠে আসছে নানা মত। সিপিএমের দাবি, শাসকদলের সন্ত্রাসের জেরেই তারা কোণঠাসা হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের আবার ব্যাখ্যা, অবৈধ কয়লা ব্যবসায়ীদের ধারণা ছিল, বামেরা ক্ষমতায় থাকলেই তাদের কারবারে বাধা পড়বে না। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরেও তাদের কারবারে কোনও অসুবিধা না হওয়ায় তারা এখন শাসকদলের পক্ষ নিয়েছে। আর তার প্রভাব পড়েছে ফলে। তৃণমূল যদিও কয়লা কারবারের সঙ্গে এই ফলাফলের কোনও যোগের কথা মানতে চায়নি।
গত পঞ্চায়েত ভোটে অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়াসব ক’টি পঞ্চায়েত সমিতিই দখল করেছিল বামেরা। এই চার ব্লকের মোট ত্রিশটি পঞ্চায়েতের মধ্যে অন্ডালে তিনটি ছাড়া আর কোথাও ক্ষমতা দখল করতে পারেনি তৃণমূল। সবই যায় বামেদের দখলে। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীকে জেতাতেও বড় ভূমিকা ছিল এই চার ব্লকের। ২০১০-এ রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া পুরসভাও ধরে রাখে বামেরা।

এই ছবি এখন অতীত। —ফাইল চিত্র।
পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে ২০১১ থেকে। সে বার বিধানসভা ভোটে রানিগঞ্জ আসনটি ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। পাণ্ডবেশ্বর ও জামুড়িয়া ধরে রাখলেও দুই কেন্দ্রেই লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ভোট কমে সিপিএমের।
এ বার জামুড়িয়ায় দশটি পঞ্চায়েতের মধ্যে তপসি ছাড়া সব ক’টিই ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। রানিগঞ্জে আমরাসোঁতা ছাড়া সব ক’টি গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। পাণ্ডবেশ্বরে বহুলা ছাড়া সব দখল করেছে তৃণমূল। বামেদের এক মাত্র মান রেখেছে অন্ডাল। সেখানে কাজোড়া এবং খান্দরা ছাড়াও দক্ষিণখণ্ড পঞ্চায়েত দখল করেছে বামেরা, যেখানে বিধানসভা ভোটে ‘লিড’ ছিল তৃণমূলের। এ ছাড়াও এই চার ব্লকের মধ্যে যে একটি জেলা পরিষদ আসন সিপিএম জিতেছে, সেটি অন্ডালে।
হারের কারণ প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের অভিযোগ, “শাসকগোষ্ঠীর সন্ত্রাস ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা হারিয়ে দিয়েছে।” তবে শুধু ‘সন্ত্রাস’-এর জন্য বামেদের এই হাল, তা মানতে রাজি নয় রাজনৈতিক মহলের একাংশ। যেমন, নকশাল নেতা দেবজ্যোতি বসুর দাবি, “খনি এলাকার একটি বড় অংশ বেআইনি কয়লা কারবারের উপরে নির্ভরশীল। শেষ বিধানসভা ভোটের সময়েও বহু মানুষ ভেবেছিলেন, সিপিএম ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এই কয়লা কারবার চলবে না। সরকার পরিবর্তনের দু’বছরের মধ্যে তাঁরা বুঝেছেন, সরকার পাল্টে গেলেও কয়লা চুরিতে বিশেষ ফারাক হচ্ছে না। তাই ওই অংশের ভোট এখন তৃণমূলের দিকে গিয়েছে।” সে কারণেই চুরুলিয়া, এগারা, রতিবাটি ইত্যাদি এলাকায় সিপিএমকে সরিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসতে পেরেছে বলে দাবি দেবজ্যোতিবাবুদের।
তপসি রেল ইয়ার্ডে বছরখানেক আগে মজুরদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে সিপিএম অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ায় সেখানে ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যাপারে সহায়ক হয়েছে বলে তৃণমূলেরই একাংশ মনে করছে। পান্ডবেশ্বরের বহুলা, অন্ডালের দক্ষিণখণ্ড, কাজোড়া ও খান্দরা পঞ্চায়েতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও সাংগঠনিক দুর্বলতা হারের প্রধান কারণ বলেও মনে করছে তাঁরা। যদিও তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন মিত্র, দলের কার্যকরী সভাপতি (শিল্পাঞ্চল) ভি শিবদাসনের (দাসু) কথায়, “আমরা যেখানে সিপিএমের সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে পেরেছি, সেখানেই জিতেছি।” কয়লা কারবারের সঙ্গে তাঁদের দলের জয়ের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি তৃণমূল নেতাদের।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তুফান মণ্ডলও তাঁদের আমলে কয়লা কারবারীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতের কোনও অভিযোগ মানেননি। তাঁর পাল্টা দাবি, “এ বারের ভোট পুরোপুরি প্রহসন। কয়লা, লোহা, মাটি ও বালি মাফিয়াদের নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেরিয়েছে শাসকগোষ্ঠী। তাঁরা নির্বাচনে মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। তাই এই ফল।”


পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.