জোড়াফুল না পেয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ভিন্ন প্রতীকে। দলেরই বিরুদ্ধে।
রায়নায় তৃণমূলের ভোট কেটে তাঁরা সিপিএমের সুবিধা করে দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ সুবিধা করতে পারলেন না জেলার বীরভূম লাগোয়া এলাকায় ‘নির্দল’ হয়ে আসরে নামা বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থীরা। মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে যা-ও বা তাঁরা কয়েকটি আসন পেলেন, আউশগ্রামে খাতাই খুলতে পারলেন না।
মঙ্গলকোটের ঝিলু ১ পঞ্চায়েতে ২টি, ঝিলু ২ পঞ্চায়েতে ৬টি, মঙ্গলকোট পঞ্চায়েতে ৫টি ও ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতে ১টি আসনে নির্দল প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কেতুগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের যথাক্রমে বেরুগ্রাম ও নিরোল গ্রাম পঞ্চায়েতেও দাঁড়িয়েছিলেন নির্দল প্রার্থীরা। মঙ্গলকোটের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মঙ্গলকোটের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের ‘লোক’ না হওয়াতেই ওই প্রার্থীরা টিকিট পাননি। তেমনি কেতুগ্রামের বিক্ষুব্ধেরা তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ গোষ্ঠীর ‘অনুগত’ না হওয়ায় পাননি দলের প্রার্থিপদ।
ভোটের ফল বেরোনোর আগে নির্দল প্রার্থীরা অনুব্রত গোষ্ঠীর আতঙ্কে ভুগে কাটোয়া মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়েছিলেন। ওই আতঙ্কের পিছনে যে অনুব্রত গোষ্ঠীর লোকেরা রয়েছেন, জানিয়েছিলেন সেটাও। গণনার সময়ে তাঁদের গণনাকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না, এমন আশঙ্কা ছিল নির্দলদের। এর পরেই বীরভূমে নানুরের বাসাপাড়ায় তৃণমূলের ‘শহিদ-স্মরণ’ অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে মঙ্গলকোটের বটতলার কাছে এক নির্দল প্রার্থী ও তাঁর সঙ্গীদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে অনুব্রতর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। যাঁরা মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়েছিলেন, তাঁদের কাজি মনোয়ারুল হক ফল বেরোনোর পরে দাবি করেন, “ভোট চলাকালীন পূর্ব নওয়াপাড়া গ্রামে বোমার বালতি নিয়ে ছোটার সময়ে বোমা ফেটে তৃণমূলের এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। এর পরে আমরা পুলিশের ভয়ে এলাকাছাড়া হতেই তৃণমূল একতরফা ভোট করিয়ে নেয়।” |
মঙ্গলকোটে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিজয়োল্লাস। —নিজস্ব চিত্র। |
গণনার দিন, সোমবার অবশ্য কোনও অশান্তি বা বিশৃঙ্খলা হতে দেখা যায়নি মঙ্গলকোটের একেএম উচ্চ বিদ্যালয়ের গণনাকেন্দ্রে। কেতুগ্রাম ২ ব্লকেও কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। ফল ঘোষণার সময়ে সকলেরই নজর ছিল ঝিলু ২ , বেরুগ্রাম ও নিরোল গ্রাম পঞ্চায়েতের দিকে। কেননা, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে নির্দলেরা বেশি আসন পেলেই পঞ্চায়েত গঠনে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু ফল বেরনোর পরে দেখা যায়, মঙ্গলকোটের ঝিলু ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্দলেরা ৬টি আসনের মধ্যে মাত্র ১টি পেয়েছে। কেতুগ্রামের নিরোলে ৭টি আসনের মধ্যে ১টি জিতেছে নির্দলেরা। বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতে তারা কোনও আসনই পায়নি। আউশগ্রাম ব্লকের ৭টি আসনে নির্দল প্রার্থীরা দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরাও তৃণমূলের জয়ের পথে বাধা হতে পারেননি।
তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন, ভোটের দিনভর ভাটপাড়ায় গুলির লড়াই চলার পরেও সেখানে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী স্বপ্না খাতুন। মাজিগ্রাম-ভাল্যগ্রামের খেঁড়ুয়া ও ঝিলু ২-এ নির্দল প্রার্থীরা একটি করে আসনে জিতেছেন। মঙ্গলকোটের ব্লক সভাপতি তৃণমূলের অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “আমরা আগেই বলেছিলাম নির্দলরা কোনও ‘ফ্যাক্টর’ হবে না। হয়েছেও তাই। আশা করি, এ বার ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাবে।” |