পঞ্চায়েতের ফল বেরোনোর পরই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল রাজনৈতিক দলগুলি। মঙ্গলবার ভাতারের বড়বেলুনে তৃণমূলের কর্মীদের আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। আউশগ্রামের রামনগরে সিপিএম সমর্থকদের আক্রমণ করেছে তৃণমূল বলে অভিযোগ। জামালপুরের মশাগ্রামে সিপিএম তাদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। প্রথম দু’টি সংঘর্ষে তিনজন তৃণমূল ও একজন সিপিএম সমর্থক আহত অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতারের আমারুন শিক্ষা নিকেতন গণনাকেন্দ্র থেকে ফেরার সময় তৃণমূলের কর্মীদের উপর প্রায় ৫০ জন সিপিএম সমর্থক হামলা চালান। এই ঘটনায় এক মহিলা-সহ তিনজন তৃণমূল সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছেন। রামনগরের ঘটনায় অভিযোগ, মহাদেব শীল নামে এক সিপিএম কর্মীর রামনগরের বাড়িতে তৃণমূলের লোকেরা হামলা চালান। মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া মহাদেববাবুকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মঙ্গলবার সিপিএমের সাংসদ সাইদুল হক, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আইনূল হক আহত কর্মীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। এর ঘটনার প্রতিবাদে গুসকরা মোড়ে সিপিএমের সমর্থকেরা কিছুক্ষণ পথ অবরোধ করেন।
পঞ্চায়েত সমিতির এক বিজয়ী সদস্য-সহ তিন তৃণমূল কর্মী জখম হয়েছেন কাঁকসায়। অভিযোগ, সিপিএমের একটি দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরও করা হয়েছে। ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার জেমুয়ায় সিপিএম ও তৃণমূল, দুই দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ এনেছে। সিপিএমের দাবি, সোমবার সন্ধ্যায় দলীয় কর্মী-সমর্থকরা জেমুয়া মোড়ের দলীয় কার্যালয়ে বসেছিলেন। তখন তৃণমূলের কয়েক জন বোমা ছোড়ে। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, সিপিএমের দলীয় কার্যালয় থেকে তাঁদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। তবে দ্রুত পুলিশ এসে দুই দলকেই সরিয়ে দেয়। সিপিএমের বিধাননগর-জেমুয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক পংকজ রায় সরকারের অভিযোগ, দুর্গাপুর-ফরিদপুর পঞ্চায়েত সমিতির একমাত্র বিজয়ী সিপিএম প্রার্থী শেখ সৈফুদ্দিন জিতেছেন জেমুয়া-পরানগঞ্জ এলাকা থেকে। তাই এলাকার মানুষকে সন্ত্রস্ত করতে বোমা ছোড়ে তৃণমূল। তৃণমূলের দুর্গাপুর ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। ওই ব্লক থেকে একেবারে সাফ হয়ে গিয়েছে সিপিএম। হারের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে সিপিএম এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
এ দিনই রাত ১১টা নাগাদ কাঁকসা ৩ নম্বর ক্যাম্প এলাকায় আক্রান্ত হন তৃণমূলের বিজয়ী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অজয় মজুমদার ও তাঁর দুই সঙ্গী তপন দাস ও সঞ্জীব মালাকার। মাথায় চোট পান তাঁরা। অজয়বাবুকে রাজবাঁধের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার ছাড়া পান তিনি। তপনবাবুকে কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। দলের ব্লক যুব সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের প্রাক্তন কাঁকসা জোনাল সম্পাদক তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডল বলেন, “আমানিডাঙা আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে আমাদের দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মারধর করে ৩ নম্বর ক্যাম্পের ওই তৃণমূল কর্মীরা। তখন আক্রান্তেরা প্রতিরোধ করেন।” তাঁর অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পানাগড় গ্রামে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিয়েছেন তৃণমূলের বিজয়ী জেলা পরিষদ সদস্য দেবদাস বক্সী। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে রানিগঞ্জে সিপিএমের চলবলপুর, জেমারি এবং বেলিয়াবাথানে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের স্থানীয় নেতা সাগর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা রানিগঞ্জের নিমচা ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, তিনটি কার্যালয় ভাঙচুর করেছে তৃণমূল সমর্থকেরা। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। |