মুর্শিদাবাদে খাতা খুলে ফেলল তৃণমূল।
কংগ্রেসের জয় নিয়ে সংশয় ছিল না। সকাল থেকে অধিকাংশ পঞ্চায়েতে তারা একচ্ছত্র এগিয়ে থাকলেও পরে সংখ্যায় কিছু কমলেও তারা অপ্রতিরোধ্যই থাকল। তবে অধীর চৌধুরীর খাস তালুকে কাঁটা হয়ে বিঁধে থাকল তৃণমূলের সাতটি আসন। গত বার জেলায় শাসক দলের চিহ্ন ছিল না।
এরই মাঝে লক্ষনীয়, বামফ্রন্টের সাফল্য। গত জেলা পরিষদ ছিল তাদেরই দখলে। এ বার সে জায়গায় তারা যে থাকবে তেমন আশা করেননি দলীয় নেতারা। তবে যে ফল বামেরা আশা করেছিল, ফল হয়েছে তার চেয়ে ভাল।
জেলার ২৫৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে কংগ্রেস সোমবার রাত পর্যন্ত ১১৬টি আসন পেয়েছে। ২০০৮ সালের তাদের দখলে ছিল ১৪৭টি। পরে আরও পাঁচটি দখল করে ১৫২টি করায়ত্ত করেছিল কংগ্রেস। অর্থাৎ এ দিন রাত পর্যন্ত ৩৬টি পঞ্চায়েত ‘হারিয়েছে’ কংগ্রেস। বামফ্রন্টের দখলে ১০৪টি পঞ্চায়েত। গত বারের তুলনায়। মাত্র ২টি কম। রাজ্য জুড়ে মমতা-ম্যাজিকের জোয়ারে মুর্শিদাবাদে শতাধিক আসন দখল ‘হারানো জমি পুনরুদ্ধারের’ ইশারা বলেই মনে করছেন ঘোর বামপন্থীরা। |
সংখ্যার বিচারে উল্লেখযোগ্য না হলে এ বারের নির্বাচনে এ জেলার তিন প্রতিপক্ষের মধ্যে তুলনামূলক লাভ হয়েছি বেশি তৃণমূলের। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ জেলায় একটি গ্রাম পঞ্চায়েতও তৃণমূল কংগ্রেস দখল করতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে এ বার তৃণমূল কংগ্রেস এ জেলায় কেবল খাতাই খুলল না, ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখলও করল। তার পাশাপাশি বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে নিজেরা জিততে না পারলেও বাম বিরোধী ভোট কেটে নিয়ে কংগ্রেসের বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিয়েছে। তার ফলে এ জেলার অন্তত ২৯টি পঞ্চায়েতের ত্রিশঙ্কু দশা।
গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের এ হেন ফলাফলের জন্য তৃণমূলকেই দায়ি করছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “জেলায় কংগ্রেস এবং সিপিএম পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তৃণমূল কেউ নয়। পঞ্চায়েতের ফলাফলেও সেটিই ফের সামনে এসেছে।” তবে ফল যে কিঞ্চিৎ খারাপ হয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। অধীর বলেন, “তৃণমূল কিছুটা ক্ষতি করে সিপিএমের লাভ করে দিয়েছে।” সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “আমাদের অনেকেই শাসক দলে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেসের তুলনায় আমাদেরই বেশি ক্ষতি হয়েছিল। নইলে আমাদের ফল আরও ভাল হত।” রাজ্যের মন্ত্রী তথা এ জেলায় শাসক দলের একমাত্র প্রতিনিধি সুব্রত সাহা বলেন, “এ জেলার মানুষও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।” |
তৃণমূল ‘ফ্যাক্টার’ ছাড়াও এ বারের ভোটে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা আরও একটি কারণ প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা।
ভগবানগোলা ১ নম্বর ব্লকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস দখল করেছিল ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি। সিপিএমের দখলে ছিল ২টি। এ বারের ফল পুরোপুরি উল্টো। ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে সিপিএম, ৩টি ত্রিশঙ্কু। আর কংগ্রেসের ঝুলি শূন্য। ২০০৮ সালে ভগবানগোলা ২ নম্বর ব্লকের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ৫টি, সি পি এম দখল করেছিল একটি। এ বার কংগ্রেস একটিও গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করতে পারেনি। অন্য দিকে সিপিএম দখল করেছে ৩টি। বাকি ৩টি ত্রিশঙ্কু। লালগোলা ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েতের ২০০৮ সালে সিপিএম পেয়েছিল ৮টি, কংগ্রেস ৪টি। এ বার কংগ্রেস দখল করেছে ৯টি পঞ্চায়েত। ৩টি সিপিএম। বাকি একটির ত্রিশঙ্কু দশা। নবগ্রাম ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে গত বার কংগ্রেস ৪টি এবং সি পি মে ৬টি দখল করেছিল। এ বার উল্টো ফল। এ বার কংগ্রেস ৬টি এবং সিপিএম ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে। মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ও বহরমপুর-সহ অধিকাংশ ব্লকেই এ ধরণের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার লক্ষণ সুস্পষ্ট। এ তত্ত্ব মেনে নিয়েছে সিপিএম-কংগ্রেস দু’ দলই। মৃগাঙ্কবাবু বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা একটা ফ্যাক্টর হয়েছে।” অধীরও কবুল করেছেন, “প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা আলবৎ হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব তাই অনেক বেড়ে গেল।” |
ছবি: গৌতম প্রামাণিক ও অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
|
গণনায় গোলমালের অভিযোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
হাঁসখালি ব্লকে গণনাকেন্দ্রের ভিতরে বিরোধী দলের এজেন্টদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুপ্রতিপ রায়ের অভিযোগ, “আমাদের এজেন্টদের গননাকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে গেলে বাধা দেয় তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী। অনেককে গননাকেন্দ্র থেকে বার করে দেয়।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “এমন ঘটনার কথা আমার জানা নেই।” জেলাশাসক পিবি সালিম বলেন, “অতিরিক্ত জেলাশাসক গণনাকেন্দ্রে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।” |