|
|
|
|
পরিবর্তনের আঁতুড়ঘরে কাঁটা নির্দল |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের হাওয়া এ বার নেই। উল্টে গত পাঁচ বছর ধরে পূর্ব মেদিনীপুরে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে উন্নয়নে ব্যর্থতা, দুর্নীতি, পক্ষপাত-সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। গত দু’বছরে রাজ্যে শাসকদল হিসাবেও বারবার সমালোচনার ঢেউ উঠেছে। তা-ও পূর্ব মেদিনীপুরে ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২৪টিই দখলে রাখল তৃণমূল। তবে, তৃণমূলের দখলে থাকা পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৬৪ থেকে কমে হল ১৫৭। বামফ্রন্ট জিতেছে ৪৩টি পঞ্চায়েতে (আগে ছিল ৫৬)। বাকি সমীকরণটা হল কংগ্রেস ১, ত্রিশঙ্কু ১৯, নির্দল ৯।
এ দিন সকালে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে গণনা যখন চলছিল, তখন মনে হচ্ছিল পূর্বে ভিত হারাচ্ছে তৃণমূল। বেলা যত গড়ায়, পরিষ্কার হয়ে যায় জনগণের রায় এখনও তাদের দিকেই। কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ভাল ফল করেছে বামেরা। যেমন, সুতাহাটা ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীশূন্য ছিল তৃণমূল। এ বার এই পঞ্চায়েত সমিতি ১১-৫ ব্যবধানে ছিনিয়ে নিয়েছে বামেরা। সুতাহাটায় ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৩টিতেই সিপিএম জিতেছে। একটি কংগ্রেস। আর তৃণমূল দখলে রেখেছে ২টি গ্রাম পঞ্চায়েত। খারাপ ফলের জন্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূলের মুখ পুড়েছে খাস নন্দীগ্রামেও। নন্দীগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের মোট ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৩টির দখল নিয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা। জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের গোকুলনগরের অধিকারী পাড়ায় তৃণমূল প্রার্থী সুতপা অধিকারীকে হারিয়ে দিয়েছেন নির্দল প্রার্থী সুচেতা পাইক। |
|
নন্দীগ্রামে গণনাকেন্দ্রের সামনে তৃণমূল সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
পূর্ব মেদিনীপুরে মোট ব্লক ২৫টি। তার মধ্যে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর নিজের লোকসভা কেন্দ্র তমলুকের মধ্যে যে সব ব্লক পড়ে, তার বেশ কয়েকটিতে ভোটের ফল তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। যেমন, নন্দকুমার ব্লকে মোট ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৭টি, বামেরা জিতেছে ৫টিতে। ২০০৮ সালে এই ব্লকে বামেদের দখলে ছিল মাত্র একটি গ্রাম পঞ্চায়েত। কোলাঘাট ব্লকে ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বামফ্রন্টের দখলে এসেছে ৫টি, তৃণমূলের ৬টি, কংগ্রেস ১টি এবং ১টি ত্রিশঙ্কু। এই ব্লকে গত নির্বাচনে বামেরা ২টি এবং কংগ্রেস ১টি পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছিল। যে তমলুক ব্লকে বিরোধীদের কার্যত অস্তিত্বই ছিল না, সেখানেও এ বার ২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছে বামেরা।
এগরা ১ ব্লকে বামেদের দখলে থাকা সাহাড়া, ছত্রি ও বিদ্যাসাগর পঞ্চায়েতে জিতল তৃণমূল।
অন্য দিকে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বরিদা পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। সেটির ফল ত্রিশঙ্কু হয়েছে।
এগরা ২ ব্লকে তৃণমূলের দখলে থাকা মঞ্জুশ্রী, বিবেকানন্দ, দুগদা পঞ্চায়েতে বামেরা জয়লাভ করেছে। বামেদের হাতে থাকা বাথুয়াড়ি পঞ্চায়েতে জিতেছে তৃণমূল।
পটাশপুর ১ ব্লকে বামেদের ফল খারাপ হয়েছে। এই ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতই বামেদের হাতছাড়া হয়েছে। সিপিএমের সিংদা জোনাল কমিটির সম্পাদক হিতেন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “ভোটের আগে থেকেই সন্ত্রাস চলছে। মানুষ সুষ্ঠু ভাবে ভোট দিতে পারেনি। তার জেরেই এই ফল।” পটাশপুর ২ ব্লকের ২০০৮ সালে বামেদের দখলে থাকা পঁচেট গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হল। আবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে খাড় পঞ্চায়েত এবার হাতছাড়া হয়েছে। সেখানে এবার ফল ত্রিশঙ্কু হয়েছে।
ভগবানপুর ১ ব্লকের বামেদের দখলে থাকা ২টি পঞ্চায়েতে তৃণমূল জয়লাভ করেছে। অন্য দিকে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ২০০৮ সালে তৃণমূলের দখলে থাকা কাকরা ও বেঁউডিয়া পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু হয়েছে। গুড়গ্রাম ও কোটবাড় পঞ্চায়েত দু’টি তৃণমূলের হাত থেকে দখল করল বামেরা। খেজুরি ১ ও ২ এবং ভগবানপুর পঞ্চায়েত সমিতি আগেই দখল করেছিল তৃণমূল। খেজুরির সমস্ত পঞ্চায়েতেও ক্ষমতায় তৃণমূল। কাঁথির ৩টি ও রামনগরের দু’টি ব্লকে সামগ্রিক ভাবে তৃণমূল এগিয়ে। তবে, বেশ কিছু পকেটে ভাল ফল করেছে বামেরা। যেমন, কাঁথি ৩ ব্লকের তৃণমূলের দখলে থাকা দেবেন্দ্র পঞ্চায়েতে এ বার ১৪টার মধ্যে ৯টাতে জিতে গিয়েছে সিপিএম। এই পঞ্চায়েতের প্রধান কল্যাণআশিস মাইতি নিজে পরাজিত হয়েছেন। কাঁথি ৩ ব্লকেরই কুসুমপুর পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছে সিপিএম (১০)। দেশপ্রাণ ব্লকের দারিয়াপুর পঞ্চায়েতেও ক্ষমতা হারিয়েছে তৃণমূল। এই পঞ্চায়েতের প্রধান বসুমতী বর পরাজিত হয়েছেন। রামনগর ২ ব্লকের কালিন্দি পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। এ বার ১৮টা আসনের মধ্যে ১২টাতেই জিতেছে বামেরা। এত খারাপ ফল কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, উপকূলবর্তী এই এলাকায় হোটেল লজ নির্মাণ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বারেবারে। কাঁচা টাকা উড়ছে। অভিযোগ, পঞ্চায়েতে ঘুষ না দিয়ে পান-বিড়ির দোকানও খোলা যেত না। ফলে ভিতরে ভিতরে ক্ষিপ্ত ছিলেন মানুষজন। তারই প্রতিফলন হয়েছে ভোটের ফলে। |
|
|
|
|
|