নিরঙ্কুশ জয়ে পথের কাঁটা নির্দলও |
দলের বিক্ষুব্ধ অংশই একটি পঞ্চায়েতে ভোগাল তৃণমূলকে |
আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের সিংহভাগ আসনেই বিনা লড়াইয়ে জিতে ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। তবু দলের অন্দরে কোন্দলের ফল ভুগতে হল মলয়পুর ২ পঞ্চায়েতে। তৃণমূলের অনেকে টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন এখানে। শেষমেশ পঞ্চায়েতটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থীরাই। ১২টি আসনের মধ্যে তাঁরা পেয়েছেন ৭টি। তৃণমূল পেয়েছে ৫টি আসন। একটি আসনে অবশ্য দু’পক্ষের টাই হওয়ায় টসে জিতে যান নির্দল প্রার্থী।
তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট অঞ্চল সভাপতি মৃণাল ঘোষ বলেন, “ওরা সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে সিপিএমের ভোটেই জিতেছে। এরপরে ওদের দলে ঠাঁই দেওয়াই উচিত নয়।” যদিও হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের কথায়, “মলয়পুর ২ পঞ্চায়েতের ওই নির্দল প্রার্থীরা আমাদেরই দলের একনিষ্ঠ কর্মী। টিকিট দেওয়া নিয়ে কিছু অসন্তোষ ছিল। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে ওঁদের দলে নিয়ে আমরাই বোর্ড গঠন করব।” |
উল্লাস। আরামবাগে মোহন দাসের তোলা ছবি। |
অন্য দিকে ওই অঞ্চলের নির্দলদের নেতৃত্বে থাকা সরকার আলাউদ্দিন, প্রবীর মুখোপাধ্যায়, অমর খৈয়াম, পার্থ দাস, শেখ হাসিবুল রহমানদের বক্তব্য, যাঁরা তাঁদের জিতিয়েছেন সেই জনগণের চাওয়া-পাওয়ার কথাই আগে ভাববেন। আলাউদ্দিন বলেন, “মাত্র দু’টি টিকিট চেয়েছিলাম আমরা। দল তা-ও দেয়নি। এমনকী, সোমবার পর্যন্ত আমাদের ঘর ছাড়া করার হুমকি দিয়েছে। মিথ্যা বদনাম দিচ্ছে। কাল্পনিক মামলা সাজিয়ে পুলিশ পাঠাচ্ছে। এতসব সত্ত্বেও যাঁরা আমাদের জেতালেন সেই সব মানুষের সঙ্গে কথা বলেই বোর্ড গঠন করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের মধ্যে আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের মোট আসনের সংখ্যা ২২১টি। মোট আসনের ১৮১টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জিতেছে তৃণমূল। বাদবাকি ৪০টি আসনের ২৭টিতে জয়লাভ করেছে তারা। নির্দল (তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ) পেয়েছে ১২টি। বিজেপি ১টি আসনে জিতেছে সালেপুর ১ পঞ্চায়েতে। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে মোট আসন ৪৫টি। তার মধ্যে ৩১টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল আগেই জিতেছে। বাদবাকি ১৪টি আসনের ১২টি পেয়েছে তারা। ২টিতে জয়ী নির্দল। তিনটি জেলা পরিষদ আসনেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা।
পুড়শুড়ার ব্লকের মোট ৮টি পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ১৩৮। ৮৪টি বিনা লড়াইয়ে জিতেছে তৃণমূল। বাকি ৫৪টি আসনের ৪২টি তৃণমূল পেয়ে ৮টি পঞ্চায়েতই দখল করেছে তারা। বাকি আসনের ১১টি নির্দল এবং ১টি আসন গিয়েছে কংগ্রেসের দখলে। পঞ্চায়েত সমিতির ২৪টি আসনের ৮টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। বাকি ১৬টিতেও জয়ী তারা।
খানাকুল ১ ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের ১৯২টি আসনের ১৯০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে তৃণমূল। ঘোষপুর পঞ্চায়েতের একটি আসনে তৃণমূলের দুই কর্মীর বিবাদে কাউকেই দল টিকিট না দেওয়ায় সেখানে দু’জনেই নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ান। নজরুল ইসলাম খানকে হারিয়েছেন রফিক গায়েন। আর একটি আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৩৯টি আসনের ৩৯টিতে বিনা লড়াইয়ে জেতে তৃণমূল। জেলা পরিষদের ৩টি আসনের ক্ষেত্রেও সব ক’টিতে বিনা লড়াইয়ে জিতেছে তারা।
খানাকুল ২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের আসন ১৪৫টি। একটি বাদে সব ক’টি বিনা লড়াইয়ে দখল করেছে তৃণমূল। বাকি ১টি আসনেও নির্দলকে হারিয়ে তৃণমূল জিতেছে। পঞ্চায়েত সমিতির ৩১টি আসনের সব ক’টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই দখলে এসেছিল তাদের। জেলা পরিষদের ৩টি আসনের ২টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জিতে গিয়েছে। বাকি একটিতে বিজেপিকে হারিয়ে জয়লাভ করেছে তারা।
গোঘাট ১ ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতের ১০৭টি আসনের মধ্যে ৫২টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছে তৃণমূল। বাকি ৫৪টির মধ্যে নির্দল ৩১টি পেয়েছে। ১৮টি পেয়েছে তৃণমূল। ফরওয়ার্ড ব্লক ৪টি এবং সিপিএম ১টি আসনে জয়ী। একটি আসনে কোনও মনোনয়নই জমা পড়েনি। পঞ্চায়েত সমিতির ২০টির মধ্যে ৭টি তৃণমূলের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা। গোঘাট ২ ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতের মোট আসন ১২১টি। ৭৮টিতে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী। বাকি ৪২টির ক্ষেত্রে ২৭টি তৃণমূল, ৮টি নির্দল, ৬টি সিপিএম এবং ১টি বিজেপি পেয়েছে। একটি আসনে মনোনয়ন জমা পড়েনি। পঞ্চায়েত সমিতির ২৬টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী। বাকি ৮টির মধ্যে তৃণমূল ৫টি, সিপিএম ১টি ও নির্দল ২টি আসন পেয়েছে। |