সম্পাদকীয় ১...
বন্দুকের নল
গোয়েন্দা গল্পের পাঠকমাত্রেই জানিবেন, অপরাধ ঠেকাইবার পথে বৃহত্তম বাধাটির নাম অনিশ্চয়তা। অপরাধ সংঘটিত হইবার পূর্বে অপরাধী অচেনা, সে কোথায় কখন অপরাধ করিবে, তাহাও অজ্ঞাত। অতএব, পুলিশ-প্রশাসন স্বাভাবিক ভাবেই অসহায়। কিন্তু, কোনও একটি বিশেষ গোত্রের অপরাধ কাহারা ঘটাইতেছে, তাহা জানা; কোথায়, কখন অপরাধটি ঘটিবে, তাহাও জানা এমন পরিস্থিতিতেও যদি পুলিশ ‘অসহায়’ বোধ করে, তবে আশ্চর্য ঠেকিবে বইকী। ভারতের বিভিন্ন মহানগরে এই আশ্চর্য ঘটনাটিই ঘটিতেছে। রাত্রি গভীর হইলে শহরের রাজপথে এক দল যুবক তাহাদের দ্বিচক্রযান লইয়া বিবিধ বিপজ্জনক কেরামতিতে মাতিতেছে। সেই খেলা তাহাদের পক্ষেও মারাত্মক, রাতের রাজপথের অন্যান্য সওয়ারিদের পক্ষেও। দিল্লিতে শনিবার মধ্যরাত্রে এমনই এক রাতের খেলার পরিণতি করুণ হইল। পুলিশের গুলিতে এক যুবক প্রাণ হারাইলেন। পুলিশের বক্তব্য, আর কোনও উপায় না থাকায় তাহারা চাকা লক্ষ করিয়া গুলি চালাইয়াছিল, তাহা লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়া অঘটন ঘটাইয়াছে। কেন গুলি চালাইবার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া অবধি অপেক্ষা করিতে হইল, তাহা রীতিমত বিস্ময়ের। সব রাস্তায় এই খেলা জমে না, কিছু নির্দিষ্ট রাস্তাই এই যুবকদের পছন্দ। সেই রাস্তাগুলির কথা শহরবাসী বিলক্ষণ জানেন, ফলে পুলিশ জানিবে না তাহা হইতে পারে না। খেলাটি কোন সময় আরম্ভ হয়, কত ক্ষণ চলে, তাহাও জানা। স্থান, কাল, পাত্র সবই যখন জানা, তখন পুলিশ কীসের অপেক্ষায় ছিল? বহু পূর্বেই তো ছেলেগুলির বাইক আটক করা উচিত ছিল। প্রয়োজনে তাহাদের গ্রেফতার করিতে হইত। দীর্ঘ দিন ধরিয়া রাজপথে বিশৃঙ্খলা সহ্য করিবার পর হঠাৎ গুলি করিয়া দেওয়া দুইয়ের মাঝখানে একটি সভ্য সমাজের সভ্য প্রশাসনের জন্য বহু যোজন জায়গা পড়িয়া থাকে। সেই পরিসরটিতে সক্রিয় হওয়া পুলিশের কর্তব্য। পুলিশ দিল্লির হউক বা কলিকাতার।
অবশ্য পুলিশের দৃষ্টিকোণ হইতে এমন আপাত-অবিশ্বাস্য আচরণের একটি ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব। পুলিশ বলিতে পারে, স্বাভাবিক সক্রিয়তা আসলে অর্থহীন, নিষ্ফল। রাজপথের বিপজ্জনক খেলার খেলুড়েরা কেহ প্রভাব-প্রতিপত্তিহীন নহে। হয় অর্থে, নয় রাজনৈতিক খুঁটির জোরে তাহারা বলীয়ান। ফলে, তাহাদের গ্রেফতার করামাত্র থানার টেলিফোন সেটটি বাজিয়া ওঠে, এবং আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া তাহারা ফের রাজপথে ফিরিয়া যায়। অতএব, তাহাদের ধরিয়া লাভ নাই। অবস্থা যখন নিতান্ত আয়ত্তাতীত হইবে, তখন গুলি চালাইয়া দিলে তাহাতেই ত্রাসের সঞ্চার হইতে পারে। অর্থাৎ, কার্যক্ষেত্রে বন্দুকের নলই শক্তির একমাত্র উৎস। পুলিশ নিশ্চয়ই এই যুক্তিটি প্রকাশ্যে পেশ করিবে না। পেশ করিলেও, কোনও সুস্থ সমাজ এই যুক্তি গ্রহণ করিবে না। কিন্তু তাহার অন্তর্নিহিত সমস্যাটি প্রণিধানযোগ্য। রাজনীতিক তথা সমাজপতিদের দায়িত্ব লইতেই হইবে। সমাজের প্রায় সকল বিশৃঙ্খলার শিকড়ই রাজনীতির জল অবধি পৌঁছায় বাইক-তাণ্ডবই বা ব্যতিক্রম হইবে কেন? রাজনীতিকরা তাঁহাদের প্রভাব ব্যবহার করিয়া আসলে এই তাণ্ডবকেই দীর্ঘজীবী করিতেছেন। পুলিশকে তাহার কাজ করিতে দিন। বৃহত্তর সমাজেরও কিছু দায়িত্ব থাকে। যে ছেলেগুলি মধ্যরাত্রে রাজপথ কাঁপাইয়া বাইক চালায়, তাহাদের অভিভাবকরা কি সন্তানের গতিবিধি সম্বন্ধে কিছুমাত্র খবর রাখেন? পূর্ণবয়স্ক সন্তানের যেখানে ইচ্ছা যাওয়ার, যাহার সঙ্গে ইচ্ছা মিশিবার অধিকার অবশ্যই আছে। কিন্তু সেই অধিকারের আড়ালে তাহারা অপরাধী হইয়া উঠিতেছে কি না, এই খবরটি অভিভাবকদের রাখিতেই হইবে। আইন ভাঙিবার মধ্যে যে বাহাদুরি নাই, বরং লজ্জা আছে, এই কথাটি শৈশবকাল হইতে সন্তানের মাথায় গাঁথিয়া দিলেও কিছু উপকার হইতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.